স্বামীর নির্যাতনের বিচার চেয়ে আদালতে স্ত্রীর মামলা
যশোর জেলা প্রতিনিধি
স্বামীর অমানুষিক নির্যাতনের বিচার পাওয়ার আশায় দুই সন্তানসহ আদালতে মামলা করেছেন রহিমা খাতুন নামের এক গৃহবধূ। যৌতুক লোভী ও বহু বিবাহকারী স্বামী তার ২০ বছরের সংসার জীবনে আরও তিনটি বিয়ে করেছেন । স্বামীর হাতে নির্যাতনে আহত হয়ে একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি ও আইনের আশ্রয়ও নিয়েছেন। কিন্তু স্বামীর নিকট আত্নীয় প্রভাবশালী এক ব্যক্তির হস্তক্ষেপে বিচার বঞ্চিত হয়েছেন বারবার। ফলে নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলে ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়েসহ তার চোখে-মুখে এখন কেবলই হতাশা। তবুও হাল ছাড়তে চান না তিনি। যশোর আমলী আদালতের মামলার (সিআর-২৬১/২১) বিবরণে জানা যায়, কেশবপুরের সাগরদাঁড়ী ইউনিয়নের গোপসেনা গ্রামের মফেজ উদ্দীন গাজীর মেয়ে রহিমা খাতুন। ২০০১ সালের ১৫ জুন পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয় মনিরামপুর উপজেলার আটঘরা গ্রামের আবু দাউদ সরদারের ছেলে কামাল আহমেদের সঙ্গে। বিয়ের সময় একমাত্র মেয়েকে সোনার গহনা ও জামাইকে সোনার চেন, আংটি এবং আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল দেন। এতে বেশ ভালোই কাটছিল তাদের সংসার। ২০০৪ সালে তাদের প্রথম সন্তান সুজায়েতের জন্মের পর কামাল ঘর তৈরী করতে রহিমাকে বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনতে চাপ দিতে থাকে। ফলে শুরু হয় সংসারে অশান্তি। বাধ্য হয়ে রহিমা বাবার বাড়ি থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা এনে দেয়। এর কিছুদিন পর কামাল কেশবপুরের সরসকাটি গ্রামে ফাতেমা খাতুন নামে এক মেয়েকে (পিং-এরশাদ গাজী) বিয়ে করেন। এক পর্যায়ে ফাতেমাকে তালাক দিয়ে রহিমার বাবার নিকট থেকে আরও চার লাখ টাকা নিয়ে মালয়েশিয়ায় যান কামাল। দুই বছর পর দেশে ফিরে এলে তাদের সংসারে মেয়ে শান্তার জন্ম হয়। কিছুদিন ভালো থাকার পর তিনি শাহেদ কামাল নাম ধারণ করে সাতক্ষীরার নগরঘাটা গ্রামের সাথী আক্তারকে (পিং-আজিজ সরদার) বিয়ে করে কলারোয়ায় ঘরভাড়া করে বসবাস করতে থাকে। দুই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে রহিমা সব কিছু সহ্য করে শ্বশুরবাড়িতেই থেকে যান। এরপর তার স্বামী আবারও ৫ লাখ টাকা আনার চাপ দিলে রহিমা তার দুই ভাইয়ের অপারগতার কথা জানান। এতে তার ওপর শারীরিক নির্যাতন বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে (তাং-১২/০১/২০১৭) সাথী আক্তারকেও তালাক দিয়ে কামাল ঢাকার সাভারে একটি গার্মেন্টে কাজ নেন। সেখানে কুষ্টিয়া জেলার তমা নামে এক নারীকে বিয়ে করেন। করোনার শুরুতেই স্ত্রী তমাকে নিয়ে আটঘরা গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। এসেই ওই ৫ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য রহিমাকে শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর ৪র্থ স্ত্রী তমার সহযোগিতায় কামাল শারীরিক নির্যাতনে রহিমাকে রক্তাক্ত জখম করে ছেলে-মেয়েসহ তাড়িয়ে দেয়। এক প্রতিবেশীর সহযোগিতায় দুই সন্তান তাকে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সুস্থ হয়ে দুই সন্তানসহ তিনি বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
রহিমা খাতুন বলেন, বিয়ের পর থেকেই কারণে অকারণে তার শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন করেছে স্বামী কামাল। বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেয়ার পর সে তার দুই সন্তানের খোঁজও নেয় না, ভরণপোষনও দেয়না। আমাকে তালাক দিয়েছে বলে জানিয়েছে। তাই দুই সন্তানসহ আদালতে মামলা করতে বাধ্য হয়েছি। তিনি আরও জানান, ইতিপূর্বে স্বামীর বিরুদ্ধে মনিরামপুর থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করেছেন। কিন্তু সরকারী চাকরীজীবি স্বামীর এক প্রভাবশালী নিকট আত্নীয়র কারণে তিনি বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।