আমি সত্যিই জানি না কীভাবে চলচ্চিত্র নির্মাতা হয়ে উঠলাম: সাদ
বিশ্বের সম্মানজনক ও অন্যতম বৃহত্তম চলচ্চিত্র উৎসব কানে প্রথম বাংলাদেশি সিনেমা হিসেবে অফিসিয়ালি নির্বাচিত হয়েছে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। সেটির নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ। তিনি বিগত ৪ বছর ধরে একজন স্বাধীন সাংবাদিক হিসেবে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করেছেন। সেখানে কাজের অভিজ্ঞতা থেকেই এই সিনেমা নির্মাণে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। বর্তমানে এই নির্মাতা ফ্রান্সের কানে অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন তার জীবনদর্শন, সিনেমা নিয়ে ভাবনা ও আরও নানা গল্প।
প্রশ্ন: আপনার প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’। তখন থেকেই দেখা গেছে- আপনার সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলোর ব্যক্তিগত জীবনযাত্রা এবং নৈতিক ও অস্তিত্বের দ্বিধা। এই ধরনের গল্পে আগ্রহের কারণ কী?
উত্তর: এই থিম এবং আখ্যানগুলোতে আমার আগ্রহের জন্ম কোথায় তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না। তবে জটিল মানুষদের সঙ্গে আমি সবসময়ই এক গভীর যোগাযোগ অনুভব করি। এ ধরনের মানুষ প্রায়শই জীবনে কষ্টের পথ বেছে নেওয়ায় সমালোচনার শিকার হন।
প্রশ্ন: ‘রেহানা মরিয়ম নূরের’ অনুপ্ররেণা কী?উত্তর: আমার তিন বোন এবং (আমার ওপর) তাদের গভীর প্রভাবই মূল অনুপ্রেরণা। পাশাপাশি আমি আমার ভাতিজা-ভাতিজিদের বড় দেখেছি। দেখতে দেখতে আমার মনে অনেক প্রশ্নের উদ্রেগ ঘটে। রেহানার যাত্রার মধ্য দিয়ে এসব প্রশ্ন ও উত্তরের অনুসন্ধান করেছি। এছাড়া আমি সবসময়ই নারী ও পুরুষের মধ্যকার গতিশীলতা এবং তারা কীভাবে পরস্পরের প্রতি আচরণ করে তা নিয়ে আগ্রহী ছিলাম।
প্রশ্ন: আপনার কাজের পদ্ধতি এবং শুটিং সেটের পরিবেশ সম্পর্কে বলুন। কোনো গল্প থাকলে তাও বলতে পারেন।
উত্তর: চেম্বার ড্রামা করার জন্য আমি র্দীঘসময় ধরে নিজেকে প্রস্তুত করেছি। তবুও বাস্তবে মাত্র পাঁচ সপ্তাহে একটি সীমাবন্ধ জায়গায় শুটিং করা খুব কঠিন ছিল। একই লোকেশনে দিনের পর দিন শতাধিক দৃশ্য ব্লকের সমাধান করা আমার জন্য খুব কঠিন ছিল। আরও একটা অসুবিধা ছিল। আমি আমার নিজের ও টিমের জন্য কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলাম। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পুরো সিনেমাটি আমরা মাত্র একটি ৫০ মিলিমিটার লেন্সের সাহায্যে ধারণ করেছি। প্রতিটি দিনই আমার কাছে গণিত পরীক্ষার মতো মনে হতো।
প্রশ্ন: আজমেরী হক বাঁধনের পারফরম্যান্সে কীভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন? অনেক মহড়া করছেন?
উত্তর: হ্যাঁ, আমরা অনকে মহড়া করেছি। নয় মাসের বেশি সময় ধরে এটা করার পাশাপাশি তার চরিত্র রেহানা নিয়ে আমরা ক্রমাগত আলোচনা করেছি।
প্রথমদিন থেকেই সিনেমাটির প্রতি একশভাগ নিবেদিত ছিল বাঁধন। এই সিনেমার জন্য প্রায় আক্ষরিক অর্থেই সবকছিু বাদ দিয়েছিল সে। বাঁধন হৃদয় ও আত্মা দিয়ে এই চরিত্রের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। এটাই তার অসাধারণ পারফরম্যান্সের কারণ। বাঁধন যাতে নিরাপধ বোধ করে এবং তার সেরাটা দিতে পারে সেজন্য পরিবেশটা ঠিক রাখতে হয়েছিল। তার সঙ্গে কাজ করতে পরেে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।
প্রশ্ন: আপনার দুইটি সিনেমার চিত্রগ্রাহক তুহিন তামিজুলের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন? সে তো চরিত্রগুলোর ফটোগ্রাফিও করেছে। তাছাড়া আপনার কাজে ক্যামেরার অস্থিরতা তো আসলে চরিত্রগুলোর মানসিক অবস্থাই ফুটিয়ে তোলে।
উত্তর: বাস্তব জীবনে আমরা খুন কাছের বন্ধু। লেখার প্রথম দিক থেকেই সিনেমার গতিবিধি এবং ছন্দ নিয়ে আলোচনা শুরু করার ঝোঁক আছে আমাদের। রেহানা মরিয়ম নূরের জন্য নিজেকে প্রায় এক বছর ধরে শারীরিক ও মানসিকভাবে তৈরি করেছে তুহিন। কারণ প্রডাকশনটা চ্যালেঞ্জিং ছিল।
প্রশ্ন: আপনার সিনেমায় চরিত্রগুলো প্রায়ই চলার ওপর থাকে। তাদের মধ্যে জরুরি ভাব এবং দুশ্চিন্তা দেখা যায়। এই পরিস্থিতি ক্যামেরায় ধারণ করতে আপনার টিমের সঙ্গে কীভাবে কাজ করেন?
উত্তর: সাধারণত আমার সিনেমাটোগ্রাফার এবং শিল্পীদের সামনে দৃশ্যের শুরুতেই সব জটিলতা ও স্পষ্টতা উপস্থাপন করি না। তারা প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো আত্মস্থ করে ফেললে তারপর আমি সেই দৃশ্যের আরও পজিশন ও লেয়ার ধীরে ধীরে সংযুক্ত করি। এটা তাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু আমার প্রয়োজনীয় তীব্রতা, অনুভূতি ও কম্পোজিশন ধারণ করার জন্য এটাই একমাত্র পথ।