একটি মুশফিক শো!
ওয়ান ম্যান শো আর কাকে বলে! মিরপুরে হোম অব ক্রিকেটে আজ মুশফিকুর রহিম যা করে দেখিয়েছেন, তা সংক্ষেপে প্রকাশের জন্য এই তিনটি শব্দ জুতসই। বাংলাদেশ কত করবে তার চেয়ে ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ সেঞ্চুরি করতে পারেন কিনা তা নিয়েই সবার কৌতূহল ছিলো বেশি। নব্বইয়ের ঘরে ঢোকার পর দু’বার বৃষ্টির বাগড়ায় তার শতরানের উদযাপন দেখার অপেক্ষা বেড়েছে। শেষ পর্যন্ত ঠিকই ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন তিনি।
অধিনায়ক তামিম ইকবাল, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, প্রতিভাবান লিটন দাস, মোসাদ্দেক হোসেনকে হারিয়ে বাংলাদেশের পা চলে গিয়েছিলো খাদের কিনারে। সেখান থেকে মুশফিকুর রহিম দলকে একাই টেনে নিয়ে যাওয়ার ভার তুলে নেন কাঁধে। তার সেঞ্চুরির সুবাদে লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথমবার ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেলো টাইগাররা।
No description available.
একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের তালিকায় সাকিব আল হাসানকে টপকে দুইয়ে উঠে এসেছেন মুশফিকুর রহিম। ওয়ানডেতে তার রান এখন ৬ হাজার ৪৮৮। শীর্ষে আছেন ৭ হাজার ৫০৪ রান করা তামিম ইকবাল। ৬ হাজার ৪৫১ রান নিয়ে তিনে নেমে গেছেন সাকিব।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বঙ্গবন্ধু ওয়ানডে ক্রিকেট সিরিজে চিরচেনা ফর্মে আছেন মুশফিক। টানা দুই ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন। আজকের খেলায় তো নিয়মিতভাবেই বিপরীত প্রান্তে সতীর্থদের যাওয়া-আসা দেখতে হয়েছে তাকে। তবে দমে যাননি। একাই লড়াই চালিয়ে গেছেন। উইকেটে থিতু হয়ে রানের চাকাও সচল রেখেছেন।
মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরিতে ২৪৬ রানের লড়াই করার মতো পুঁজি পেয়েছে বাংলাদেশ। দলের বিপর্যয়ে একাই বুক চিতিয়ে লড়েছেন তিনি। ১২৭ বলে ১২৫ রান করে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন তিনি। এর মধ্যে কোনো ছয় নেই, আছে ১০টি চার। অর্থাৎ ৮৫ রানই সিঙ্গেলস-ডাবলস থেকে এসেছে। তার ব্যাটে ভর করে ৪৮.১ ওভারে ২৪৬ রান তোলে স্বাগতিকরা।
মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ। কিন্তু দুশমন্ত চামিরার দুর্দান্ত বোলিংয়ে দ্বিতীয় ওভারেই তামিম ও সাকিব প্যাভিলিয়নে ফেরেন। তামিম ১৩ রান করলেও সাকিব গোল্লা মেরেছেন। গত তিন বছরে ওয়ানডেতে এটাই তার প্রথম ‘ডাক’। দলীয় রান ৫০ ছোঁয়ার আগেই সাজঘরে চলে যান লিটন দাস। তার নামের পাশে লেখা হয়েছে ২৫ রান। এরপর ১০ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন প্রায় তিন বছর পর ওয়ানডে খেলতে নামা মোসাদ্দেক। ৭৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে টাইগাররা তখন বিবর্ণ।
বাইশ গজে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আসার পর বদলে যেতে থাকে দৃশ্যপট। প্রথম ম্যাচে ৯৯ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশকে ১০৮ রানের পার্টনারশিপ গড়ে স্বস্তি এনে দেন দুই ভায়েরা ভাই। সেই ম্যাচের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে তারা আজও দলকে ভালো সংগ্রহের দিকে নিয়ে গেছেন অনেকটা। আজ ৮৭ রানের পার্টনারশিপ গড়েন তারা। মাহমুদউল্লাহ দুটি ছয় ও একটি চারে ৪১ রান করে আউট হন। এরপর দ্রুত ফিরে গেছেন আফিফ হোসেন, মেহেদি হাসান মিরাজ, সাইফউদ্দিন ও শরিফুল ইসলাম। লঙ্কানদের পক্ষে দুশমন্ত চামিরা ও লাকশান সান্দাকান তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন। ইসুরু উদানা দুটি ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা পেয়েছেন একটি উইকেট।
বৃষ্টি আইনে ৪০ ওভারে শ্রীলঙ্কার লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৪৫ রান। শেষ পর্যন্ত ১৪১ রান করতে পেরেছে সফরকারীরা। বাংলাদেশের পক্ষে মেহেদি হাসান মিরাজ ও মোস্তাফিজুর রহমান তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন। সাকিব আল হাসানের ঘরে এসেছে দুটি উইকেট। ওয়ানডেতে অভিষেক হওয়া শরিফুল ইসলাম পেয়েছেন একটি উইকেট।
গত ম্যাচে ৮৪ করে আউট হওয়ায় ১৬ রানের আক্ষেপ নিয়ে সাজঘরে ফিরেছিলেন মুশফিক। এবার তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরি। যথারীতি দলের বিপর্যয়ে হাল ধরেছেন। আজকের ম্যাচে তার ব্যক্তিগত সংগ্রহ টপকানোর আগেই শ্রীলঙ্কা ৯ উইকেট হারিয়েছে। বলা যায়, পুরো লঙ্কা দলই পেরে ওঠেনি এক মুশফিকের কাছে। ওয়ান ম্যান শো বোঝাতে এটাই তো যথেষ্ট!