যশোরে প্রতি সপ্তাহে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম
এস আর নিরবঃ
যশোরে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। এ সপ্তাহেও বেড়েছে আলু, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল, চিনি, মাছ ও সবজির দাম। বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা, পেঁয়াজ ৫৫ টাকা, আলু ৩৫ টাকা। যশোর শহরের বড়বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া যায়। বাজার করতে আসা সাধারণ ক্রেতারা নিত্যপণ্যের অগ্নিমূল্যে হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সাধারণত বড়বাজারে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এ সপ্তাহে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার পর তেমনটা দেখা যায়নি। বিক্রেতারা পর্যাপ্ত পরিমাণ পসরা সাজিয়ে বসলেও অগ্নিমূল্যের কারণে ক্রেতারা বিমুখ হতে বাধ্য হচ্ছেন। বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৫ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ৩০ টাকা। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ৫০ টাকা। বড়বাজার এইচএমএম রোডের কালীবাড়ী সবজি মার্কেটের আড়তদার বাগান সাহা জানান, যশোরে বেশিরভাগ পেঁয়াজ আসে রাজবাড়ী থেকে। রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলায় বড় মোকাম নাড়ুয়া বাজারে শুক্রবার পাইকারি ৫০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে আমদানি বন্ধ থাকায় বিভিন্ন মোকামে পেঁয়াজের চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়েছে। তিনি এদিন তার আড়তে আলু পাইকারি ২৮ টাকা কেজি ও পেঁয়াজ ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন।
বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ১২৫ টাকা। চিনি সরবরাহে ঘাটতি না থাকলেও ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন। যদিও সরকার গত মাসে আমদানি করা খোলা চিনির খুচরা বিক্রয় মূল্য ১০৪ টাকা নির্ধারণ করেছে। মিল মালিকদের ভাষ্য দেশে চিনির সংকট নেই, তবে বিশ্ব বাজারে দাম বেশি। শুক্রবার খোলা সয়াবিন তেল প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১৮৫ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ১৭৪ টাকা। বিক্রেতা রবি ব্যানার্জি জানান, গত বৃহস্পতিবার সরকার নতুন দাম নির্ধারণ করায় খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে।
ইলিশসহ সব ধরনের মাছের দামও অনেক বেশি। বড়বাজার মাছবাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১৬শ টাকা, ৭শ/৮শ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১২শ টাকা। তাছাড়া তিন কেজি ওজনের পাঙ্গাশ মাছের কেজি বিক্রি হয়েছে ২২০ টাকা, তিনটায় কেজি তেলাপিয়া ২শ টাকা, এক কেজি ওজনের রূই ৩শ টাকা, এক কেজি ওজনের কাতল ২৬০ টাকা, ১০টায় কেজি বাগদা চিংড়ি ১ হাজার টাকা, ১৪/১৫ টায় কেজি বাইন মাছের কেজি ১১শ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বিক্রেতা গোপীনাথ জানান, বাজারে মাছের সরবরাহ কম, চাহিদা বেশি তাই দাম বেড়েছে। আড়তদার পিয়ার মুহাম্মদ জানান, যশোরের বড়বাজার মাছবাজার মোকামে বরিশাল, ভোলা,বরগুনা থেকে চলতি মৌসুমের ইলিশ মাছ আসা শুরু হয়েছে। তিনি আশা করছেন আগামী সপ্তাহে সরবরাহ বেড়ে দামও কিছুটা কমে আসবে।
সবজির বাজারও ভীষণ চড়া। গত সপ্তাহ থেকে এ সপ্তাহে আরও কিছুটা দাম বেড়েছে। বিক্রেতা নাসির আলী জানান, তিনি শুক্রবার উচ্ছে বিক্রি করেছেন প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, শসা, ঝিঙে, ঢেঁড়স, বরবটি, বেগুন বিক্রি করেছেন ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। তিনি আগামী সপ্তাহে সবজির দাম কমার বিষয়ে আশার বাণী শোনাতে পারলেন না।
বড়বাজার কাঠেরপুলে ঈদুল ফিতরের আগের রাত থেকে গরুর মাংসের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার পর বিক্রেতারা আর কমাননি। শুক্রবার মোটরগ্যারেজ মেকানিক শহরের বেজপাড়ার বাসিন্দা মো. শামসু জানান, তিনি ৭৫০ টাকা কেজি দরে কাঠেরপুল থেকে এক কেজি গরুর মাংস কিনেছেন। রোজায় রেটবোর্ড টানিয়ে বিক্রি হচ্ছিল প্রতি কেজি ৭০০ টাকা দরে।
এদিকে বাজার করতে আসা ঘোপের বাসিন্দা রুস্তম আলী জানান, দোকানে চিনি বিক্রি হচ্ছে সংগোপনে। তিনি ১৩৫ টাকা কেজি দরে বড়বাজার থেকে এক কেজি খোলা সাদা চিনি কিনেছেন, তাছাড়া অন্যান্য প্রায় সব নিত্যপণ্যের চড়া দামের কারণে তিনি চাহিদামত সবজি ও মাছ কিনতে পারেননি, হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।