ঘূর্ণিঝড় গুলাব : নদীবন্দরে ১ ও সমুদ্রবন্দরে ২ নম্বর সতর্কতা সংকেত
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি আরও শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’-এ পরিণত হয়ে দেশের উত্তর-পূর্ব দিকে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। সাগর উত্তাল হয়ে ওঠার কারণে সমুদ্রবন্দরগুলোকে ২ নম্বর দূরবর্তী সতর্কতা সংকেত এবং নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সর্তকতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এটি ভারতের উপকূলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তবে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানার কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (ক্রমিক নম্বর-২) এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে বলা হয়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর নিম্নচাপটি আরও ঘণীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ” গুলাব ” এ পরিণত হয়েছে । চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ১ (এক) নম্বর দূরবর্তী হুশিয়ারি সংকেত নামিয়ে ২(দুই) নম্বর দূরবর্তী হুশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আরও হয়, ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিয় ও উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হতে পারে। গুলাব দুপুরে ছিল চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৮০ কিলোমিটার পশ্চিম ও দক্ষিণ পশ্চিমে, এখন তা আরও সরে গিয়ে ৫৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। একইভাবে কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৪১৫ কিলোমিটার পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমে ছিল, এখন তা ৫২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। তবে মোংলা ও পায়রা বন্দরের দিকে কিছুটা এগিয়েছে। মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ছিল ৪৫০ কিলোমিটার দূরে, এখন আছে ৪৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে। পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪০৫ কিলোমিটার থেকে এগিয়ে ৪৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে। এটি আরও পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
গভীর নিম্নচাপের কেন্দ্রস্থলের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপের কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। এ জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কতা সংকেত নামিয়ে ২ নম্বর দূরবর্তী সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি গভীর সাগরে বিচরণ করতে না করা হয়েছে।
শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়, ‘গুলাব’ রোববার ভারতের উড়িষ্যার দক্ষিণে এবং অন্ধ্রপ্রদেশের উত্তরে কলিঙ্গপত্তনমের ওপর দিয়ে স্থলভাগ অতিক্রম করতে পারে। স্থালভাগে উঠে সোমবার এটি শক্তি ক্ষয়ে গভীর নিম্নচাপ ও নিম্নচপে পরিণত হতে পারে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানিয়েছে, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায়; ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
এসময়ে সারাদেশে দিনের এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে বলেও পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। শনিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হয়েছে। তবে ময়মনসিংহ ও সিলেটে কোনো বৃষ্টি হয়নি। রংপুরে সামান্য বৃষ্টি হয়েছে। এসময় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে ঢাকায়, ৫৩ মিলিমিটার। শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ময়মনসিংহে, ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস জানান,গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে ভারতের উপকূলের দিকে যাচ্ছে। গুলাব হবে একটি স্বল্প শক্তির ঘূর্ণিঝড়, যার গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এটি মূলত ভারতের উড়িষ্যায় আঘাত হানবে। আর বাংলাদেশে এর প্রভাব কিছুটা পড়বে। ‘গুলাব’ চলে গেলেও পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরে আরও একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হবে। এই নিম্নচাপের অভিমুখ হবে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলের দিকে। বুধবারের মধ্যে তা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে স্থলভাগে আঘাত করতে পারে।
আগামীকাল ২৭ সেপ্টেম্বর নাগাদ সাগরে এই সুস্পষ্ট লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এটি ২৯ সেপ্টেম্বর নাগাদ গভীর নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে। এই নিম্নচাপের অভিমুখ হবে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলের দিকে। সুতরাং এই জোড়া ফলার কারণে এসপ্তাহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।