‘পাঠান’ কী সিনেমাহল সংখ্যা বাড়াতে পারবে?

Share Now..


নানা বাধা-বিপত্তি, আলোচনা-সমালোচনা ছাপিয়ে গতকাল শুক্রবার দেশের ৪১টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে বলিউড বাদশা শাহরুখ খান অভিনীত ‘পাঠান’ সিনেমাটি। প্রতিদিন চলবে ২ শতাধিক শো। তবে সিনেমাটি দর্শকদের কতটা হলমুখী করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। কারণ বিনিময় প্রথার মাধ্যমে গত কয়েক বছরে কলকাতার অনেক সিনেমা দেশের প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন করা হয়েছে। কিন্তু সেসব সিনেমা মুখ থুবড়ে পড়েছে। এমনকি সালমান খানের মতো তারকার সিনেমাও দর্শক পায়নি এ দেশের হলগুলোতে।

যদিও ‘পাঠান’ মুক্তির প্রথম দিন দু-একটি ছাড়া প্রতিটি শো ছিল হাউজফুল। চলচ্চিত্রটির আমদানিকারক নির্মাতা অনন্য মামুনসহ হলমালিকরা মনে করছেন, পাঠান দর্শকদের হলে ফেরাবে। তাদের মতে, দেশে হলমালিকদের চাহিদামতো ভালো সিনেমা নির্মিত হচ্ছে না। যেসব সিনেমা প্রদর্শন করা হচ্ছে তাতে দিনের পর দিন লোকসান গুনতে হচ্ছে। ফলে হল বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। সেই জায়গা থেকে নিয়মিত হিন্দি সিনেমা মুক্তি দিলে দর্শক হলে ফিরবে, সিনেমার ব্যবসা ভালো হবে।

তাদের এমন কথার সঙ্গে যদিও দ্বিমত পোষণ করছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকেই। কেউ কেউ মনে করছেন, পাঠান দেশের গল্প বা সংস্কৃতির সিনেমা নয়। তাই দর্শক আগ্রহ কম থাকবে। আবার অনেকেই বলছেন, প্রথম দু’দিনের দর্শক দেখে ‘পাঠান’ সফল হবে এমনটা ভাবার অবকাশ নেই। সময় গড়ালে আসল চিত্র সামনে আসবে। তাছাড়া ‘পাঠান’ ভারতে বক্স অফিস মাত করলেও এরইমধ্যে ওটিটি মাধ্যমে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব প্রেক্ষাগৃহে পড়তে পারে। তবে দর্শক টানতে সিনেমাটির আমদানি সংশ্লিষ্টরা নানা মাধ্যমে জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন।

অন্যদিকে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকেই হিন্দি সিনেমা মুক্তিতে দেশের সংকটময় চলচ্চিত্রে অশনি সংকেত দেখতে পাচ্ছেন। তাদের মতে, হিন্দি সিনেমার প্রভাবে নেপাল, শ্রীলঙ্কার চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। এমনকি কলকাতার সিনেমাও বলিউডের দাপটে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। এরইমধ্যে তাদের এমন কথার সত্যতাও মিলেছে।

‘পাঠান’ মুক্তির কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে দেশের আলোচিত সিনেমা ‘মা’। নির্মাতা অরণ্য আনোয়ার বেশ কিছুদিন আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন মা দিবসে সিনেমাটি মুক্তি দেবেন। কিন্তু হিন্দি সিনেমা মুক্তির প্রভাবে ‘মা’ পড়েছে ভোগান্তিতে। সিনেমাটি মুক্তি দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না হল মালিকরা।

অন্যদিকে যেসব কারণে হল মালিকরা হিন্দি সিনেমা আমদানির পক্ষে, সে কারণগুলোর সঙ্গে একমত নন চলচ্চিত্র জগতের অনেকেই। তারা মনে করেন, দেশের এখনও অনেক ভালো মানের সিনেমা নির্মিত হয়। তবে হলগুলোর মানহীন পরিবেশের জন্যই তারা দর্শক হারিয়েছে। দেশে সিনেমার ব্যবসায় ধস নেমেছে। ভালো পরিবেশ পেলে দর্শক সিনেমা দেখে। স্টার সিনেপ্লেক্সসহ অন্যান্য সিনেপ্লেক্স এবং মানসম্পন্ন হলগুলো সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

সর্বশেষ রোজার ঈদেও সিনেমার ব্যবসা ভালো হয়েছে সিনেপ্লেক্সগুলোতে। সজল ও পূজার ‘জ্বিন’ সিনেমা শুধু স্টার সিনেপ্লেক্সের শাখাগুলোতেই প্রতিদিন ১৯টির মতো শো চালিয়েছে! ‘জ্বিন’ ছাড়াও সিনেপ্লেক্সে দর্শক পেয়েছে ‘কিল হিম’, ‘লিডার’ ও ‘পাপ’। পাশাপাশি যমুনা ব্লকবাস্টারসহ অন্যান্য সিনেপ্লেক্স এবং মণিহার ও মধুমিতার মতো হলগুলোও ভালো দর্শক পেয়েছে। তবে মানহীন সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলো প্রত্যাশা অনুযায়ী দর্শক টানতে পারেনি। যার ধারাবাহিকতা ‘পাঠান’ সিনেমাতেও চলমান রয়েছে। সিনেমাটি ঘিরে সিনেপ্লেক্সগুলোর মতো উৎসাহ সিঙ্গেল স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে না। তাদের মতে, ভালো পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারা হলগুলো ‘পাঠান’ দিয়েও তাদের ভাগ্য বদলাতে পারবে কিনা, সে নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

তবে হলসংখ্যা বাড়ানো এবং সংস্কার করা যুক্তিতেই দেশীয় শিল্পীরা এই আমদানি শর্ত মেনে নেয়। তাই ‘পাঠান’ বা ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির মূল চ্যালেঞ্জ হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর কতগুলো সিনেমাহল বাড়লো বা সংস্কার হলো সেটাই এখন দেখার বিষয়।

2 thoughts on “‘পাঠান’ কী সিনেমাহল সংখ্যা বাড়াতে পারবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *