আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিমান হামলা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন
এ বছরের ১৬ এপ্রিল আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় খোস্ত ও কুনার প্রদেশে বিমান থেকে রকেট ও গোলাবর্ষণ করেছিল পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। পাকিস্তানের এই সামরিক হামলায় ৪৭ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছিল আফগান স্থানীয় প্রশাসন। আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় সংবাদ চ্যানেল তোলো নিউজ শিশুদের মরদেহের ছবি প্রকাশ করেছে। এসব শিশু পাকিস্তানের হামলায় নিহত বলে দাবি করেছে চ্যানেলটি।
খোস্ত প্রদেশে ডুরান্ড লাইনের কাছাকাছি পাকিস্তানি বাহিনীর বিমান হামলায় ৪১ বেসামরিক নাগরিক (যাদের বেশির ভাগ নারী ও শিশু) নিহত এবং আরও ২২ জন আহত হয়। আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, খোস্তে ৪১ জন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন আরও দুই আফগান কর্মকর্তা। অন্যদিকে একজন আফগান কর্মকর্তা শনিবার জানিয়েছিলেন, কুনার প্রদেশে ছয়জন নিহত হয়েছেন।
পাকিস্তানের পদক্ষেপগুলি আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। জাতিসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সুরক্ষা কাউন্সিল আন্তর্জাতিক শান্তি ও সুরক্ষা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা পর্যন্ত জাতিসংঘের কোন সদস্যের বিরুদ্ধে সশস্ত্র হামলা হলে বর্তমান সনদে কোন কিছুই ব্যক্তিগত বা সম্মিলিত আত্মরক্ষার অন্তর্নিহিত অধিকারকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে না। আত্মরক্ষার এই অধিকার প্রয়োগের জন্য সদস্যরা গৃহীত ব্যবস্থাগুলি অবিলম্বে সুরক্ষা কাউন্সিলকে জানানো হবে এবং বর্তমান সনদের অধীনে সুরক্ষা কাউন্সিলের কর্তৃত্ব ও দায়িত্বকে যে কোনও সময় এ জাতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা কোনওভাবেই প্রভাব ফেলবে না আন্তর্জাতিক শান্তি ও সুরক্ষা বজায় রাখতে বা পুনরুদ্ধার করার জন্য প্রয়োজনীয় মনে করেন।
কিন্তু পাকিস্তান আফগানিস্তানের আন্তর্জাতিক সীমান্তের প্রতি শ্রদ্ধা না জানিয়ে নিরীহ মানুষের ওপর হামলা চালায়। যা পুরোপুরি আন্তঈজাতিক আইনের বিরুদ্ধে।
এদিকে এ ঘটনার কিছুদিন পর খোস্ত ও কুনার প্রদেশে পাকিস্তানি বিমান হামলার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে অভিযোগ দায়ের করে জাতিসংঘে আফগানিস্তানের স্থায়ী মিশন। তার একদিন পরেই জাতিসংঘে মিশনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স নাসির আহমেদ ফাইক এক টুইট বার্তায় বলেন, পাকিস্তানের বিমান হামলা আফগানিস্তানের আঞ্চলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘনসহ আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে।
আফগানিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর ক্রমাগত গোলাবর্ষণ গত এক দশকের বেশি সময় ধরে চলছে। উদ্বেগের বিষয় হল, এ ধরনের আন্তঃসীমান্ত গোলাবর্ষণ বহু সংখ্যাক বেসামরিক নাগরিক হতাহত, স্থানচ্যুতি, সরকারী এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তি ধ্বংসের কারণ হয়েছে।
গত বছরের ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে তালেবান। এর পর থেকেই আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। সীমান্তবর্তী প্রদেশগুলোতে জঙ্গিরা পাকিস্তানবিরোধী তৎপরতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করে আসছে ইসলামাবাদ। শনিবারের বিমান হামলা মূলত জঙ্গিবিরোধী অভিযানের অংশ বলে বর্ণনা করেছে ইসলামাবাদ। তালেবান অবশ্য সীমান্তে জঙ্গি তৎপরতা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।