যশোরে সংবাদ সম্মেলনে কাঁদলেন দুর্দিনের মহিলা লীগের কর্মীরা
যশোর জেলা প্রতিনিধিঃ
প্রধানমন্ত্রীর কাছে কমিটি পুনঃবিবেচনার দাবি জানিয়ে সদ্য অনুমোদিত যশোর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে রাজপথের ত্যাগী ও রাজনীতিতে সক্রিয় অনেকের স্থান হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে। কমিটিতে জামায়াত-বিএনপি পরিবারের অনেকে জায়গা পেলেও বঞ্চিত হয়েছেন দুর্দিনের নেতাকর্মীরা। কারো কারো কমিটিতে ঠাঁই হলেও যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন করে এমন দাবি করা হয়। এসময় কাঁদতে কাঁদতে কমিটি পুনঃবিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নাসিমা সুলতানা মহুয়া বলেন, গত ২৫ মে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি অনুমোদন করা হয়েছে। এতে ত্যাগী ও যোগ্য নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। সভাপতি লাইজু জামানের গাড়ির ড্রাইভারের স্ত্রী শিরিন বেগম মানব বিষয়ক সম্পাদক পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক জোৎস্ন্যা আরা মিলির বাড়ির কাজের মহিলা ফেরদৌসী বেগম সুন্দরী সাংগঠনিক সম্পাদকে ঠাঁই পেলেও জায়গা হয়নি মিছিলে আসা অনেক নেতাকর্মীর।
এছাড়া সহসভাপতি জেসমিন আরা লাকী, যুগ্ম সম্পাদক দিল আফরোজ ইতি ও সালমা পারভীন কেয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক নাদিরা ইয়াসমিন ও নওশীন সুলতানা সুমি, দপ্তর সম্পাদক ফারহীন রহমান, জাকিয়া সুলতানা মনির পরিবার বিএনপির রাজনীতি করে।
সাংগঠনিক সম্পাদক নওশীন সুলতানা সুমি উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুরুন-উন-নবীর ভাগ্নি। এছাড়া অপরিচিত মুখ হোসনেয়ারা হেনা, ফেরদৌস আরা শরীফ, সালমা ইকবাল হয়েছেন সহসভাপতি। আর রোকেয়া বিশ্বাস সহসভাপতি ও তার মেয়ে রোমানা খাতুন রিক্তা রাজপথে না থেকেও প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন।
২৯ জনের একটি তালিকা দিয়ে অভিযোগ করা হয় তারা রাজপথে থাকলেও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের মূল্যায়ন করেননি। এরমধ্যে শাহিদা বেগম আগের কমিটির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। রোকেয়া বেগম রুকি শহর শাখার মহিলা সম্পাদিকা, নুরজাহান বেগম উপজেলা শাখা মহিলা সম্পাদিকা ও শহর বানু আগে জেলা শাখার সদস্য থাকলেও কমিটিতে ঠাঁই পাননি। বঞ্চিত হয়েছেন নাসিমা সুলতানা মহুয়া, শিমু চৌধুরী, রাহেলা খাতুন, শামসুন নাহার, নুরজাহানসহ অনেকে।
কমিটিতে সদস্য পদে স্থান পাওয়া শিমু চৌধুরী হাউমাউ করে কেঁদে বলেন, দলের দুর্দিনে রাজপথে থেকেছি। ১৪-১৫ বছর বয়স থেকে রাজনীতি করি। সভাপতি লাইজু জামান ডেকে বলেছিলেন ভালো জায়গায় রাখা হবে। কিন্তু রাখা হয়নি। তার বাসায় গেলে তার স্বামী বলেন যে পদ দেয়া হয়েছে তা নিয়ে খুশি থেকো। তা না হলে মাদকদ্রব্যের সম্রাট বানায়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। আমাদের নামে নাকি রিপোর্ট খারাপ। তাই ভালো পদ দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে তদন্ত করা হোক। প্রয়োজনে পাঞ্জাবিদের মতো গুলি করে মেরে ফেলা হোক। আমাদের বিষ কিনে দিক; খেয়ে মরে যাবো। আমি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তিনি আমাদের মাথার ছাতা। আমরা লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছি না।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মণিরামপুর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসমাতুন নাহার বলেন, স্থানীয় একজনপ্রতিনিধি নিষেধ করায় তাকে জেলা কমিটির সদস্য করা হয়নি।
জানতে চাইলে,জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লাইজু জামান বলেন, সংগঠনের প্রচুর কর্মী। সবাইকে জেলা কমিটিতে স্থান দেওয়া যায়নি। সবাই ভালো পদ পাননি। এছাড়া উপজেলা, শহর এবং ওয়ার্ড কমিটি গঠন হবে। সেখানে পদ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তিনি আরো বলেন, কমিটিতে স্থান না পেয়ে অনেকে মনোকষ্টে ভুল তথ্য দিতে পারেন। জামায়াত-বিএনপির কারো কমিটিতে আসার প্রশ্নই আসে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোৎস্ন্যা আরা মিলি বলেন, কমিটিতে বিএনপি পরিবারের কেউ স্থান পেয়েছে এমন তথ্য জানা নেই। যারা বঞ্চিত হয়েছে তারা কখনো কমিটিতে আসার ব্যাপারে আমার সাথে যোগাযোগ করেননি। আর ফেরদৌসী বেগম সুন্দরী আমার বাড়ির কাজের মহিলা নন। আমার রাজনৈতিক সহকর্মী। তার স্বামী ব্যবসায়ী। তিনি নিজেই বাড়িতে কাজের লোক রেখেছেন। অন্যের বাড়িতে কাজ করতে যাবেন কেন।