অভাবের সংসারে গরুগুলোই আমাদের সম্বল ছিল \ এক রাতে ৯ গরু চুরি
\ ঝিনাইদহ অফিস \
একই গ্রাম থেকে রাতের আধারে কৃষকের ৯টি গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরপুর-দুর্গাপুর ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামে এমন ঘটনা ঘটে। চুরির এমন ঘটনার পর থেকেই ওই এলাকায় কৃষকদের মাঝে চোর আতঙ্ক বিরাজ করছে। এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কমলাপুর গ্রামের সোবহান বিশ্বাসের ছেলে কৃষক বাবর আলী বিশ্বাসের ২টি সিংদী শাহীয়াল জাতের লাল রঙের গাভী ও ১ টি বকনা বাছুর মোট ৩টি গরু গোয়াল ঘর থেকে চুরি হয়ে গেছে। যার বাজার মূল্য আনুমানিক ৪ লক্ষ টাকা। একই বাড়ির মধ্যে বাবর আলী বিশ্বাসের বড় ছেলে মুজিবুর রহমানের ১টি জার্সি জাতের গাভী ও ১টি বকনা বাছুর এবং ১টি ষাঁড় মোট ৩টি গরু গোয়াল ঘর থেকে চুরি হয়ে গেছে। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৫ লক্ষ টাকা। এছাড়া প্রতিবেশী সোবহান মাস্টারের ছেলে মিলন মিয়ার গোয়াল থেকে ১টি দেশি গাভী, যার আনুমানিক মূল্য ৮০ হাজার টাকা এবং মোহাম্মদ মন্নুর গোয়াল থেকে ১টি বড় ফ্রিজিয়ান জাতের গাভী ও ১টি ষাঁড় গরু একই সময় চুরি করে নিয়ে যায় চোরেরা। যার বাজারমূল্য আনুমানিক ২ লাখ টাকা। গ্রামটিতে ক্ষতিগ্রস্ত সবাই কৃষক। ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগী খামারি বাবর আলী বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে জানান, প্রতিদিনের ন্যায় শনিবার রাতে গোয়ালে গরুর খাবার দিয়ে ঘুমাতে যাই। রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) ভোরে ঘুম থেকে উঠে গোয়াল ঘরে গিয়ে দেখি আমার ৩টি গরুর একটিও নেই। খোঁজাখুঁজি শুরু করলে কিছুক্ষণ পর জানতে পারি আমার ছেলে মজিবরের গোয়াল থেকেও তিনটা গরু, প্রতিবেশী মিলন ও মন্নুর গোয়াল থেকে তিনটি গরু নিয়ে গেছে চোরেরা। ধারণা করছি রাত আনুমানিক ৩ টার সময় চোরেরা গোয়াল ঘর থেকে গরুগুলো চুরি করে পিকআপ কিংবা ট্রাকে করে উঠিয়ে নিয়ে চলে গেছে। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। অভাবের সংসারে গরুগুলোই আমাদের সম্বল ছিল। তাও আজ চুরি হয়ে গেলো। এই ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে উঠবো তা ভাবতে পারছিনা। সুন্দারপুর-দূর্গাপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড মোঃ হানিফ মিয়া ঢাকা পোস্টকে জানান, ভোর সকালে জানতে পারলাম গ্রাম থেকে ৯টি গরু চুরি হয়েছে। এরপর আমি ওই কৃষকদের বাড়িতে যায়। সেখান গিয়ে সবকিছু শোনার পর জানতে পারি, রাতে সবাই গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে ছিল। এরমধ্যে একই বাড়ি থেকে ৬টি গরু এবং প্রতিবেশির বাড়ি থেকে ৩টি গরু চুরি হয়েছে। তবে চোরেরা এই গরুগুলো বড় গাড়িতে করে গ্রাম থেকে নিয়ে গেছে। আমাদের দাবী চুরি যেই করুক না কেন, তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতাই আনতে হবে। কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো: রেজাউল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কমলাপুর গ্রামে আমাদের ক্ষুদ্র খামারিদের ৯টা গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। যা খুবই দুঃখজনক। একজন ক্ষুদ্র খামারি হিসেবে তাদের জন্য অনেক ক্ষতি হয়েছে। ওই এলাকায় প্রায় শতাধিক ক্ষুদ্র খামারী আছে। আর গরু রয়েছে কয়েক শতাধিক। এক রাতে এভাবে গরু চুরি যাওয়ার ঘটনায় স্থানীয় খামারীরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। আমরা যেহেতু চিকিৎসা খাত দেখাশোনা করি সেই ক্ষেত্রে খামারিদের শান্তনা দেওয়া ছাড়া আমাদের কিছুই করার নেই। কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবু আজিফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, গরু চুরির ঘটনা শুনে আমি নিজে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। তাদের সাথে কথা বলেছি। খামারিদের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। দ্রæত তদন্তপূর্বক চোরচক্রের সদস্যদেরকে আইনের আওতায় আনতে অভিযান অব্যহত রয়েছে।