আমেরিকার আকাশে ‘চীনা বেলুন’: মার্কিন যুদ্ধ বিমান প্রস্তুত

Share Now..


আমেরিকার আকাশে একটি বেলুন উড়তে দেখে নড়েচড়ে বসেছে মার্কিন প্রশাসন। রহস্যজনক এই বেলুনটিকে কী করা হবে সেটি নিয়ে এখন চিন্তিত মার্কিন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। খবর বিবিসির। আমেরিকার সন্দেহ করছে এটি ‘চীনা নজরদারি বেলুন’ এবং এর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সম্প্রতি এই বেলুন স্পর্শকাতর স্থাপনার উপর দিয়ে উড়তে দেখা গেছে।

দেশটির প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা নিশ্চিত এই “অনেক বেশি উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া এই নজরদারি বেলুনটি” চীনের। এটি সম্প্রতি পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মন্টানার আকাশে দেখা গেছে।

কিন্তু সামরিক নেতারা একে গুলি করে ভূপাতিত করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন এটির ধ্বংসাবশেষ পড়ার ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ থাকার কারণে। তবে এই নিয়ে এখন পর্যন্ত চীন কোনও মন্তব্য করেনি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানো হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বুধবার মন্টানার বিলিংস শহরের আকাশে দেখা যাওয়ার আগে এটি আলাস্কার অ্যালেউটিয়ান দ্বীপপুঞ্জ এবং কানাডার মধ্য দিয়ে উড়ে এসেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশটির একজন ঊর্ধ্বতন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন,সরকার এফ-২২ এর মতো ফাইটার জেট তৈরি রেখেছে এই ভেবে যে যদি হোয়াইট হাউস এটিকে গুলি করে ভূপাতিত করার নির্দেশ দেয়।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন এবং মার্কিন জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলিসহ শীর্ষ সামরিক নেতারা বুধবার হুমকি মূল্যায়ন করতে বৈঠক করেছেন। সেসময় ফিলিপিন্স সফরে ছিলেন অস্টিন।

উড়ন্ত ধ্বংসাবশেষ মাটিতে থাকা মানুষের জন্য কতটা হুমকির হতে পারে তা চিন্তা করেই “সহিংস কোন সামরিক পদক্ষেপ” না নেওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। মন্টানা কম জনবহুল যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলীয় একটি রাজ্য। এখানকার মালমস্ট্রম বিমান ঘাটিতে দেশের মোট তিনটি পারমানবিক ক্ষেপণাস্ত্র্র ক্ষেত্রের একটি অবস্থিত।

কর্মকর্তারা বলছেন, আপাত নজরদারি যানটি তথ্য সংগ্রহের জন্য স্পর্শকাতর সাইটের উপর দিয়ে উড়ছিল। প্রতিরক্ষা বিষয়ক কর্মকর্তারা অবশ্য বলেছেন যে, মার্কিন গুরুত্বপূর্ণ কোন গোয়েন্দা তথ্য ফাঁস হওয়ার মতো কোন ‘উল্লেখযোগ্যভাবে হুমকির’ আশঙ্কা নেই।

কারণ আমেরিকান কর্মকর্তারা ‘ভালভাবেই জানেন যে এই বেলুনটি কোথায় এবং এটি ঠিক কোথায় যাচ্ছে’।

তিনি আরও বলেন, বাণিজ্যিক বিমান সংস্থাগুলির ব্যবহৃত উচ্চতার তুলনায় বেলুনটি অনেক উপরে থাকায় সেটি বেসামরিক বিমান চলাচলের জন্য কোনও হুমকি বয়ে আনবে না।

প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি ওয়াশিংটন ডিসি এবং বেইজিংয়ে থাকা তাদের দূতাবাসে চীনা কর্মকর্তাদের কাছে উত্থাপন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার পেন্টাগনে সংবাদ সম্মেলনের সময়, কর্মকর্তারা বিমানটির বর্তমান অবস্থান প্রকাশ করতে অসম্মতি জানান। তারা বস্তুটির আকার সহ আরও বিশদ বিবরণ দিতেও অস্বীকার করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন, আকাশের বেশ উঁচুতে হলেও পাইলটরা এই জিনিসটি দেখেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তাই আপনি জানেন, এটা বেশ বড়।

তারা আরও বলেন যে এটি নজিরবিহীন কোনও ঘটনা নয়, তবে কথিত গুপ্তচর বেলুনটি ‘এবার দীর্ঘ সময় ধরে উড়তে দেখা যাচ্ছে।’

মন্টানায় এটি দেখে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা বিভ্রান্ত হয়েছিল। আকাশের উঁচুতে একটি ফ্যাকাশে গোলাকার বস্তুর ছবিও অনেকে পোস্ট করেছে। অন্যরা আবার ওই এলাকায় মার্কিন সামরিক বিমান দেখেছে যারা আসলে বস্তুটিকে পর্যবেক্ষণ করছে।

এক বিবৃতিতে মন্টানার রিপাবলিকান গভর্নর গ্রেগ জিয়ানফোর্ট বলেছেন যে তাকে এই “গভীর উদ্বেগজনক” পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে আরেকটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতার সময় সিআইএ পরিচালক উইলিয়াম বার্নস বেলুনটির বিষয়ে কোন কিছু বলেননি। তবে চীনকে বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামনে “সবচেয়ে বড় ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ” বলে অভিহিত করেছেন।

আগামী সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের চীন সফরের আগে কথিত নজরদারি যানটি উত্তেজনা বাড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথমবারের মতো মার্কিন কোনও মন্ত্রী চীন সফরে যাচ্ছেন। শীর্ষ এই মার্কিন কূটনীতিক বেইজিংয়ে নিরাপত্তা, তাইওয়ান এবং কোভিড-১৯ সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করবেন।
বৃহস্পতিবার ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গেও দেখা করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *