ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানো নিয়ে জার্মানি-পোল্যান্ড দ্বন্দ্ব
পোল্যান্ড ইউক্রেনের হাতে সোভিয়েত আমলের ট্যাংক তুলে দিলে জার্মানি সেই শূন্যস্থান পূরণের অঙ্গীকার করেছে। পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আনজেই দুদা প্রতিশ্রুতিভঙ্গের অভিযোগ করায় কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে।
ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশ কিয়েভের পাশে দাঁড়িয়েছে। দ্রুত দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে ইউক্রেনকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে চলেছে অনেক দেশ। তুলনামূলকভাবে কিছুটা দেরিতে হলেও জার্মানিও বাস্তবে বিপুল সহায়তা দিয়ে চলেছে। কিন্তু প্রায়ই অঙ্গীকার ও বাস্তব পদক্ষেপের মধ্যে বিস্তর ফারাকের কারণে জার্মান সরকার ঘরে-বাইরে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ছে।
কিয়েভ সরকার বার বার জানাচ্ছে, যে কাগজেকলমে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিলেও জার্মানি বাস্তবে অযথা বিলম্ব করছে। ফলে যুদ্ধক্ষেত্রে জরুরি অস্ত্রের অভাবে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সমস্যা হচ্ছে। এমনকি জার্মানির সদিচ্ছা নিয়েও ইউক্রেনের রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে।
এবার, পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট জার্মানির বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতিভঙ্গের অভিযোগ এনেছেন। পোল্যান্ডসহ পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশের সোভিয়েত আমলে তৈরি যে সব সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে, সেগুলি দ্রুত ইউক্রেনে পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছিল জার্মানি। শূন্যস্থান পূরণ করতে জার্মানিতে তৈরি সামরিক সরঞ্জাম হস্তান্তর করার কথা।
পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের দাবি, জার্মানি মোটেই পোল্যান্ডকে ট্যাংক সরবরাহের সেই প্রতিশ্রুতি পালন করছে না, যা গভীর হতাশার কারণ হয়ে উঠছে৷ দুদা বলেন, জার্মানির আশ্বাসের ভিত্তিতে পোল্যান্ড এপ্রিল মাসেই ইউক্রেনে অনেকগুলি ‘টি-৭২’ ট্যাংক পাঠিয়েছে।
এমন অভিযোগের মুখে কূটনৈতিক পথে বিষয়টি নিয়ে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ কাটানোর উদ্যোগ নিচ্ছে জার্মানি। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক ও পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সবিগনিয়েফ রাউ মঙ্গলবার (২৪ মে) বার্লিনে এক বৈঠকে এই সমস্যা সমাধানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
বেয়ারবক বলেন, জার্মানির পক্ষে সব সময়ে চটজলদি ভারি অস্ত্র সরবরাহ সম্ভব নয়৷ অনেক ক্ষেত্রে সেগুলির মেরামতির প্রয়োজন হয় বা না থাকলে নতুন করে অর্ডার দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে ধারাবাহিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভুল বোঝাবুঝি এড়ানোর প্রস্তাব দেন তিনি। রাউ বলেন, আসলে খুঁটিনাটি বিষয়গুলির মধ্যেই এমন দ্বন্দ্বের অবকাশ রয়েছে। তবে সমস্যা মেটানোর জন্য সদিচ্ছার অভাব নেই। তার মতে, জার্মানি ও পোল্যান্ডের জন্য দুঃখজনক হলেও ইউক্রেন ও ইউরোপের পূর্বাংশের জরুরি পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রয়োজন মেটানো সবসময়ে সম্ভব হচ্ছে না।
জার্মানির ‘ডেয়ার স্পিগেল’ পত্রিকার সূত্র অনুযায়ী পোল্যান্ড জার্মানির কাছে সর্বাধুনিক লেপার্ড ট্যাংক দাবি করেছে বলেই বিলম্ব হচ্ছে। কারণ খোদ জার্মান সেনাবাহিনীর হাতেই সেই মডেলের যথেষ্ট ট্যাংক নেই।
পোল্যান্ডের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে মনোমালিন্য সত্ত্বেও চেক প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে জার্মানির বোঝাপড়ায় এখনো কোনো সমস্যা দেখা দেয় নি। গত সপ্তাহে চেক সরকার জানিয়েছে, যে ইউক্রেনকে ‘টি-৭২’ ট্যাংক পাঠানোর পর জার্মানি ১৫টি ‘লেপার্ড ২ এ-ফোর সরবরাহ করেছে।