অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ প্রকাশ, খাতায় এন্ট্রি নেই ওষুধের

Share Now..


গতকাল তখনো ভোরের কুয়াশা ঠিকমতো কাটেনি। ঘড়ির কাটায় সকাল সোয়া ৮টা। রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় প্রবেশ গেটের সামনের জায়গায় আশপাশের এলাকার অনেক মানুষ শরীরচর্চা করছেন। আবার কেউ কেউ হাঁটাহাঁটি করছেন। এর মধ্যে হঠাৎ হাজির মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। উদ্দেশ্য চিড়িয়াখানায় কোনো অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা থাকলে তা স্বচক্ষে দেখা। মন্ত্রীর এমন আকস্মিক পরিদর্শনে চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা অনেকটা অপ্রস্ত্তত হয়ে পড়েন। নানা অনিয়মে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। সম্প্রতি গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ১১টি জেব্রা ও একটি বাঘের মৃতু্যর ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় চলছে। জাতীয় চিড়িয়াখানায়ও গত কয়েক মাসে অবন্তিকা ও দুর্জয় নামে দুটি বাঘশাবক, আফ্রিকান সিংহ, জেব্রা, জিরাফশাবক, ইম্পালা, ওয়াইল্ড বিস্ট মারা গেছে। একই সময়ে রংপুর চিড়িয়াখানাতেও কয়েকটি প্রাণী মারা গেছে। হটাত্ করে কেন এত প্রাণী মারা যাচ্ছে? শুধুই কী অসুস্হতাজনিত কারণে মারা যাচ্ছে, নাকি আছে অবহেলা, অব্যবস্থাপনা?মত্স্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী গতকাল চিড়িয়াখানায় ঢুকেই প্রথমে চলে যান সেই সিংহীর খাঁচার সামনে। গত ২৫ জানুয়ারি হটাত্ করেই আফ্রিকান এই সিংহীটি মারা গেছে। তিনি বলেন, এই সিংহীটির স্বাস্হ্য পরীক্ষা নিয়মিত না হয়ে থাকলে কেন এটা হয়নি তার দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদের বহন করতে হবে। পরে মন্ত্রী চিড়িয়াখানার সব প্রাণীর খাঁচা ঘুরে ঘুরে দেখেন। মন্ত্রী চিড়িয়াখানার প্রাণীদের জন্য সরবরাহকৃত খাবারের বিষয়ে খোঁজ নেন। এ সময় তিনি দেখেন বেলা ১১টার বেশি সময় পার হলেও তখনো সবজি, মাছ আসেনি। এ প্রসঙ্গে জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. মো. আব্দুল লতিফ বলেন, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যেই সব খাবার চলে আসে। আজকে কোনো কারণে আসেনি। তিনি খাবার সরবরাহকারীদের বিষয়ে খোঁজ নেন।

এসব নিয়ম, অব্যবস্থাপনার পাশাপাশি মন্ত্রী চিড়িয়াখানার ভেটেরিনারি হাসপাতালের ওষুধের স্টক রেজিস্টার খাতায় গত চার মাসে কী কী ওষুধ হাসপাতালের স্টোর থেকে গেছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য এন্ট্রি না থাকার বিষয়টি দেখতে পান।

পরিদর্শন শেষে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় ও রংপুর চিড়িয়াখানায় বেশ কয়েকটি প্রাণী মারা গেছে। এসব প্রাণী কারো কর্তব্যে অবহেলা নাকি, রোগ সংক্রমণে মারা গেছে, এ বিষয়গুলো দেখা ও বোঝার জন্য ইতিমধ্যে তাদের পোস্টমর্টেম ও ভিসেরা রিপোর্ট পরীক্ষানিরীক্ষা করা হচ্ছে, দুই দফা তদন্ত করা হয়েছে। আরো কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয়ে তদন্েতর জন্য পুনরায় আদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে দেশের বাইরে রিপোর্টের জন্য পাঠানো হবে বলে জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন খাঁচায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী, ডাক্তার ও সুপারভাইজার সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে কি না, এ বিষয়গুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়ার পর কারো গাফিলতি, দায়িত্বহীনতা বা অযোগ্যতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *