ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের মশাল গার্ল সানজিদা
১২ বছর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কলিঙ্গ সুপার কাপে শাপমুক্তি হলো ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের। অবশেষে সুপার কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইস্ট বেঙ্গল ক্লাব। রবিবার রাতে ভুবনেশ্বরে কালিঙ্গা স্টেডিয়ামে শ্বাসরুদ্ধকর ১২০ মিনিটের ফাইনালে ইস্ট বেঙ্গল ক্লাব ৩-২ গোলে হারিয়েছে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ওড়িশা এফসিকে। ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবে উৎসবের আমেজ এখন। ভুবনেশ্বর থেকে গতকাল বিকালেই কলকাতায় বিমানবন্দরে ট্রফি নিয়ে হাজির হওয়ার আগেই সেখানে লাল হলুদের সমর্থকরা সংবর্ধনা দিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ২০১২ সালে শেষ শিলিগুড়িতে ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল ক্লাব। এত বছর পর আবার ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের ঘরে ট্রফি এসেছে।
রবিবারের ফাইনাল ম্যাচটি মোবাইল ফোনে দেখেছেন ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের জার্সি গায়ে খেলতে যাওয়া বাংলাদেশে নারী তারকা ফুটবলার সানজিদা আক্তার। ইস্ট বেঙ্গল ক্লাব চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় সানজিদার কদর যেন আরও বেড়ে গেছে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরই সানজিদাকে ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের নারী দলের কর্তারা বলেছেন, ‘তুমি তো হে আমাদের জন্য অনেক লাকি। ভাগ্য বয়ে এনেছ। তুমিও এসেছ আমাদের ক্লাবও অনেক দিন পর ট্রফি জয় করেছে। সানজিদা বলেন, ‘আমি নাকি লাকি চাঁন। দীপন্তন আংকেল, ইন্দ্রানী দিদিরা দুষ্টামি করে আমাকে বলে আমি আসার পরই এত দিনের অপেক্ষা শেষ হয়েছে।’
ইমামি ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবে উত্সব হবে। সবখানে সানজিদাকে নিয়ে যাওয়া হবে। তার আগে সানজিদা নিজের খেলায় মন দিতে চান। গত চার-পাঁচ দিন ধরে ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের মাঠে অনুশীলন করেছেন। ক্লাবে গিয়ে মুগ্ধ। চোখ যেন ছানাবড়া। একটা ক্লাব এমন হতে পারে তা কল্পনাও করতে পারেন না সানজিদা। ক্লাব আঙিনায় নিজেদের মাঠ, গ্যালারি, ফ্লাড লাইট। ‘শুধু তাই নয়, ক্যান্টিন আছে এই ক্লাবে। আল্লাহ। আমাদের একটা ক্লাব যদি এই রকম হইত। আমি অবাক হয়ে গিয়েছি ক্লাবের ভেতরে মিউজিয়াম দেখে। ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবে যাদের অবদান আছে তাদের দারুণভাবে সাজিয়ে রেখেছে। ফুটবলের অতীত ঐতিহ্য সযত্নে তুলে রেখেছেন তারা। ক্লাবেরই একজন আমাকে ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন। সেখানেই দেখলাম আমাদের দেশের ফুটবলারদের ছবি। খুবই ভালো লেগেছে। ছবির সঙ্গে ছবি তুললাম—বললেন সানজিদা।
সানজিদা বলেন, ‘লাইব্রেরি দেখেও অবাক হয়ে গিয়েছি। ফুটবল ক্লাবে লাইব্রেরি থাকে। অনেক দেশের খেলোয়াড়দের নিয়ে লেখা বই রয়েছে। পত্রিকা ম্যাগাজিন আছে। বই পড়ার ব্যবস্থা আছে সেখানে।’ আফসোস করে সানজিদা বললেন, ‘জাদুঘর দেখলাম, লাইব্রেরি দেখলাম। অভিজ্ঞতা হইল। অবশ্যই আমাদের দেশের ক্লাবেও এসব থাকা উচিত ছিল। আমি অবাক হই, আমাদের দেশের ক্লাবে একটা ক্যান্টিন নাই। ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবে সমর্থকরা আসে ক্লাবে বসে কথা বলে, ক্যান্টিনে খাবার খায়।’
ইমামি ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের কোচ দিপঙ্কর বিশ্বাস। প্রথম দিনেই পরিচিত হয়ে নানা কথা তুলেছিলেন সানজিদার সঙ্গে। বাড়ি কোথায়, বাড়িতে আর কে কে আছে, কবে থেকে খেলছ, বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে কথা, সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথাও হয়েছে কোচের সঙ্গে।’ সানজিদাকে হোটেলে রাখা হয়েছে। একা একটা রুম দেওয়া হলেও তিন দিন পরই সানজিদা জানিয়ে দিয়েছেন এক রুমে একা ভালো লাগছে না। আরও একজন নারী ফুটবলারকে সঙ্গী হিসেবে দেওয়া হয়। হোটেলেই খাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যখন যা প্রয়োজন তা হোটেলে চাইলেই পাওয়া যায়। সানজিদা জানালেন, ‘আমার চলাফেরার জন্য একটা আলাদা করে প্রাইভেট গাড়ি দেওয়া হয়েছে। আমি গাড়িতে করে অনুশীলনে যাই আবার ফিরে আসি গাড়িতে। এরচেয়ে বেশি ব্যবহার করি না। একজন বিদেশি ফুটবলারকে যতটুকু সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার, সবই আমি পাচ্ছি।’
সানজিদাকে নিয়ে কলকাতার সংবাদ মাধ্যম প্রচুর আগ্রহ দেখিয়েছে। কলকাতার শীর্ষ গণমাধ্যম তাকে নিয়ে একাধিক স্টোরি করছে। ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের প্রথম বিদেশি ফুটবলার, ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন বাংলাদেশের সানজিদা। দেশ-বিদেশের এত প্রচারে বিরক্ত ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের মশাল গার্ল সানজিদা। কাল পরিষ্কার ভাষায় বলে দিলেন, ‘ভাইয়া এইসব লেখালেখি বাদ দেন। আমারে খেলতে দেন। কোনো নিউজ করার দরকার নাই। আগে খেলি পরে লেইখেন।’