আবারও বাড়ছে খেলাপি ঋণ

Share Now..

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের কারণে ব্যাংকের ঋণ গ্রহীতাদের জন্য বিশেষ সুবিধা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে কমে গিয়েছিল খেলাপি ঋণের পরিমাণ। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে যে ছাড় দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক তা তুলে নিতে শুরু করেছে। এতে আবারও খেলাপি ঋণ বাড়তে শুরু করেছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ফের এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা গেছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ এক হাজার ১৫০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। জুন শেষে যা ছিল ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে এক হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। আর গত নয় মাসে বেড়েছে ১২ হাজার ৪১৬ কোটি। কারণ গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, গত সেপ্টেম্বর শেষে দেশের মোট ৬০টি ব্যাংকের ঋণ পরিসংখ্যান নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, ব্যাংকগুলোর সেপ্টেম্বর শেষে মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল-এর বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সেপ্টেম্বর শেষে দুই লাখ ১৯ হাজার ২৯২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ৪৪ হাজার ১৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ২৮ হাজার ৪৯৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এরমধ্যে খেলাপি হয়েছে ৫০ হাজার ৭৪৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ খেলাপির হার পাঁচ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

তথ্যমতে, সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ০৭ শতাংশে, বেসরকারি খাতের ব্যাংকের পাঁচ দশমিক ৪৭ শতাংশ, বিদেশি ব্যাংকগুলোতে চার দশমিক ১২ শতাংশ ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৩৪১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। খেলাপির পরিমাণ তিন হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। খেলাপির হার ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এছাড়া বিদেশী ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ২৬১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এরমধ্যে খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬৯১ কোটি টাকা। খেলাপির হার চার দশমিক ১২ শতাংশ।

গত দেড় বছরে করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ববাণিজ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আমদানি ও রপ্তানিসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে করোনা ভাইরাসের কারণে চলমান বিরূপ প্রভাবের ফলে অনেক ঋণগ্রহীতাই সময়মতো ঋণের অর্থ পরিশোধে সক্ষম হবেন না ধারণা ব্যবসায়ীদের জন্য বিভিন্ন সুবিধার ব্যবস্থা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ধীরে ধীরে সেসব সুবিধা বাংলাদেশ ব্যাংক উঠিয়ে নিচ্ছে। আর এতে বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *