‘আমার রাজ্য আর ভক্তরা ছাড়া আপন কেউ নেই!’

Share Now..

চিত্রনায়িকা পরীমনি নানান কারণেই সরব থাকেন। সবসময় স্পষ্ট বলে দেন রাগ, দুঃখ, অভিমান তার সোশ্যাল মিডিয়াতেই। তারকা হিসেবেও সবচেয়ে বেশি ফলোয়ার তার। তাকে নিয়েই আজকের মূল প্রতিবেদন। লিখেছেন তানভীর তারেক

এক
একটি টিভি অনুষ্ঠানের টকশোতে এসেছেন পরীমনি। লাইভ অনুষ্ঠান। ছোট্ট বাচ্চা রাজ্যকে নিয়েই ঢুকেছেন। লাইভের মাঝেই রাজ্য কেঁদে উঠল। অনেকক্ষণ ধরে কাঁদছে। পরী লাইভ ছেড়েই উঠে গেলেন। এরপর বাচ্চাকে থামিয়ে তবেই সেটে গেলেন। ততক্ষণে অনুষ্ঠান প্রায় শেষ পর্যায়ে। সঞ্চালক অন্য অতিথিকে দিয়ে অনুষ্ঠান প্রায় শেষ করে ফেলেছেন!

দুই

বাড়িতে সহকারী আছে, বাচ্চাকে দেখার মানুষও রয়েছে। শুটিংয়ে ফিরতে মাঝরাত পেরিয়ে যাবে। তবুও সেই মাঝরাত অব্দি পরী তার রাজ্যকে নিজের কাছেই রাখবেন। তার সহকারী বা অন্যান্যদের কাছে নয়। সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের কোনো তুলনা হয় না। কিন্তু অনেকেই বলেন, রাজ্যকে নিয়ে একধরনের অতি আশঙ্কায় থাকেন পরীমনি। কথাটা কি ঠিক? পরী বলেন, ‘না। সেটা হয়তো ঠিক না। তবে আমি আজ অব্দি অন্যের হাতে রাজ্যকে খাওয়ানোটা পছন্দ করি না এবং এটা আমি মেনে নিতেও পারি না। ওকে আমি টানা ১০মিনিট চোখের আড়ালে রাখতে পারি না, নইলে আমি মারাই যাবো।’

তিন

পরীমনির লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, সংসার বা নানান প্রসঙ্গেই বারবার এসেছে তর্ক, বিতর্ক বা সমালোচনা। এগুলোকে কীভাবে সামাল দেন পরী? যখন এই প্রতিবেদন লেখা হচ্ছে তখনও তার সন্তান রাজ্যকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়িতেই ব্যস্ত একজন মা!

পরী বলেন, ‘দেখুন আমার সংগ্রাম একান্তই আমার। এটাকে সংগ্রাম বলি বা ফাইট বলি, এর সাথে আমি কোনোকিছুকেই তুলনা করতে পারবো না। গতবছর নানান চড়াই-উত্রাইয়ের পর বছরের শেষদিকে তো আমি আমার একমাত্র সম্বল নানুকেই হারালাম! এরপর নিজের বলতে এই রাজ্যই। তবে আমি নিজেকে অনেকটাই গুছিয়ে নিয়েছি। নতুন করে কাজ শুরু করেছি। আমি হেরে যাবার মানুষ নই।’

চার

পরীর ক্যারিয়ারে দুই নির্মাতার নাম এসেছে বারবার। তারা দুজন যেমন পরীমনির ক্যারিয়ারে ভীষণ সাপোর্ট করেছেন। তেমনি পরীমনির অভিনয়জীবনকেও সমৃদ্ধ করেছেন। এক্ষেত্রে সবার প্রথমে যে নামটি আসে তিনি গিয়াস উদ্দিন সেলিম। আরেকজন চয়নিকা চৌধুরী। বলা হয় গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘স্বপ্নজাল’ ছবিটির মাধ্যমেই পরীমনির নিজস্বতা প্রকাশ পায়। নিজের অভিনয়জীবনে একটি মাত্রা যোগ করেন তিনি। তার আগে পরীমনির ছবি বাছাই নিয়েও অনেক সমালোচনা ছিল।

পরীমনি প্রসঙ্গে গিয়াসউদ্দিন সেলিম বলেন,‘পরীকে আমি যখন স্বপ্নজালে পাই। একেবারেই ওকে আমি একজন নবাগত হিসেবেই ট্রিট করি। আমি ওকে বলি, আগের যা কাজ করেছ সব ভুলে যাও। এমনকি সেই ডেডিকেশন নিয়েই সে কাজটি করেছে।’

এরপরের অধ্যায় অনেকেই জানেন। ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে সেই স্যাফল্যে চূড়া ছুঁতে না পারলেও পরীমনি তার অভিনয়ের জাত চিনিয়েছেন এই ছবির মাধ্যমেই।

পরী বলেন, ‘অভিনয়টাকে ভালোবেসেই আমি এতদূর। সবাই আমাকে হিংসে বা ঈর্ষা কেন করে, ওসব বুঝি। কারণ হলো আমার প্রতি দর্শকের কৌতূহল। আমার পেজ, আমার ফলোয়ার কেন এত বেশি? এটাই তো সবার সমস্যা। আমি যখন আনন্দবাজারে সেরা নায়িকা হিসেবে পুরস্কৃত হই, তখন যেমন কাছের দূরের মানুষ আমি চিনতে পারি—তেমনি আমার কঠিন সময়েও বুঝতে পারি কে কাছের কে দূরের।’

বারবার সম্পর্ক বদল বা সম্পর্কে জড়ানো নিয়ে নানান কথা উঠেছে। এমনকি কথা ওঠে, পরীমনির অনেক টাকা। সে কারণেই এভাবে কাউকে কেয়ার না করে চলতে পারেন তিনি?

এমন প্রশ্নের জবাবে পরী বলেন, ‘আমার যদি এত টাকাই থাকতো। তাহলে তো আমার ঢাকা শহরে কয়েকটা ফ্ল্যাট থাকতো। আমি বৈষয়িক ছিলাম না। তবে এখন হবো।’

তবে কি বয়ফ্রেন্ড বা জীবনসঙ্গীরাই অর্থ নষ্ট করেছেন?

এক গাল হেসে বলেন পরী, ‘না। নষ্ট করবেন কেন? তবে আমি কারো টাকা নষ্ট করিনি এটুকু বলতে পারি।’

নিজের জীবনের এই যে নানান চড়াই উত্রাই, জীবনের অনেকগুলো ভুল। যা সমাজ দেখিয়ে দেয় বারবার। তখন কি খুব আক্ষেপ হয় আপনার ? আপনার কি মনে হয়, শুধরে নিয়ে জীবনটা যদি চলতে পারতাম!

পরী বলেন, ‘আমার জীবনে কোনো আক্ষেপ নেই। আমি যখন যা করেছি। মন থেকে করেছি। কাউকে আঘাত দেয়া। কাউকে ঠকানোর জন্য করিনি। তাই আমার কোনো আক্ষেপ নেই। জীবন থেকেই শিখেছি। শিখছি।’

পাঁচ

রাজের সাথে সম্পর্ক, সংসার ও বিচ্ছেদ নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক চর্চা হয়েছে। এ নিয়ে পরীমনিও ফেসবুকে নানান স্ট্যাটাসে সরব ছিলেন। কেউ কেউ বলেন গিয়াসউদ্দিন সেলিম চাইলে পারতেন এই সমঝোতা করতে। এ নিয়ে পরী বলেন, ‘আমি কাউকে দোষ দিতে চাই না। শুধু সবাইকে বলতে চাই। সবাই ভালো থাকুক।’

পরীমনির খুব কাছের নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী বলেন, ‘পরী আমার মেয়ে। ও আমাকে মা বলে ডাকে। আমি শুধু একটা কথাই বলবো । এই বৈরী সমাজের সাথে পরী যেভাবে একা লড়ে যাচ্ছে তাতে ওকে স্যালুট দিতেই হয়। কারণ ওর সংগ্রাম আমি কাছ থেকে দেখেছি। ওর একটাই দোষ ও খুব স্পষ্টবাদী।’

নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিমের সাথে বর্তমানে পরীমনির দূরত্ব কেন? এমন প্রশ্নে সেলিম বলেন, ‘দুরত্ব ঠিক না। ভুল বোঝাবুঝি। সেদিন আমরা নিজেরা গাড়ি নিয়ে একটু বাইরে যেতে চেয়েছিলাম। রাজই বললো, আমিও যাবো। এরপর অপেক্ষা করতে করতে সময় গড়ালো। তখন ওদের ভেতরে এক কথা দু’কথা নিয়ে তর্ক। এর সাথে আমার কোনো প্রসঙ্গই নেই। তবু গণমাধ্যম আমাকে নিয়েই টানলো। আর দুটি সম্পর্কে যখন ভাঙন হয়—তখন দুটি মানুষই জানে বোঝে তাদের টানাপোড়েন। এখানে উপযাজক হতে নেই। কারণ ওরা দুজনেই ম্যাচিউরড। আমি বলবো, সম্পর্ক মধ্যবর্তী অবস্থায় ঝুলিয়ে সংসার করে যাওয়া আরো খারাপ। এখন দুজন আলাদা। নিজেদের কাজে মনোযোগ দিক। দুজনেই ভীষণ মেধাবী শিল্পী। অভিনয় জীবনে ওদের অনেককিছু দেবার রয়েছে। সেদিকেই মনোনিবেশ করুক ওরা।’

পরীর নতুন বছরের পরিকল্পনাতেও ঠিক তাই। বললেন,‘ভালো কিছু গল্পে কাজ করতে চাই আমি। আমাকে যে আমার দর্শকেরা ভালোবাসে, এটাই আমার শক্তি। কারণ আমার রাজ্য আর ভক্তরা ছাড়া আপন কেউ নেই! ওদের জন্যই বাঁচবো। ওদের জন্যই ভালো ভালো কাজ করে যেতে চাই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *