একবছরে ১১১৭ শিশু ধর্ষণের শিকার
২০২১ সালে সারাদেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১ হাজার ১১৭ শিশু। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে কন্যাশিশু ধর্ষণের হার বেড়েছে শতকরা ৭৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। রবিবার (২৭ মার্চ) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম।
সংগঠনের প্রতিবেদন তুলে ধরে সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি জানান, ২০২১ সালে ধর্ষণের শিকার হওয়া এসব শিশুর মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার হয় ৭২৩ জন। দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ১৫৫ জন, প্রতিবন্ধী শিশু ১০০ জন ও অন্যান্য ১৩৯ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়। ২০২০ সালে ধর্ষণের মোট সংখ্যা ছিল ৬২৬ জন। অধিকাংশ শিশুই নির্যাতনের শিকার হয়েছে রাস্তায়, নিজের বাসায়, নিকটতম আত্মীয় পরিজন ও গৃহকর্তার মাধ্যমে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২১ সালে মোট ১১৬ জন শিশু যৌনহয়রানি নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ২০২০ সালেরর তথ্য মোতাবেক, যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিল ১০৪ জন। গত বছরের তুলনায় এ যৌন হয়রানি বৃদ্ধির হার প্রায় ১২ শতাংশ। এছাড়া ২০২১ সালে এসিডের আক্রমণের শিকার হয়েছে ১০ জন কন্যাশিশু। পারিবারিক বিবাদ, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হওয়া, সম্পত্তি সংক্রান্ত আক্রোশ, ইত্যাদি কারণে এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়। পাশাপাশি অপহরণ ও পাচারের শিকার হয়েছে ২০৬ জন কন্যাশিশু। এর মধ্যে অপহরণের শিকার হয়েছে ১৯৭ জন। ২০২০ সালের আগস্ট থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মোট বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে ২ হাজার ৮৬৮ জন কন্যাশিশু। গড়ে প্রতিটি ইউনিয়নে ২১ জন কন্যাশিশু বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ১৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে ২০১৯ সালে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছিল ২ হাজার ৫০৩ জন কন্যাশিশু। ২০২১ সালে যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয় ১৭ জন কন্যাশিশু। এর মধ্যে যৌতুক দিতে না পারায় নয়জনকে হত্যা করা হয়েছে।
এছাড়াও ২০২১ সালে গৃহশ্রমিক নির্যাতনে ৩৫টি ঘটনার খবর জানা গেছে। এর মধ্যে ১৮ জনকে শারীরিক নির্যাতন, ৫ জনকে নির্যাতনের পর হত্যা এবং ১২ জন যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ২৪২ জন কন্যাশিশু আত্মহত্যা করেছে। ২৭২ জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং ৩৫ জন কন্যাশিশুকে বিভিন্ন এলাকায় ফেলে রেখে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার, ব্র্যাকের জিজেডি অ্যান্ড পিভাউ পরিচালক নবনীতা চৌধুরী, গুডনেইবারস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাঈনুদ্দিন মাইনুল এবং কোয়ালিটি এসুরেন্স অ্যান্ড কম্প্লেইন্স-এডুকো বাংলাদেশের হেড অব এডুকেশন গোলাম কিবরিয়া।
এ সময় সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের কাছে ১০ দফা সুপারিশ জানায় ফোরামটি। এগুলো- শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার সব ঘটনাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে; উত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন রোধে সর্বস্তরের জন্য ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’ নামে একটি আইন জরুরি ভিত্তিতে প্রণয়ন করতে হবে; ধর্ষণ, ধর্ষণচেষ্টা, মামলা ও ধর্ষণ সংশ্লিষ্ট সব ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে, ঘটনার শিকার কন্যাশিশু ও নারীর পরিবর্তে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে ও আইনের আওতায় আনতে হবে; নারী ও শিশুকে অপদস্থ না করে অভিযুক্তের কাছে প্রমাণ চাইতে হবে যে, সে অপরাধী না। এ সম্পর্কিত প্রচলিত আইনের বিধান সংশোধন করতে হবে; সব ধরনের পর্নোগ্রাফি সাইট বন্ধসহ পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে; কন্যাশিশু নির্যাতনকারীদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করতে হবে। এছাড়া শিশু সুরক্ষায় শিশুদের জন্য একটি পৃথক অধিদপ্তর গঠন করতে হবে; করোনাকালে আর্থিক সংকটের কারণে অভিভাবকরা নাবালক কন্যাদের বিয়ে দিচ্ছে, এর ফলে বাল্যবিয়ে বহুগুণে বেড়ে গেছে।
Epic battles, insane graphics, and endless fun Lucky Cola