আলোচনায় নতুন নেতৃত্ব না পুরানো কমিটি বহাল! সাত বছর পর আগামীকাল ঝিনাইদহ জেলা আ’লীগের সম্মেলন নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত
স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ
একাধিক গ্রুপে বিভক্ত ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগের ত্রী-বার্ষিক সম্মেলন দীর্ঘ সাত বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামীকাল রোববার ঝিনাইদহ শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাঠে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এদিকে সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। পদ প্রত্যাশী নেতাদের ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে গোটা ঝিনাইদহ শহর। একই সঙ্গে শহরের প্রবেশ পথেগুলোতে নির্মান করা হয়েছে একাধিক সুদৃশ্য তোরণ। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থীদের পক্ষে স্থাপন করা হয়েছে নির্বাচনী অফিস। বিকাল হলেই সেখানে নেতাকর্মীদের পদাচরনায় মুখরিত হয়ে ওঠে। ফলে শহরের পায়রা চত্বর ও পোষ্ট অফিস মোড় লোকে লোকারন্য হয়ে যায়। ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনকে ঘিরে বড় ধরণের শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। তৃণমুলেও এমন বার্তা পাঠানো হয়েছে। সম্মেলনে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটানো হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এদিকে সম্মেলনের দিনক্ষন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসুক প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন কেউ আসছেন নাকি পুরানো নেতৃত্ব আবার ফিরে পাবে দলটি। তবে এমন জল্পনা কল্পনার মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদ পদে একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। অনেকেই বলছেন নতুন নেতৃত্ব আসুক। কারণ ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ তিন বছরের জন্য ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। এরপর দীর্ঘ ৭ বছর অতিক্রান্ত হলেও কোনো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। এরমধ্যে দলটি নানা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন নির্বাচনে নেতারা পাল্টাপাল্টি অবস্থানে লিপ্ত হয়। ফলে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও জেলা পিরষদ নির্বাচনে একাধিক নৌকার প্রার্থীর ভরাডুবি ঘটে। আব্দুল হাই ও সাইদুল করিম মিন্টুর নেতৃত্বাধীন জেলা কমিটি এসব কোন্দল ও দলাদলি নিরসনে তেমন ভুমিকা রাখতে পারেনি বলে তৃণমুলের কর্মীরা অভিযোগ করেন। ফলে জেলা আওয়ামীলীগের নতুন নেতৃত্ব এখন সময়ের দাবীতে পরণিত হয়েছে এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। তবে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগের একক নেতা হিসেবে দলীয় কর্মসুচি পালনে এগিয়ে আছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু। তিনি এবারো সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। নতুন নেতৃত্ব আসলে দলে আরো বিবক্তির রেখা স্পষ্ট হতে পারে। পাড়ায় পাড়ায় একাধিক ভাই ভাই লীগ জন্ম হতে পারে। যেমন এখন পাড়া মহল্লায় হাই গ্রুপ, মিন্টু গ্রুপ, অপু গ্রুপ, সমি গ্রুপ, বাসের গ্রুপ, জীবন গ্রুপ, আজিজ গ্রুপ, রশিদ গ্রুপ ও জন গ্রুপসহ একাধিক ভাই ভাই লীগ গড়ে উঠেছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, সভাপতি পদে আব্দুল হাই এমপি বয়োবৃদ্ধ হলেও তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয়। দলে সবাই তাকে সম্মান ও মান্য করে চলেন। অনেকে আবার তাকেই সভাপতি হিসেবে চাচ্ছেন। সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম অপু ক্লিন ইমেজের প্রার্থী হিসেবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুটি পদেই প্রতিদ্বন্দিতা করতে পারেন। এমপি থাকা অবস্থায় তিনি কোন দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন না। তার পিতা এবিএম গোলাম মজিদ ছিলেন পাকিস্থান গনপরিষদের সদস্য। জেলা আওয়ামীলীগে দলটির বিরাট অবদান রয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈয়ব আলী জোয়ারদার ছাত্রলীগের সাবেক ডাকসাইটে নেতা। গনতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে তিনি ছিলেন প্রথম সারির সহযোদ্ধা। তিনি এবার সভাপতি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। শৈলকুপার জোয়ারদার পরিবারের একটি প্রভাব রয়েছে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগে। তিনিও ক্লিন ইমেজের প্রার্থী বলে নেতার্মীরা মনে করেন। এছাড়া সভাপতি পদে দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা উকিল বারের একাধিকবার নির্বাচিত সভাপতি এ্যাডঃ আজিজুর রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে। দলের মধ্যে তারও প্রভাব রয়েছে। তিনি সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় জামায়াত শিবিরের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। সভাপতি পদে অধ্যাপক আবেদ আলী ও ঝিনাইদহ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাডঃ আব্দুর রশিদের নামও শোনা যাচ্ছে। এদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে সাইদুল করিম মিন্টু ছাড়াও কনক কান্তি দাস, আনোয়ারুল আজিম আনার এমপি, আক্কাচ আলী, অশোক ধরসহ একাধিক নেতার নাম আলোচনায় উঠে এসেছে। জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি শেষের পথে। নেতাকর্মীরা এখন উজ্জীবিত। কেন্দ্রীয় নেতারা আগামীকাল ১৩ নভেম্বর সফল ভাবে জেলা নেতৃত্ব উপহার দিবেন এটাই প্রত্যাশা করি। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক অশোক ধর বলেন, দীর্ঘদিনের এই রাজনৈতিক পরিক্রমায় জেলার প্রত্যেক নেতাকর্মীর সঙ্গে আমার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। আশা করছি সম্মেলনে নতৃন কিছু হবে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু বলেন, স্মরণকালের সবচেয়ে সফল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা আওয়ামী লীগ আরও ঐক্যবদ্ধ হবে। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অতীতেও দলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রেখে অপরাজনীতি প্রতিহত করেছি। সামনেও দিনেও তা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, দলকে আরও সুসংগঠিত করে আগামী দিনে জামায়াত বিএনপির অগ্নি সন্ত্রাস ও জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতি নসাৎ করা হবে।
Build your empire and crush your enemies in real-time strategy! Lucky Cola