দুদকের গণশুনানীতে অভিযোগ দিয়ে নিজেই জালিয়াতিও তথ্য গোপনের দায়ে ফাঁসলেন সাকিব
স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ
ঝিনাইদহে দুর্নীতি দমন কমিশনের গণশুনানীতে অভিযোগ দিয়ে জালিয়াতি ও তথ্য গোপনের দায়ে নিজেই ফেঁসে গেছেন সাকিব আহম্মেদ ওরফে সাকিবুল হাসিফ নামে এক যুবক। গত ১৭ মে ঝিনাইদহ শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে সাকিব জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হয়রানী ও অসহযোগীতার অভিযোগ তোলেন দুদক কর্মকর্তাদের সামনে। সাকিবের কাগজপত্র যাচাই বাছাই করতে গিয়ে ঝিনাইদহ জেলা নির্বাচন অফিস প্রতারণা, মিথ্যাচার, তথ্য গোপন, বিশ^াসভঙ্গ ও জালিয়াতির একাধিক সত্যতা পেয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে সাকিব ঝিনাইদহ পৌরসভার কাঞ্চননগর পাড়ার দাউদ হোসেনের ছেলে। তিনি ২০২২ সালে নতুন ভোটার হওয়ার সময় নিবন্ধন ফরমে নিজেকে সাকিব আহম্মেদ দাবী করে চতুর্থ শ্রেনী পাশ ও বেকার হিসেবে উল্লেখ করেন। হাল নাগাদ নতুন ভোটার তালিকায় তার জন্ম তারিখ প্রদান করা হয় ০১/১২/২০০০ সাল। তার ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন ২০০০৪৪২১৬০৬১৩৯২৪৫। ভোটার এলাকা দেখানো হয় ভুটিয়ারগাতি। এই তথ্য দিয়ে তিনি নতুন ভোটার হন এবং ব্যাংক থেকে ঋন গ্রহন করেন বলে অভিযোগ। কার্যসিদ্ধির পর ২০২৩ সালে তিনি তার নামসহ বিভিন্ন তথ্য সংশোধন চেয়ে আবেদন করেন। চাহিত আবেদনে উল্লেখ করা হয় তার প্রকৃত নাম সাকিবুল হাসিফ, জন্ম তারিখ ১৫/০১/২০০৪ এবং ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন ২০০৪৪৪২১৬০৬১৩৮৯১১। সাকিব উজির আলী হাই স্কুল থেকে ২০১৯ সালে এসএসি পাশ করেছেন মর্মে নির্বাচন কমিশনে সনদ প্রদান করেন। ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন সার্ভয়ারে এখনো সাকিবের দুইটি জন্মনিবন্ধন নাম্বার সক্রিয় রয়েছে বলে জেলা নির্বাচন অফিস থেকে দাবী করা হয়। দুইটি ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন সক্রিয় থাকার বিষয়ে তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ২০০০ সালের জন্ম নিবন্ধনে সন্তানের ক্রমিক নং দেখানো হয়ছে দুই। অন্যদিকে ২০০৪ সালের জন্ম নিবন্ধনে সন্তানের ক্রমিক দেখানো হয়েছে এক। অর্থাৎ প্রথমে সাবিক তার পিতামাতার দ্বিতীয় সন্তান ও দ্বিতীয়বার তিনি পিতামাতার প্রথম সন্তান দাবী করে ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন নিয়েছেন। এই জালিয়াতির কারণে সার্ভায়ারে তার দুইটি ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন এখনো সক্রিয় রয়েছে। জানা গেছে, হালনাগাদ ভোটার তালিকায় তথ্য গোপন করে নতুন ভেঅটার হওয়ার পর তিনি আবার সংশোধনের আবেদন করেন। ২০২৩ সালের ১১ মে ঝিনাইদহ জেলা নির্বাচন অফিসার আব্দুস ছালেক সাবিকের সংশোধনের আবেদনটি বাতিল করে দেন। আর এ ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয়ে সাবিক ঝিনাইদহে অনুষ্ঠিত দুর্নীতি দমন কমিশনের গণশুনানীতে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। দুদকের নির্দেশনা মোতাবেক সাকিব আহম্মেদ ওরফে সাকিবুল হাসিফের কাগজপত্র যাচাই বাছাই করতে গিয়ে প্রতারণা, মিথ্যাচার, তথ্য গোপন, বিশ^াসভঙ্গ ও জালিয়াতির সত্যতা পন ঝিনাইদহ জেলা নির্বাচন অফিস। এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন অফিসার আব্দুস ছালেক খবর নিশ্চত করে জানান, সাকিবের অভিযোগটি মিথ্যা প্রমানিত হওয়ায় জাতীয় পরিচয় পত্র নিবন্ধন আইনের আওতায় তিনি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তিনি আরো বলেন, “কোন নাগরিক জাতীয় পরিচয় প্রাপ্তির জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা জ্ঞাতসারে কোন মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপন করলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন। উক্ত অপরাধের জন্য দিনি এক বছরের কারাদন্ড বা অনধিক বিশ হাজার টাকা অর্থ দন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন”। এ বিষয়ে দুদকে অভিযোগকারী সাকিব আহম্মেদ ওরফে সাকিবুল হাসিফ জানান, তিনি দরিদ্র ঘরের সন্তান। তার মায়ের ঋন গ্রহনের সুবিধার জন্য এই মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, তার জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনীর খুব প্রয়োজন। কারণ এসএসসি থেকে অনার্স পর্যন্ত তার সমস্ত কাগজপত্র সংশোধন করা সম্ভব নয়। তার দুইটি ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন সক্রিয় থাকার কারণে পরিচয়পত্র সংশোধন হয়নি বলে দাবী করেন।