সততা দায়িত্বশীলতা অপর নাম ইউএনও দিলারা রহমান
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধিঃ
সততা, দায়িত্বশীলতা, গরীব-দুখি, অসহায় মানুষের আস্থার স্থল ও সাহসিকতার অপর নাম দিলারা রহমান। বিপদে আপদে যে নামটি সবার আগে উচ্চারিত হয় তিনি হলেন দিলারা রহমান। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীপল্লীসহ চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার এমন কোন অজপাড়া গাঁ নেই যেখানে দিলারা রহমান পা রাখেননি।
তিনি কোনো রাজনৈতিক নেতা নন। তারপরও তাঁর সততা কর্ম¯পৃহা দায়িত্বশীলতা ও জনমানুষের প্রতি আন্তরিকতা তাঁকে বসিয়েছে এক অনন্য উচ্চতায়। হয়েছেন উপজেলা বাসীর আইকন।
এতক্ষণ যার কথা বলছিলাম তিনি হলেন, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান। ইচ্ছা ও মানষিকতা থাকলে একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়েও যে আমজনতার মাঝে মিশে যাওয়া যায়। তার কর্মদক্ষতা, সততা, আন্তরিকতার ও সাহসিকতা দিয়ে সেটাই প্রতিনিয়ত প্রমাণ করে চলেছেন তিনি।
বৈশ্বিক মহামারি এই করোনার মহাদুর্যোগে শহর থেকে গ্রামের অজপাড়া গাঁয়ে তিনি ছুটে বেড়াচ্ছেন মানুষকে সচেতন করতে ও তাদের সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করে নিতে। চলমান বৈশ্বিক মহামারি করোনায় তিনি উপজেলার অস্বচ্ছল কর্মহীন দশ হাজার মানুষের মাঝে খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দিয়ে হয়েছেন ব্যাপক সমাদৃত।
প্রধানমন্ত্রীর উপহারের মুজিববর্ষে উপলক্ষে দ্বিতীয় পর্যায়ে ঘর নির্মাণেও দিলারা রহমান পেলেন লেটার মার্কস। ঘর তৈরিতে গুণগত মান অক্ষুন্ন রাখতে সার্বক্ষণিক সরেজমিন তদারকি করেও চমক দেখিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা রহমান। কঠোর পরিশ্রম, সততা, আন্তরিকতা ও নির্মাণ সামগ্রী ক্রয়ে সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটিয়ে ভূমিহীন, গৃহহীন ও ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠীদের গৃহ নির্মাণ এবং গুণগত মান অক্ষুণè রাখার তদারকির ক্ষেত্রে তাঁর আপোষহীন মনোভাব তাঁকে বসিয়েছে এক অনন্য উচ্চতায়।
একাধিকরার এসব ঘর নির্মাণ পরিদর্শনে এসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, খুলনা বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সার্বিক আব্দুর রশিদ ও জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার সন্তোস প্রকাশ করেন।
উপজেলার সীমান্তবর্তী কার্পাসডাঙ্গায় বাজারে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স সংলগ্ন এলাকার কোটি কোটি টাকা মূল্যের সরকারি সম্পত্তি অবৈধ ভাবে দখল করে প্রভাবশালী সংঘবদ্ধ ভূমিদস্যুরা নির্মাণ করেছিলেন কাচা-পাকা দোকানঘর সহ একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
প্রভাবশালী সংঘবদ্ধ ভূমিদস্যুদের কবল থেকে সরকারি এই সম্পত্তি উদ্ধার করে তিনি সাহসীকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। যা এলাকারবাসীর কাছে ছিলো আকাশ কুশুম কল্পনা। উপজেলার গন্ডি পেরিয়ে গোটা জেলাজুড়ে এ ঘটনাটি ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। সর্ব মহলে তিনি হন প্রশংসিত। আর অবৈধ দখলদারদের কাছে এটা ছিলো যেমন স্মরণকালের সব থেকে বড় পরাজয়। আর এ ঘটনার পর থেকেই ওই এলাকার প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা হয়ে পরে কোনঠাসা।
এছাড়া অবৈধ ভাবে আবাদি জমির উপরি ভাগের (টপ সয়েল) মাটি বালি ও রাতের আধারে ভৈরব নদীর পাড়ের মাটি কেটে প্রভাবশালী একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রিকরে রাতারাতি অর্থশালী বনে যাওয়া ওই সকল ভূমি খেকোদের কাছে ইউএনও দিলারা রহমান যেন সাক্ষাৎ যমদূত।
এছাড়া দর্শনার কালীদাসপুর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বাগদী পাড়ায় একাধিক বার তাদের মাঝে ছুটে যেয়ে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ঘর বুঝিয়ে দেন। আর প্রাথমিক পর্যায়ে যারা ঘর পাননি তাদের জন্যও দ্রুত ঘর বরাদ্দের আশ্বাস দেন। একই সময় এই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের জন্য উপহার দেন ১০ টি বাইসাইকেল।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবার গুলোর শিশু সন্তানদেরকে কোলে নিয়ে নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমানের আবেগঘন পোস্ট উপজেলার গণ্ডি অতিক্রম করে ব্যাপক সাড়া পড়ে। দিলারা রহমানের কোলে নীরবের ওই ছবি চিরাচরিত মাতৃপ্রেম বা সন্তানের প্রতি মায়ের প্রকৃত ভালোবাসাই অঙ্কিত হয়েছে।
জয়রামপুরের চৌধুরীপাড়া, নতুন বাস্তপুর, কুড়ালগাছী বাজারে অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া চাষী গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আর্থিক ও মানষিক ভাবে পাশে থেকে তাদেরকে নতুনভাবে বাঁচতে শিখিয়ে তিনিও পেয়েছেন অসংখ্য মানুষের দোয়া ও প্রশংসা।
এছাড়া দামুড়হুদার দশমী পাড়ার অগ্নিদগ্ধ শিশু ফারহানাকে বাঁচাতে নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমানের তাৎক্ষণিক ছুটে যাওয়া, চিকিৎসা ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিষয়টি আজও ফিরছে মানুষের মুখে মুখে। ঈদুল ফিতরের পূর্বেও অগ্নিদগ্ধ শিশু ফারহানাকে তিনি পৌঁছে দেন ঈদের পোষাক ও খাদ্য সামগ্রী।
এছাড়া, জয়রামপুরের প্রতিবন্ধী স্বামীর অসহায় স্ত্রী পারভিনা যখন তার ক্ষুদ্র দোকানের পূঁজি হারিয়ে শ্বশুর শাশুড়ী ও সন্তানদের মুখে একমুঠো ভাত তুলে দিতে খাচ্ছিলেন হিমশিম, ঠিক তখনই দেবদূত হিসেবে উপস্থিত হন ইউএনও দিলারা। দোকানের প্রয়োজনীয় মালামাল তুলে দিয়ে দোকান সাজিয়ে দেন।
১২ বছর পূর্বে স্বামী পরিত্যাক্তা দামুড়হুদা উপজেলা সদরে দারিদ্রের সাথে সংগ্রাম করে বেচে থাকা ফাতেমা খাতুন এখন বয়সের ভারে নূয়ে পড়ায় প্যাডেল চালিত ভ্যানটি তার পক্ষে আর চালানো সম্ভব হচ্ছিলো না। লোকমুখে ফাতেমা ইউএনও দিলার কথা শুনে তার কষ্টের কথা বলতে ছুটে যান ইউএনও’র কাছে। ফাতেমার কথা শুনে ইউএনও দিলারা তাকে একটি ব্যাটারী চালিত নতুন ভ্যান উপহার দেন।
যে কাজগুলে এলাকার জনপ্রতিনিধিদের করার কথা সে কাজগুলো প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান করায় এলাকাবাসীর কাছে হয়েছেন প্রশংসিত।
তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত ও হয়েছে সর্ব মহলে প্রশংসিত ও ব্যাপক সমাদৃত। গত ৩১ মে ২০২০ এ যোগদানের তাঁর নেতৃত্বে বিভিন্ন স্থানে মাদকাসক্ত ও মাদক পাচারকারী, মাদক কারবারি, ভূমি দস্যু, অসাধু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে দেওয়া হয়েছে জেল জরিমানার মত কঠোর আইনি পদক্ষেপ। এ সময় সরকারের অনুকূলে রাজস্ব আদায় হয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।
তথ্য মতে এ পর্যন্ত দিলারা রহমান পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতে মোট মামলার সংখ্যা ২২৮ টি। দণ্ডিত ব্যক্তির সংখ্যা ২৭৮ জন। সরকারের অনুকূলে দণ্ডিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে আদায়কৃত অর্থের পরিমাণ ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫০ টাকা। একই সময় কারাদণ্ডে দণ্ডিত আসামীর সংখ্যা ০৮ জন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান বলেন, আমার উপরে অর্পিত রাষ্ট্রের সকল আদেশ আমি সততা, স্বচ্ছতা ও আন্তরিকতার সাথে পালন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। বর্তমান সরকারের চলমান উন্নয়নের মহাসড়ক দিয়ে বর্ধিষ্ণু জনপদ দামুড়হুদা উপজেলাও স্বমহিমায় ছুটে চলেছে বলেই আমি মনে করি।