যশোর শহরের ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো ফুটপাত ব্যবসায়ীদের দখলে
এস আর নিরবঃ
যশোর শহরের ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো এখন ফুটপাত ব্যবসায়ীদের দখলে । পথচারীদের চলাচল নির্বিঘ্নে করতে ফুটপাত করেছিল প্যেরসভা। সেই ফুটপাত এখন আর পথচারীদের নেই, চলে গেছে ব্যবসায়ীদের দখলে। গোটা ফুটপাত জুড়ে টি স্টল থেকে শুরু করে ভাজাপোড়া খাবারের দোকান। আবার ফুটপাথ ছাপিয়ে কিছু সড়কের ওপরও পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে স্থায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ভ্রামমাণ ব্যবসায়ীরা। এসব কারণে পথচারীদের পোহাতে হচ্ছে দূর্ভোগ। ছোট-খাটো দুর্ঘটনাও ঘটছে। প্রতিকারে পৌর প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। তাই জনমনে ক্ষোভ বাড়ছে। পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি উচ্ছেদ অভিযান চলমান রয়েছে। তবে জনসচেতনতার অভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হচ্ছে।
যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানা ভৈরব চত্বর থেকে হাসপাতাল সড়ক, জেল রোড, দড়াটানা থেকে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল, মুজিব সড়কের দু’পাশ ঘিরে ঈদগাহ পর্যন্ত ফুটপাত দখল করেছে ফল, কাপড়-চোপড় ও স্যান্ডেল ব্যবসায়ীরা। দড়াটানা থেকে গাড়িখানা সড়ক ও চিত্রামোড় থেকে একদম থানা সংলগ্ন এলাকার দখল নিয়েছে ভ্রাম্যমাণ তৈরি পোশাক, চটপটি ও ফল বিক্রেতারা। রবীন্দ্রনাথ সড়কের দশা আরও ভয়াবহ। স্থায়ী ব্যবসায়ীরা দোকান ছাপিয়ে সড়কে সাজিয়ে রাখছে পণ্যের পসরা। মণিহার এলাকার ৩ পাশজুড়ে টি স্টল থেকে শুরু করে তৈরি পোশাকের দোকান গড়ে উঠেছে। থানা সংলগ্ন এলাকাজুড়ে হরেক রকম পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা। সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখা থেকে শুরু করে একদম রেলস্টেশন পর্যন্ত ড্রেনের দখল নিয়েছে অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা। আশ্রম মোড় থেকে মুরগী ফার্ম পর্যন্ত সড়কের দু’পাশের দখল নিয়েছে ভাংড়ি ব্যবসায়ীরা। চারখাম্বা মোড় (রাসেল চত্বর) থেকে ফায়ার স্টেশন ও ভোলা ট্যাঙ্কি পুকুর পর্যন্ত ড্রেনের ওপর গড়ে উঠেছে টি স্টল ও চটপটির দোকান। এখানে দিন-রাত সারাক্ষণ ড্রেনের ওপর বেঞ্চ ও ফুটপাতে দোকান বসিয়ে স্থায়ী দোকান বানিয়ে ফেলেছে চা-পান বিক্রেতারা। জিলাস্কুল সংলগ্ন এলাকাসহ সোজা মুজিব সড়কের দু’পাশের ড্রেনের ওপর পা রাখার জো নেই। স্থায়ী ও অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা পণ্যের পসরা সাজিয়ে সব দখলে নিয়েছে। এ দৃশ্য একদম পুলেরহাট পর্যন্ত।
মাইকপট্টি ও ইন্সটিটিউট সংলগ্ন সড়কে ফুটপাথ ছাপিয়ে সড়কের ওপর পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন স্থায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। একই দশা বড়বাজারের প্রতিটা সড়কে।
ফুটপাথ ছাপিয়ে সড়কের ওপর যত্রতত্র পণ্যের পসরা আর গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে ব্যস্ততম সড়কে প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। স্কুল শুরু ও ছুটির পর সড়কগুলোতে নজিরবিহীন যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
শহরের চিত্রামোড়ে কথা হয় পথচারী আব্দুস সামাদ ও দীপিকা রায়ের সাথে। তারা জানান, ছেলে-মেয়ে আনা-নেয়া করতে দিনে দুবার আসতে হয় ইন্সটিটিউট ও কালেক্টরেট স্কুলে। ফুটপাথ ব্যবহার করতে পারিনে। প্রধান সড়কে ভয়াবহ যানজট লেগেই থাকে। যেকারণে তাদের রিকসা ও ইজিবাইকের নির্ভর করতে হয়। এতে প্রতিদিন ভাড়া চলে যাচ্ছে প্রায় ১শ’ টাকা। তাদের অভিযোগ হাটার পরিবেশ নেই। ফুটপাথ ব্যবসায়ীদের কিছু বললে তারা চড়াও হয়। এতে সন্দেহ হয়, তাদের পেছনে শক্তি আছে। অনৈতিক সুবিধা দিয়ে তারা একধরণের বৈধতা পেয়ে গেছে। যেকারণে পথচারীদের তোয়াক্কা করে না।
দুপুর সোয়া ১২টা। কথা হয় আশ্রম মোড়ে পথচারী নিজামউদ্দিন তালুকদারের সাথে। তিনি বলেন, ড্রেন দখলে নিয়েছে ভাংড়ি ব্যবসায়ীরা। তাদের কিছু বললে মারতে তেড়ে আসে। যেকারণে সামান্য পথ পাড়ি দিতে গুণতে হয় রিকশাভাড়া।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে কথা হয় বেশ কয়েকজন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীর সাথে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যবসায়ী জানান, খাজনার পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় প্রভাবশালীদের নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়। কিছু এলাকা থেকে চাঁদা নেয় পৌরসভার কতিপয় কর্মচারী। চাঁদা দিয়েই ব্যবসা করেন তারা।
এ ব্যাপারে যশোর ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক খন্দকার মশিউর বলেন, যানজট তীব্ররূপ নেয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এরমধ্যে ফুটপাথ বেদখল অন্যতম। এছাড়া শহরের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল ও ব্যাংকগুলোর গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা নেই। যেকারণে ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিয়ন্ত্রণে হিমসিম খাচ্ছে।
এ বিষয়ে যশোর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শরীফ হাসান বলেন, অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ অভিযান চলমান রয়েছে। তবে জনসচেতনতার অভাবে ফুটপাথ দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, উচ্ছেদ করে আসছি কিন্তু পরদিনই দেখা যাচ্ছে ফের বেদখল হয়ে যাচ্ছে। এর দায় স্থানীয়দের ওপরও বর্তায়। এ ব্যাপারে স্থানীয় জনগণের সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। তাহলেই ফুটপাথমুক্ত শহর গড়ে তোলা সম্ভব হবে।