আবে হত্যা: বিশেষজ্ঞদের ভাবাচ্ছে হত্যাকারীর ব্যবহৃত অস্ত্র

Share Now..

যে জাপানে গত কয়েক দশকে হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি বন্দুক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, সেখানে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনীতিক শিনজো আবের হত্যাকাণ্ডে স্থব্ধ বিশ্ব।

তবে তার মধ্যেই আন্তর্জাতিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের ভাবাচ্ছে করেছে আবেকে হত্যায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রটি। সম্পূর্ণ ঘরে বানানো যে আগ্নেয়াস্ত্রটি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে আবেকে, তার সঙ্গে প্রচলিত আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রের মিল খুব কম।

শুক্রবার সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে জাপানের নারা শহরে এক নির্বাচনী প্রচার সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার সময় আবেকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়, সঙ্গে সঙ্গেই পড়ে যান তিনি। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।

হামলাকারী তেতসুয়া ইয়ামাগামি (৪১) ঘাড় ও কাঁধ লক্ষ্য করে পর পর দু’টি গুলি করেছিল শিনজো আবেকে। এ সংক্রান্ত একাধিক ভিডিওফুটেজে দেখা যায়, দ্বিতীয় গুলি করার পরই হাত থেকে অদ্ভুতদর্শন আগ্নেয়াস্ত্রটি ফেলে দিয়েছিল ইয়ামাগামি। তার কয়েক মিনিটের মধ্যে নিরপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হাতে ধরা পড়ে সে।

ভিডিওফুটেজে আরও দেখা যায়, গুলি করার আগে আবের পেছনে অবস্থান নিয়েছিল ইয়ামাগামি; এবং কামান থেকে গোলা ছুড়লে যে শব্দ হয়, ইয়ামাগামি গুলি করার পরও অনেকটা তেমন শব্দ হয়েছিল, সেই সঙ্গে বন্দুক থেকে বের হতে দেখা গেছে সাদা ধোঁয়া।

হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রটি সঙ্গে সঙ্গেই জব্দ করা হয়। জাপান মেট্রোপলিটন পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিভাগের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা, ‘বাক্সের মতো দেখতে এই আগ্নেয়াস্ত্রটি কালো টেপ দিয়ে মোড়ানো। এটির বিধ্বংসী ক্ষমতার সঙ্গে শটগানের খানিকটা মিল থাকলেও এটি একদমই কোনো মানসম্পন্ন শটগানের পর্যায়ে পড়ে না।’

পুলিশ অবশ্য ইয়ামাগামিকে গ্রেপ্তারের পর তার বাসভবনে তল্লাশি চালিয়েছে। সেখানে হাতে বানানো বেশ কয়েকটি বন্দুক ও বিস্ফোরক পাওয়া গেছে। যে বন্দুক দিয়ে আবেকে হত্যা করা করা হয়েছে, সেটি হাতে বানানো আগ্নেয়াস্ত্র বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে স্বীকারও করেছে ইয়ামাগামি।

হাতে বানানো অপ্রচলিত আগ্নেয়াস্ত্রকে বলা হয় ডিআইওয়াই (ডু ইট ইয়োরসেলফ) ফায়ারআর্ম। যুক্তরাজ্যেভিত্তিক গবেষণা সংস্থঅ আরমামেন্ট রিসার্চ সার্ভিসেসের (এআরইএস) পরিচালক ও গোলাবারুদ বিশেষজ্ঞ এন. আর. জেনজেন-জোনস বলেন, ‘বন্দুকটি আমি দেখেছি। প্রথমেই যে ব্যতিক্রমি বৈশিষ্ট আমার চোখে পড়েছে—এটি একটি বৈদ্যুতিক বন্দুক। এটির প্রতিটি ক্যাপ (যন্ত্রাংশ) বৈদ্যুতিক তারের মাধ্যমে অপর ক্যাপের সঙ্গে যুক্ত।‘

‘আমার ধারণা, এটিতে কার্তুজ ভরার ব্যবস্থাও ঠিক প্রচলিত রাইফেলের মতো নয়। প্রচলিত আধুনিক রাইফেলে গুলির জন্য আলাদা ম্যাগাজিন থাকে। এটির সেটি রয়েছে বলে আমরা মনে হয়নি। সম্ভবত এই বন্দুকটি মাজল লোডেড, অর্থাৎ সামনের নল ভেঙে এতে গুলি ভরা হয়। সেদিক থেকে এটির সঙ্গে গত আঠার শতকে ব্যবহৃত মাস্কট রাইফেলের সঙ্গে মিল থাকতে পারে।’

‘কিন্তু আবারও বলছি, (এই বন্দুকটির বিষয়ে) আমি পুরোপুরি নিশ্চিত নই। যদি এটি পরীক্ষা করার সুযোগ আসে, তাহলে হয়তো এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যাবে।’

জাপানে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের মালিক হওয়াও সহজ নয়। কেউ অস্ত্রের লাইসেন্স চাইলে তার অতীত হতে হবে পরিষ্কার, কোনো অপরাধের রেকর্ড থাকা যাবে না। বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ নিতে হবে, মানসিক সুস্থতার পরীক্ষা দিতে হবে। আদ্যোপান্ত যাচাই করে তবেই তাকে লাইসেন্স দেওয়ার কথা বিবেচনা করা হবে। এমনকি পুলিশ ওই ব্যক্তির প্রতিবেশীদের কাছেও তার বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে পারে।

এসব কারণে জাপানে অগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে অপরাধ হয় না বললেই চলে। গুলিতে নিহতের ঘটনা জাপানে ১০ বছরে ঘটেছে দশটিরও কম। কেবল ২০১৭ সালে এমন ঘটনা ছিল মোট তিনটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *