অবরোধে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে শৈলকুপার সবজি চাষিরা

Share Now..

\ বিশেষ প্রতিনিধি \
ঝিনাইদহের শৈলকুপার চাষীরা শীতকালীন সবজির ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। টানা হরতাল-অবরোধের কারণে সময়মত সবজি বিক্রি করতে না পারায় ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে সবজি আবার সবজি নিয়ে বাজারে বিক্রি করতে এসে ব্যাপারীরা ঠিকমত দাম দিচ্ছে না, যার ফলে ব্যাপক লোকসানে পড়েছেন তারা। কৃষকরা বলছেন, হাটে ক্রেতা ও বেপারি পর্যাপ্ত না থাকায় অর্ধেকেরও কম দামে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে। আর ব্যাপারীরা বলছে অবরোধের কারণে পরিবহন সংকট চরমে তাই পর্যাপ্ত সবজি কিনে মোকামে নিতে পারছি না যার জন্য স্থানীয় বাজারে দাম কিছুটা কম। চলমান হরতাল-অবরোধ সারা দেশের মতো সবজিভান্ডার হিসেবে খ্যাত শেখপাড়া মদনডাঙ্গা, চড়াইবিল ভাটই বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সবজি চাষিদের কপালেও ফেলেছে চিন্তার ভাঁজ। সময় মতো ঢাকাসহ অন্য জেলা থেকে পাইকার ব্যাপারীরা না আসায় বিক্রি হচ্ছে না তাদের সবজি। ন্যায্যমূল্য না পেয়ে দিশেহারা উপজেলার শত শত কৃষক। দাম কমে যাওযায় ফসল ক্ষেতেই নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেক কৃষকরা। সরেজমিন উপজেলার সবজিখ্যাত শেখপাড়া ও মদনডাঙ্গা বাজার ঘুরে দেখা যায়, সবজি চাষীরা তাদের উৎপাদিত সবজি নিয়ে বাজারে এসেছে। বাজারে আমদানী প্রচুর থাকায় কৃষকরা সবজি কম দামে বিক্রি করছে আড়তদারদের কাছে। যে পরিমাণ পাইকাররা হাটে আসতো, অবরোধ-হরতালের কারণে সে পরিমান পাইকারদের দেখা যাইনি। কম সংখ্যক পাইকাররা বাজারে থাকায় তাদের ইচ্ছামত সবজি ক্রয় করছে। বাজারে কাঁচা মরিচ, মুলা ,কপি, বেগুন, কলা, লাউ, সিম প্রভৃতি সবজি ক্রয় করে বস্তা বন্দী করছে পাইকাররা। অবরোধের কারণে সবজি বহন করার জন্য পিকআপ, ট্রাকের সংখ্যাও কম। আবার কিছু দেখা গেলেও পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। বাজারে পরিবহন নিয়ে আতঙ্কিত দেখা গেছে পাইকারদের মধ্যে। প্রকারভেদে বেগুন প্রতিমণ ৫০০-৬০০ টাকা, কপি ৭০০-৮০০ টাকা, মুলা ৩০০-৪০০ টাকা, সিম ১১০০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় সবজি বিক্রেতা কৃষকদের চোখে মুখে চিন্তার ভাজ দেখা গেছে। সবজি বিক্রেতা বসন্তপুর গ্রামের আক্কাাচ আলী নামে এক কৃষক বলেন, ১০ মণ বেগুন ও ৫ মণ ফুল কপি নিয়ে বাজারে এসেছি, বেগুন ৬০০ টাকা ও কপি ৮০০ টাকা মণ বিক্রি করলাম, অবরোধের কারণে সবজির ন্যায্য মূল্য পাচ্ছি না। পাইকাররা ইচ্ছামত দাম বলছে আর সেইদামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। জ্বালানি তেল, সারসহ কৃষি উপকরণের বাড়তি মূল্য সেইসাথে লাগাতার অবরোধ যার কারণে আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে সবজিতে। মদনডাঙ্গা গ্রামের কৃষক ছানা উদ্দিন বলেন,সবজি চাষে মহাজনদের কাছ থেকে আনা সার, বীজ, কীটনাশক ও সেচের জন্য জ্বালানি তেলের টাকা পরিশোধ করতে পারছি না। অবরোধের কারণে শাকসবজি পরিবহনে ট্রাক-পিকআপের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে এর প্রভাব পড়েছে আমাদের সবজিতে,যার ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে। আমরা সবজিতে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছি না। খুলনা থেকে আসা রবিউল ইসলাম নামে এক পাইকার ব্যাপারী বলেন, হরতাল-অবরোধের কারণে স্বাভাবিকভাবেই সবার মধ্যে একটা আতঙ্ক রয়েছে। পরিবহন চলাচল কম এবং ভাড়াও বেশি যার ফলে বেশী পরিমান সবজি ক্রয় করছি না। চাষিদের কাছ থেকে কিছুটা কম দামে সবজি ক্রয় করলেও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমরা তেমন লাভের মুখ দেখছি না। শেখপাড়া বাজার মালিক সমিতির সভাপতি রেজাউল ইসলাম খান বলেন, অবরোধের প্রথম দিনে হাটে সবজির দাম না পেয়ে অনেক কৃষক হতাশ হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন। এখন ক্রয় করা সবজি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট মোকামে পাঠাতে ট্রাক ভাড়াও ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার অনেকেই অবরোধের কারণে ঝুঁকি নিয়ে কেউ পণ্য পরিবহন করতে চাইছেন না যার ফলে বাজারে সবজির দাম কম। শৈলকুপা উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার আবুল হাসনাত বলেন, আমাদের এই উপজেলায় অধিক পরিমান সবজি উৎপাদন হয়। এখান থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে সবজি যায়, অবরোধের কারণে বাইরে ঠিকমত সবজি যাচ্ছে না বিধায় আপাতত দাম কিছুটা কম। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আশা করি কৃষকরা সবজির ন্যায্য মূল্য পাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *