ইসির নিবন্ধন পেতে যেসব শর্ত পূরণ করতে হবে এনসিপিকে
দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনার মধ্য দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের নবগঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি-এনসিপি) যাত্রা শুরু হয়েছে। তবে দলটি এখনো নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেনি।
রাজনৈতিক দল হিসেবে ইসির নিবন্ধন পেতে নতুন দলটিকে বেশ কিছু নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে। নিবন্ধন সংক্রান্ত ধারা-উপধারাগুলো গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) রয়েছে।
ইসি জানায়, আরপিওর ধারা ৯০-এ নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন পাওয়া এবং নিবন্ধন বাতিলের বিধান উল্লেখ করা রয়েছে। নিবন্ধনের জন্য এনসিপিকে ইসিতে দরখাস্ত দাখিল করতে হবে। নিবন্ধনের জন্য দলের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের পদাধিকারীর স্বাক্ষরে তফসিলের ফরম কমিশন বরাবর দাখিল করতে হবে। ইসিতে নিবন্ধন দাখিলের সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হবে।
পাঁচ হাজার টাকা নিবন্ধন ফি ইসি সচিব বরাবর জমা দিতে হবে। এই ফি অ-ফেরতযোগ্য। পাঁচ হাজার টাকা সচিবের অনুকূলে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। বিধি ৪ এ উল্লিখিত দরখাস্তের সঙ্গে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলকে সাধারণ সম্পাদকের সত্যায়িত দলিলাদি সংযুক্ত করতে হবে। প্রয়োজনীয় দলিলাদি হিসেবে দলের গঠনতন্ত্র, দলের নির্বাচনী ইশতেহার (যদি থাকে), দলের বিধিমালা (যদি থাকে), দলের লোগো এবং পতাকার ছবি, দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি বা সমমানের কমিটির সব সদস্যের পদবীসহ নামের তালিকা, দলের নামে রক্ষিত ব্যাংক-অ্যাকাউন্ট নম্বর ও ব্যাংকের নাম এবং উক্ত অ্যাকাউন্টের সর্বশেষ হিসাব, দলের তহবিলের উৎসের বিবরণ ইসিতে জমা দিতে হবে।
দলের নিবন্ধনের দরখাস্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অনুকূলে প্রদত্ত ক্ষমতাপত্র, নিবন্ধন ফি বাবদ ট্রেজারী চালানের কপি জমা দিতে হবে।
দলীয় প্রতীক নিয়ে অন্তত একটি আসনে জয়ী হওয়ার যোগ্যতা সংক্রান্ত সমর্থন দলিল জমা দিতে হবে। নির্বাচন অংশ নিতে ইচ্ছুক কোনো আসনে মোট ভোটার সংখ্যার শতকরা ৫ ভাগের ভোট/সমর্থন লাভের যোগ্যতার প্রমাণ লাগবে। দলের একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় দপ্তর থাকতে হবে। এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা দপ্তর এবং ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন থানায় কার্যকর দপ্তর এবং প্রতি উপজেলায় বা থানায় ২০০ ভোটার সদস্য হিসেবে দলের তালিকাভুক্তি বা তাদের সমর্থন থাকতে হবে।
আইন অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে হলে নির্বাচন কমিশনে ওই রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন থাকা বাধ্যতামূলক। বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪৯টি।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ওই ধারায় ব্যাপক সংশোধনীর প্রস্তাব করেছে। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, এক-দশমাংশ প্রশাসনিক জেলায় এবং পাঁচ শতাংশ উপজেলা বা থানায় দলীয় কার্যালয় থাকলে সেই রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য হবে।
এছাড়া ওই দলের ন্যূনতম পাঁচ হাজার ভোটারের তালিকা থাকতে হবে। অর্থাৎ অন্তত ৭টি জেলা এবং ২৪-২৫টি উপজেলায় দলীয় কার্যালয় থাকলেই দলটি নিবন্ধন পাওয়ার জন্য উপযুক্ত বিবেচিত হবে।
বিদ্যমান আইনে অন্তত ২১ জেলা এবং ১০০ উপজেলায় দলীয় কার্যালয় থাকার বিধান রয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে সারাদেশে সব মিলিয়ে পাঁচ হাজার ভোটার নিবন্ধিত থাকার কথা বলা হয়েছে। পক্ষান্তরে বিদ্যমান আইনে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রতিটি কার্যালয়ে ন্যূনতম ২০০ ভোটার থাকা বাধ্যতামূলক।
আরপিওর ধারা ৯০(খ)-এ প্রস্তাবিত সংশোধনীতে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নিয়মিত কাউন্সিল করা এবং কাউন্সিলের প্রতিবেদন ৩০ দিনের মধ্যে ইসিতে জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ের কমিটির সদস্য ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করা এবং তাদের নাম ১০ দিনের মধ্যে ইসিকে জানানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের অধীনে গুরুতর মানবাধিকারের (বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, অমানবিক নির্যাতন, সাংবাদিক বা মানবাধিকারকর্মীদের ওপর হামলা এবং অর্থ পাচার) মামলায় কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত বা অভিযোগ গঠিত হলে তিনি দলের কমিটি বা সাধারণ সদস্য হিসাবে থাকতে পারবেন না। কোনো রাজনৈতিক দল এই বিধান অমান্য করলে ওই দলের নিবন্ধন বাতিল করতে ৯০(জ) উপধারায় বিধান যুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছে।