যশোরে ঈদের কেনাকাটায় উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি, প্রতিটি মার্কেটে উপচে পড়া ভিড়
যশোর জেলা প্রতিনিধিঃ
যশোরের ঈদের কেনাকাটায় উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি লক্ষ্য করা গেছে। প্রতিটি মার্কেটে ছিল উপচে পড়া ভিড়।করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য সরকার কর্তৃক ঘোষিত বিধি-নিষেধ ও সর্বাত্মক লকডাউনের টানা ১৪ দিন পর যশোরের মানুষ যেন বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছে ! শুক্রবার সকালে শহরের দৃশ্য যেন সেটিই জানান দেয়। দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে মুক্ত বাতাসে ঘুরতে দলে দলে মানুষ শহরে এসেছে। কিছুদিন ধরে শহরের ভিতরে ঢুকতে না পারা রিকশা আর ইজিবাইকও পাল্লা দিয়ে প্রবেশ করে শহরে। এ যেন স্বাভাবিক সময়! ঈদের শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা করতে ব্যস্ত সকলেই। যশোরে যে হারে করোনা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে, প্রতিদিন শ’শ’ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, তেমনি থেমে নেই মৃত্যুর সংখ্যাও । সবাই ছুটেছে যে যার মতো। কেনাকাটা করেছে পাল্লা দিয়ে। শহরের অধিকাংশ সড়কে ছিল ব্যাপক যানজট ও মানুষের উপচে পড়া ভিড়।
দুপুর ১২-০১ টার পর শহরের এইচএমএম রোড ছিল লোকে লোকারণ্য। পা ফেলার মতো জায়গা ছিল না। এই সড়কের দুপাশে সকল দোকানপাট খোলা ছিল। যে যার মতো কেনাকাটায় ব্যস্ত দেখা যায়। অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক থাকলেও দোকানগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার তেমন কোনো সুব্যবস্থা ছিল না।
তানভীর নামে একব্যক্তির কাছে জানতে চাইলে, তিনি বলেন ,অনেকদিন সবকিছু বন্ধ ছিল। বাড়িতে অনেক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নাই। তাই প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে এসেছি। করোনার কারণে ঘরে বসে থাকলেতো সংসার চলবে না।
মুজিব সড়কেও দেখা গেছে মানুষের বেপরোয়া চলাফেরা। মানুষে ঠাসা ছিল সড়কটির অধিকাংশ অংশ। এই সড়কের পাশেই কালেক্টরেট মার্কেটে ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। রিকশা ইজিবাইকও ছিল চোখে পড়ার মত।
জেসমিন নামের এক মধ্যবয়সী নারীর সাথে কথা হয় ঐ মার্কেটে। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় করোনার মধ্যে কেন বাজারে এসেছেন। উত্তরে তিনি বলেন,। লকডাউন উঠে গেছে তাই এসেছি।’হেলাল নামে আরেক ব্যক্তি বলেন,‘খেতে দেয়ার নামে খোঁজ নেই আবার যত কথা।’ তিনিও ছিট কাপড় কেনাকাটা করছিলেন।
গাড়িখানা রোডে দেখা যায় তীব্র যানজট। চিত্রামোড় থেকে আরএন রোড পর্যন্ত ছিল ভয়াবহ যানজট। দীর্ঘ সময় আটকে থাকতে হয় রিকশা ও ইজিবাইক যাত্রীদের। গরমের মধ্যে তারা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। এ সময় এই সড়ক দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাচলও দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। রেলরোড এবং মাইকপট্টি সড়কের অবস্থাও একই রকম ছিল। তীব্র যানজটে নাকাল ছিল এসব সড়কের পথচারীরা। মণিহারের সামনে ছিল আরও ভয়াবহ যানজট।একদিকে যানজট,অন্যদিকে গরম, সব মিলিয়ে মানুষ পড়ে চরম ভোগান্তিতে।
এতো গেল সড়কের চিত্র। মার্কেটের ভেতরের চিত্র ছিল আরও করুন। মানুষ গাদাগাদি করে কেনাকাটায় ব্যস্ত ছিল। বেশিরভাগ দোকানে ছিল উপচেপড়া ভিড়। প্রায়সব মার্কেটে একই অবস্থা দেখা যায়। জুতা, কসমেটিকস, মুদি বাজার সব মার্কেটে মানুষের উপচেপড়া ভিড় ছিল।
শহরের অবস্থা দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে, যশোরে করোনায় প্রতিদিন অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। প্রতিদিন শ’শ’ মানুষ যে আক্রান্ত হচ্ছে সেটিও কেউ আমলে নেয়নি।
আব্দুল ওহাব নামে একব্যক্তি বলেন,‘লকডাউন শিথিল করার কারণে শহরে যেভাবে মানুষের ঢল নেমেছে তাতে করে করোনায় আক্রান্ত হতে বাকি আছে যারা, তারাও আক্রান্ত হবে এই অবস্থা চলতে থাকলে।’ লকডাউন শিথিল করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।