অন্তর্বর্তী সরকারের করণীয় নিয়ে ১৩ প্রস্তাব গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির

Share Now..

দেশের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং সংকট নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকারের করণীয় নিয়ে ১৩টি প্রস্তাব দিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। শনিবার (৫ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটমণ্ডল মিলনায়তনে আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস : পর্যালোচনা, প্রস্তাব ও মতবিনিময়’ সভায় এসব প্রস্তাব জানান তারা।

প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে: জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ, আহত ও নিখোঁজদের তালিকা প্রকাশ করে তাদের পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণসহ গণহত্যায় জড়িত শেখ হাসিনা ও সংশ্লিষ্ট সকলকে বিচারের আওতায় আনা এবং তাদের সম্পত্তি জাতীয়করণ করা। সংবিধান কমিশনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখা প্রকাশ করা এবং জনমতের ভিত্তিতে তা চূড়ান্ত করাসহ বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করা এবং জানমালের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন করা। খাদ্যদ্রব্য, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও খাদ্যপণ্যের দাম কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা ও সারাদেশে রেশন চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ অবিলম্বে ব্যাংক লুট, অর্থপাচার ও শেয়ার কারসাজির বিষয়ে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম জাতীয় মজুরি ঘোষণা করাসহ শ্রমিক হত্যার বিচার করা এবং শ্রমিকদের বকেয়া মজুরিসহ সকল ন্যায্য দাবি পূরণে মালিকদের বাধ্য করা। প্রকৃতি ও কৃষকবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কমিশন গঠন করা ও কৃষি উপকরণ থেকে সকল ধরনের শুল্ক প্রত্যাহারসহ  কৃষিতে ব্যবহৃত জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম কমানো।

প্রস্তাবের মধ্যে আরও রয়েছে- বিদ্যুৎ খাতে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল চুক্তি নবায়ন না করার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন এবং রামপাল, রূপপুরসহ দেশবিরোধী প্রাণবিনাশী প্রকল্প এবং এলএনজি ও আদানিসহ বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি বাতিলের প্রক্রিয়া চালু করা। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ও অব্যবস্থাপনা বন্ধ করে সর্বজনীন, বৈষম্যহীন, বিজ্ঞানভিত্তিক, একমুখী শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিষ্ঠায় একটি কমিশন গঠনসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী দখলদারী তৎপরতা বন্ধ করে ছাত্র সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করা এবং পাঠ্যপুস্তক কমিটি পুনর্বহাল করা, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষী প্রচারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ। এছাড়া স্বাস্থ্যরক্ষা ও চিকিৎসাকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা এবং সর্বজন (পাবলিক) হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজ শুরু করাসহ ঔষধসহ সকল চিকিৎসা সংক্রান্ত পণ্যের দাম কমানো। পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে সেনাশাসন প্রত্যাহারের রোডম্যাপ ঘোষণাসহ সাম্প্রতিক হামলাসহ সকল খুন অপহরণ হয়রানির বিচার করা। উত্তরাধিকার সূত্রে জমি-সম্পত্তিতে নারীদের সমানাধিকার নিশ্চিত করা এবং সকল কাজে সমশ্রমে সমমজুরি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় বিধিব্যবস্থা প্রণয়ন ও যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে ২০০৯ সালের হাইকোর্ট নির্দেশনা অবলম্বন করে কারখানা-সচিবালয়সহ সকল প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা কার্যকর করা। মানবপাচার ও প্রবাসে বাংলাদেশি নারী পুরুষের নিপীড়ন প্রতিরোধে বিশেষায়িত সেল গঠন করা।

প্রস্তাবের মধ্যে আরও আছে- যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ইইউ, ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সকল চুক্তি প্রকাশ এবং জনস্বার্থবিরোধী চুক্তিগুলো বাতিলের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণসহ সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও আন্তর্জাতিক পানিবণ্টনে বাংলাদেশের প্রাপ্য নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় সভায় সভাপ্রধান ছিলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। এছাড়া বক্তব্য দেন গবেষক মাহা মির্জা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা নিত্রা, সুফি দার্শনিক কাজী জাবের আহমেদ, চলচ্চিত্রকর্মী আকরাম খানসহ আরও অনেকে।

এ সময় আনু মোহাম্মদ বলেন, আমাদের ১৩টি দাবি অনেক দাবি মনে হতে পারে, কিন্তু এগুলো আসলে বেশি কিছু নয়। সরকার যদি জনগণের দিকে ঘাড় ফেরান, তাহলেই এই দাবি গুলোর বাস্তবায়ন সহজ। এসব বিষয়ের জন্য সরকারের অনেকগুলো মন্ত্রণালয় রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *