কেমন কাটলো ২০২১
ঘটনাবহুল আরো একটি বছর কালের আবর্তে হারিয়ে গেল। ২০২১ সালটি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য নানাভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ বছর বাংলাদেশ স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছে বেশ ঘটা করেই। করোনা মহামারির চোখ রাঙানির মধ্যেও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। অর্থনীতির নানা সূচকে ঊর্ধ্বমুখী উত্থানের পাশাপাশি কাজ হারিয়ে প্রায় ১ কোটি মানুষের গ্রামে ফিরে যাওয়া, বেকারত্বের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের অধোগতি, করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী, শিল্পোদ্যোক্তা, বিভিন্ন পেশাজীবীদের জন্য সরকার প্রদত্ত আর্থিক প্রণোদনার যথাযথভাবে কাজে না লাগানো ইত্যাদি ব্যাপারগুলো আমাদের সবাইকে এক ধরনের অস্বস্তির মধ্যে রেখেছে বছর জুড়ে। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে করোনা মহামারির ভয়াবহ প্রকোপে বিশ্বের অন্যান্য সব দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চরম স্থবিরতা নেমে আসে।ব্যবসাবাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি, শিল্পকারখানায় উৎপাদন সবই থেমে গিয়েছিল বেশ কিছু দিনের জন্য। তবে পৃথিবীর বহু উন্নত দেশের অর্থনীতি করোনা মহামারির প্রভাবে বিপর্যয়ে শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেলেও বাংলাদেশ সে তুলনায় অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। আক্রান্ত ও মৃত্যুর দিক থেকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল বাংলাদেশের মানুষ। ২০২০ এর ধকল শেষে বাংলাদেশ ২০২১ আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ অর্থনীতির জন্য আরেকটি বিপর্যয় ডেকে এনেছিল। কিন্তু এ বছরেও সঠিক ও যোগ্য নেতৃত্বগুণে বাংলাদেশ অনেকটাই রক্ষা পেয়েছে। প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক কারখানা করোনার অভিঘাত মোকাবিলা করে উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। শুরুতে ইউরোপ আমেরিকায় ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করায় চাহিদা কমে যাওয়ায় তৈরি পোশাক রপ্তানি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলেও পরবর্তী সময়ে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি আগের মতো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে বলা যায়।চলতি বছরে অর্থাৎ ২০২১ সালে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে। যা করোনা মহামারির পরিস্থিতিতে অভাবনীয় বলা চলে। করোনা মহামারির মধ্যেও রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ৩৮ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে এ বছর। গত বেশ কয়েক মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে চরম অধোগতি অর্থনীতিতে নতুন দুশ্চিন্তার জন্ম দিয়েছে। করোনার কারণে বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাজ হারিয়ে দেশে বেকার হয়ে ফিরে আসা, আগে দেশে ছুটি কাটাতে আসা অনেকেই সময়মতো করোনা ভ্যাকসিন না পাওয়ায় পুনরায় চাকরিতে ফিরতে না পারাসহ ব্যাংকিং চ্যানেলের বদলে অবৈধ পথে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাতে প্রবাসীদের আগ্রহ বেড়ে যাওয়ার কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটা শুরু হয়েছে। গত তিন বছর মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধ থাকার পর নানা সরকারি তৎপরতায় আবার চালু হয়েছে। একই ভাবে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশেও বন্ধ হয়ে যাওয়া শ্রমবাজার আবার শুরু হওয়ায় নতুন করে শ্রমিক, কর্মী যাওয়া শুরু হয়েছে। এটা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সুখবর বটে। সরকার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও নতুন শ্রমবাজারের সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে।