দেশের বিভিন্ন স্থানে উত্তেজনা, কঠোর অবস্থানে প্রধানমন্ত্রী
কুমিল্লায় পবিত্র কোরান অবমাননার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় কমপক্ষে ১৭টি মন্দির-পূজামণ্ডপে হামলা-ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে জনতা-পুলিশ সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। আরো কয়েকটি জেলায় সংঘর্ষ, ধাওয়া পালটা ধাওয়ায় সাংবাদিক-পুলিশসহ দেড়শতাধিক আহত হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছে অর্ধশতাধিক।
গত বুধবার কুমিল্লা শহরের একটি পূজামণ্ডপ থেকে পবিত্র কোরান শরীফ উদ্ধারের ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে। ঘটনা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কুমিল্লা, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জসহ দেশের ২২ জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবির পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান।
এদিকে দেশে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান দুর্গোৎসব চলাকালে এমন অপ্রীতিকর ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘কুমিল্লার ঘটনায় কাউকে কোন ছাড় দেওয়া হবে না। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তারা যে ধর্মেরই হোক না কেনো, বিচারের আওতায় আনা হবে।’ গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপে ভক্তদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন ।
একই দিন রাজধানীর গোপীবাগে রামকৃষ্ণ মিশন পূজামন্ডপ পরিদর্শনকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলেছেন। জানা গেছে, চলমান পরিস্থিতিতে সারাদেশে দলীয় নেতা-কর্মীদের সজাগ থাকার নির্দেশনা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে সব পূজামন্ডপে সতর্ক পাহারায় থাকতে বলা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, কুমিল্লার ঘটনায় যারা জড়িত তাদেরকে শিগগিরই ধরা হবে। গতকাল সচিবালয়ে পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ সব গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
চাঁদপুর প্রতিনিধি ও হাজীগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, উপজেলায় একাধিক মন্দিরে হামলার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা ও পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন যুবক ও এক কিশোর নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৩ জন বুধবার রাতে ও একজন বৃহস্পতিবার সকালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে মারা গেছেন। বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার লক্ষ্মীনারায়ণ জিউর আখড়া (ত্রিনয়নী), দি বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠ মন্দির, পৌর মহাশ্মশান, জমিদার বাড়ীসহ কয়েকটি পূজামণ্ডপের সামনে এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন: টাইলস মিস্ত্রী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সুন্দরপুর বাগডাঙা এলাকার সামছুর ছেলে বাবলু (৩৫), হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার ১১নং ওয়ার্ড রান্ধুনী মুড়ার শুকু কমিশনার বাড়ির তাজুল ইসলামের ছেলে আল আমিন (১৮), একই ওয়ার্ডের সেকান্দর বেপারী বাড়ির মো. ফজলুর ছেলে হূদয় (১৪) ও রান্ধুনীমুড়ার বাচ্চুর ছেলে শামীম (১৯)। মৃত্যুর বিষয়টি হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার সুলতান মাহমুদ নিশ্চিত করেছেন।
হাজীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, এশার নামাজের পর আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা মিছিল নিয়ে লক্ষ্মী নারায়ণ জিউর আখড়া ও পাশের আশ্রমে হামলা করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি ও টিআর সেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ, সাংবাদিক ও পথচারীসহ ৩০/৩৫জন আহত হন। গুরুতর আহত বাবলু, আল-আমিন, হূদয় ও শামীমকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাদের মৃত্যু হয়।