খুলনা বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৭১ জনের মৃত্যু
খুলনা বিভাগে করোনায় মৃত্যুর ঘটনা বেড়েই চলেছে। সব রেকর্ড ভেঙে গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে সর্বোচ্চ ৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৬৫৬ জনের। শুক্রবার (০৯ জুলাই) বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. রাশেদা সুলতানা এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। এরআগে গত ৭ জুলাই বিভাগে সর্বোচ্চ ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
স্বাস্থ্য পরিচালকের দফতর সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের মধ্যে খুলনা জেলায় সর্বোচ্চ ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে । এছাড়া কুষ্টিয়া জেলায় ১৪ জন, যশোর জেলায় ৯ জন, ঝিনাইদহ জেলায় ১০ জন, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ছয়জন, মেহেরপুর জেলায় পাঁচজন, বাগেরহাট জেলায় দুজন, এবং মাগুরা ও নড়াইল জেলায় একজন করে মারা গেছেন।
খুলনা বিভাগের মধ্যে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় চুয়াডাঙ্গা জেলায় গত বছরের ১৯ মার্চ। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছে ৬৯ হাজার ১৮৭ জন। এছাড়া আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ৪৮৭ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৪ হাজার ৭২৭ জন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের জেলাভিত্তিক করোনা সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে খুলনা জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৯৬ জনের। এ পর্যন্ত জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৮ হাজার ১৯৪ জনের। মারা গেছেন ৩৯২ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১২ হাজার ২৯১ জন।
বাগেরহাটে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৩৫ জনের। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪ হাজার ৪০৯ জনের। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৯৮ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৩৭ জন।
সাতক্ষীরায় ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ১৩৬ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪ হাজার ১৮৬ জন এবং মারা গেছেন ৭৬ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ৯৬৮ জন।
যশোরে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৩৮৮ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৪ হাজার ৯১৩ জন। মোট মারা গেছেন ২০২ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৯ হাজার ৯৫ জন।
ঝিনাইদহে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ১৬২ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৪৮২ জন। মোট মারা গেছেন ১২৮ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৩৬৮ জন।
মাগুরায় ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৫৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৯৭৯ জনের। মোট মারা গেছেন ৩৫ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৩৪৯ জন।
নড়াইলে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৬১ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৩১১ জনের। মোট মারা গেছেন ৫৮ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৩২৬ জন।
কুষ্টিয়ায় ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ২২০ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৯ হাজার ৮৮৩ জনের। মোট মারা গেছেন ৩১০ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৬ হাজার ৩৬৭ জন।
চুয়াডাঙ্গায় ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ১৩৩ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪ হাজার ৩৯৯ জন। মোট মারা গেছেন ১১৫ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৩৯২ জন।
মেহেরপুরে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৬৮ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৪৩১ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭৩ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৫৬৪ জন।
খুলনা করোনা হাসপাতালের ফোকালপার্সন ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, সীমান্তবর্তী জেলা এবং ভারত থেকে অনেক রোগী এবং লোক আসছেন। বেনাপোল ও দর্শনা স্থলবন্দর থাকার কারণে সকল রোগী খুলনা-সাতক্ষীরার উপর থেকে ট্রান্সপোর্ট হচ্ছে। যার কারণে এই অঞ্চলে রোগটি ছড়িয়ে যাচ্ছে। হয়তো একজন লোক আসলেন এবং তিনি ছড়াতে ছড়াতে গেলেন। হয়তো এক সপ্তাহ পরে তার পজিটিভ হচ্ছে। এ অঞ্চলের মানুষের অসচেতনতার কারণে রোগটি একটু বেশি ছড়াচ্ছে। সংক্রমণ গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
খুলনার সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, লকডাউনের আগেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল। যে কারণে শনাক্ত ও মৃত্যু বেড়েছে। লকডাউন অব্যাহত থাকলে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে অল্প সময়ের মধ্যে সংক্রমণ কমবে বলে তিনি আশাবাদী।