নড়াইলে গ্রাহকের ২ কোটি টাকা নিয়ে ‘লাপাত্তা’ ব্যাংকের এজেন্ট
নড়াইলে ব্যাংক এশিয়ার চাঁচুড়ি বাজারের এজেন্ট খায়রুল বাশার প্রায় ২ হাজার গ্রাহকের ৩ মাসের বিদ্যুৎ বিলের ৫ লক্ষাধিক টাকা এবং জামানতের ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। ব্যাংকে আমানতের টাকা জমা হয়নি এই খবর পেয়ে গ্রাহকেরা হতাশ হয়ে ভিড় করছেন ওই ব্যাংকের এজেন্ট অফিসে। ব্যাংক থেকে গোপনে কম্পিউটার সরানো এবং ৫০হাজার টাকা ভাড়া বকেয়া পড়ায় ভবন মালিক ব্যাংকে তালা মেরে দিয়েছেন।
ব্যাংক এশিয়া সূত্রে জানা যায়, নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ী বাজার শাখাটি ২০১৯ সালের জুন মাসে স্থাপন হয়। স্থানীয় চন্দ্রপুর গ্রামের খায়রুল বাশার এজেন্ট হিসাবে নিয়োগ পান। বর্তমানে শাখাটিতে ডিপিএস, মেয়াদি আমানত ও সঞ্চয়ী হিসাব মিলে ১ হাজার ৩০০ গ্রাহক নিয়মিত লেনদেন করেন। এর মধ্যে বেশীরভাগই মেয়াদি আমানতের গ্রাহক। প্রতি মাসে ২ হাজারেরও বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে থাকেন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ব্যাংকটিতে পল্লী বিদ্যুতের বিল নেয়া শুরু হয়। আশেপাশের ৪ ইউনিয়নের প্রায় ২ হাজার গ্রাহক এখানে বিদ্যুৎ বিল জমা দেন। মার্চ মাস থেকে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া আসতে থাকায় গ্রাহকেরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন জমাকৃত বিলের টাকা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে জমা হয়নি। এই অবস্থা পরবর্তী এপ্রিল ও মে মাসে চলতে থাকে। বিদ্যুৎ বিলের ঘাপলার কারণে ধীরে ধীরে বের হতে থাকে অন্য জামানতের টাকার হিসাব।
ব্যাংকিং পদ্ধতির বাইরে নিজ উদ্যোগে গ্রাহককে এককালীন জামানতে মাসিক বেশি অর্থ প্রদানের লোভ দেখিয়ে কয়েক’শ গ্রাহকের কাছ থেকে এককালীন জামানত নিয়ে ব্যাংকে জমা না দিয়ে নিজে হাতিয়ে নেন। এমনকি এজেন্ট অফিসে ১০ থেকে ১২ জন কর্মী নিয়োগ দিয়ে তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ২/৪ লক্ষ টাকা করে নিয়েছেন এজেন্ট কাম এমডি খায়রুল বাশার।
ডহর চাঁচুড়ী গ্রামের মৎস্যজীবী পিন্টু বিশ্বাস মাছ বিক্রি করে ৩ লক্ষ টাকা সঞ্চয় করেছিলেন বাড়ি বানানোর জন্য। লাখে মাসিক ৮’শ টাকা পাবেন এই আশায় স্ত্রী লাকিয়ার নামে ৩ লক্ষ টাকা জামানত রেখেছিলেন। মঙ্গলবার (৮ জুন) ব্যাংকে এসে জানতে পারেন তার নামে ব্যাংকের হিসাবে কোন টাকাই জমা হয়নি।
এরকম ভাবে ডহর চাঁচুড়ি গ্রামের মফিজুর রহমান ১৫ লক্ষ টাকা, পুরুলিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর শেখ ১২ লক্ষ টাকা, হাসান শেখের দেড় লক্ষ টাকাসহ কয়েক’শ গ্রাহকের জামানতের দুই কোটি টাকার কোন হদিস নাই।
এদিকে ব্যাংক শুরুর পরে কর্মীদের চাকুরী দেওয়ার নাম করে ২ থেকে ৪ লক্ষ টাকা করে নেয়। এর মধ্যে ফারজানার কাছ থেকে ২ লক্ষ, ফজিলার কাজ থেকে ২ লাখ, লাকি খানম আর অনিক নামের হিসাবে কাজ করা দুই কর্মীর কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা নেয় খায়রুল বাশার।