ইকো ফ্রেন্ডলি ফ্যাশন বাঁচাবে পরিবেশ 

Share Now..

পুরো পৃথিবী এখন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে চিন্তিত। রাষ্ট্রীয় নীতিমালা থেকে শুরু করে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এখন ইকো ফ্রেন্ডলি ব্যবস্থাপনার ব্যবহার বাড়ছে। ইকো ফ্রেন্ডলি পোশাকও সম্প্রতি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ইকো ফ্রেন্ডলি এই পোশাককে এখন ফাস্ট ফ্যাশন বলা হয়। এই ফাস্ট ফ্যাশন বিশাল এবং দ্রুত বর্ধনশীল শিল্প হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

আমরা জানি, পোশাক তৈরি নানা পর্যায়ে বর্জ্য তৈরি হয় এবং এই বর্জ্যগুলো বন্যপ্রাণীর ক্ষতি করে। এসব বর্জ্য জমির ক্ষতি করে। পাশাপাশি মাটি ও পানিকে দূষিত করে ফেলে। ফাস্ট ফ্যাশন এখন জলবায়ু সংকটের একটি বড় সমস্যা। বিশ্বব্যাপী কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের ১০ শতাংশ এর জন্য দায়ী। পরিবেশকে বাঁচাতে তাই টেকসই বা ইকো ফ্রেন্ডলি ফ্যাশন অনুশীলনের বিকল্প নেই। কিন্তু সেটা কিভাবে করা যায়?

টেকসই উপকরণের ব্যবহার
ফ্যাশনের পরিবেশগত প্রভাব হ্রাস করার সবচেয়ে কার্যকর উপায়গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে টেকসই উপকরণ নির্বাচন করা। ক্ষতিকারক কীটনাশক ছাড়া জন্মানো জৈব তুলা পরিবেশবান্ধব উপকরণ হতে পারে। শণ, বাঁশ, পাটের মতো উপকরণ বেছে নিতে পারেন ফ্যাশন অনুষঙ্গ ও পোশাকের জন্য। পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিক থেকে তৈরি কাপড় যেমন পলিয়েস্টার এবং নাইলন, বর্জ্য কমাতে সাহায্য করে। এখন চল বেড়েছে হ্যান্ডলুমের- পোশাকে হ্যান্ডলুমের চাহিদা এখন তুঙ্গে। কারণ খাঁটি দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি হয় এই হ্যান্ডলুমের পোশাক। তাঁতঘরে তৈরি হচ্ছে সুতো। ব্যবহার করা হচ্ছে প্রাকৃতিক রং। সেই সঙ্গে এই ধরণের পোশাক কাচা-ধোওয়া খুব সুবিধাজনক। এমনকি এখান থেকে দূষণ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে না। এই সব কাপড় কিন্তু বায়োডিগ্রেডেবল।

অনেক বেশি করে ব্যবহার করা হচ্ছে ভেজিটেবল ডাই-ভেজিটেবল ডাই ইদানিং খুব জনপ্রিয়। কোনও রাসায়নিকের ব্যবহার ছাড়াই প্রাকৃতিক ভাবে রং তৈরি করা হচ্ছে। আর সেই রঙে রাঙানো হচ্ছে পোশাক। এই ভাবে রং তৈরি করলে তা পরিবেশের জন্য ভালো তেমনই কিন্তু পোশাকও দীর্ঘদিন ভালো থাকে। তবে সঠিক ভাবে তার সংরক্ষণ প্রয়োজন।

কমে আসছে সিন্থেটিকের ব্যবহার
সিন্থেটিক কাপড় কিংবা রঙের ব্যবহার আগের থেকে এখন অনেকটাই কমেছে। বরং সুতি, লিনেন, সিল্ক এসব অনেক বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। খাঁটি লিনেন কাপড় তৈরি হয় তিসি থেকে। আর এই শস্যের ফলনে তেমন রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না। তাই প্রকৃতিও থাকে নিরাপদে।

মিনিমালিজম ও মননশীল খরচ অনুশীলন
আমরা অনেকেই এক পোশাক একবারের বেশি পরতে চাই না। প্রকৃতির জন্য মারাত্মক হুমকি এই অভ্যাস। অতিরিক্ত খরচ এবং অপচয় এড়াতে এক পোশাক অনেকবার ব্যবহার করুন। কেনার আগে পোশাক বা ফ্যাশন অনুষঙ্গওটি সত্যিই প্রয়োজন কিনা তা বিবেচনা করুন।

মেরামত, পুনরায় ব্যবহার ও আপসাইকেল
মেরামত এবং পুনঃব্যবহারের মাধ্যমে পোশাকের আয়ু বাড়ানো বর্জ্য কমানোর একটি শক্তিশালী উপায়। সেলাইয়ের বোতাম, মেন্ডিং টিয়ার এবং হেমিং এর মতো সহজ মেরামত পোশাকগুলোকে অনেক দিন পর্যন্ত ব্যবহার উপযোগী রাখে। আপসাইক্লিং বা সৃজনশীলভাবে পুরানো জামাকাপড়কে নতুন আইটেমে রূপান্তর করা আরেকটি উদ্ভাবনী পদ্ধতি। শুধু তাই নয়, পোশাক ধোওয়ার ক্ষেত্রেও কিন্তু সচেতন হতে হবে- জামাকাপড় কাচতে এখন সব বাড়িতেই ভরসা ওয়াশিং মেশিন। পুরনো পোশাক ফেলে না দিয়ে রিমডেলিং করতে হবে। ছেঁড়া থাকলে নিজের মতো সেলাই চালিয়ে কিংবা পেন্ট করে অন্যরকম লুক দেওয়া যেতে পারে। কীভাবে পুরনো পোশাককে একদম অন্যরকম ভাবে লুক পরিবর্তন করা যায় এই সংক্রান্ত অনেক রকম ভিডিও পাওয়া যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়।

জামা কেনায় মিতব্যয়ীতার পরিচয় দিন 
জামা কাপড় পরিমাণে কম কিনুন। অধিক কিনে নষ্ট করবেন না। এমন কিছু কিনুন যা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনার অতিরিক্ত পোশাক কাউকে দিয়ে দেবেন বলে ভাবছেন। কিন্তু আপনার এই অতিরিক্ত পোশাক নেওয়ার মতো লোকজন কিন্তু এখন অনেকটাই কমে গিয়েছে।

ইকো ফ্রেন্ডলি পোশাকের জন্য সবাইকে উৎসাহ দিতে হবে। এব্যাপারে বিভিন্ন ব্র্যান্ড যাতে এগিয়ে আসে সেইদিকে নজর দেওয়া দরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *