এক গ্রামে ৭৮০ ভোটারের মধ্যে ৪০০ জনের নামে মামলা ৩৫ মামলারই বাদি এক পরিবার
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
গ্রামে মোট ভোটার ৭৮০। জনসংখ্যা প্রায় ১২০০। বেশির ভাগ মানুষের পেশা কৃষি। কাকডাকা ভোরে তারা নিজ নিজ কাজে বেরিয়ে যান। আবার দিন শেষে ঘরে ফেরেন। সন্ধ্যা রাতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শন্তিতে ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু সে শান্তি যেন গ্রামবাসির কাছে এখন সোনার হরিণ। একটি পরিবারের জন্য সে শান্তি গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছে। একটি পরিবার বছরের পর বছর গ্রামের প্রায় ৩০০ নারী-পুরুষের নামে মামলা দিয়েছেন। এ পর্যন্ত অভিযুক্ত ওই পরিাবার ৩৫টি মামলায় গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে। গ্রামটির নাম বারফা। ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার ইউনিয়নের নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। ওই গ্রামের গ্রামের মোঃ শামসুর রহমান ও মোস্তফা কামাল সুমন নামের দুই ভাই এসব মামলা দিয়েছেন। তার আগে তাদের বাবা আফছার বিশ্বাস গ্রামের সহজ সরল মানুষদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, তার সুদে টাকার ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে সর্বশান্ত হয়েছে একাধিক পরিবার। এদিকে কালীগঞ্জ থানার পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত মামলাবাজ ওই পরিবার মামলা দিতে গেলে নেওয়া যাবে না বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রতারক এই পরিবারের হাত থেকে রেহাই পেতে সোমবার সকালে সাধারন মানুষ সংবাদ সম্মেলন করে। এসময় অতিষ্ঠ গ্রামের নারী-পুরুষ প্রতিবাদে জুতা ও ঝাড়ু মিছিলও করে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আশরাফুল ইসলাম খোকন নামের এক গ্রামবাসি বলেন, প্রকৃতপক্ষে শামছুর রহমান এলাকায় একজন চিহ্নিত ঠান্ডা মাথার প্রতারক ও মামলাবাজ। তার প্রতারণার শিকার গ্রামের অধিকাংশ মানুষ। সম্প্রতি সরকারী রাস্তার জায়গায় সে অবৈধভাবে ঘর করে লোক চলাচলের অসিুবিধা সৃষ্টি করে। ইতোমধ্যে গ্রামবাসী বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যানের জানিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, আপনারা খোঁজ নিলে জানতে পারবেন যে, প্রতারক শামছুর রহমানের বাবা কোন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না তারপর তারা মুক্তিযুদ্ধা বলে পরিচয় দেন। যা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা, ইউনিয়ন ও থানা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে জানলে বুঝবেন যে সে কতবড় প্রতারক। ভুয়া তথ্য দিয়ে তাদেরকেও যেমন হয়রানী করছে। তেমনি জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান বীরমুক্তিযোদ্ধাদেরও ভাবমুর্তি নষ্ট করেছে।
জনাকির্ণ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তার মামলাবাজির সিকার গ্রামের হতদরিদ্র আব্দুল আজিজ বিশ্বাসও, হযরত মন্ডল, তার আপন চাচাতো ভাই নজরুল বিশ্বাসের নামে ৪/৫ টি, ইকবাল মন্ডল, নজরুল মন্ডলসহ আরও অনেক নিরীহ মানুষ।
গ্রামের নিরিহ মানুষ রুবেল হোসেন জানান, আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করি। দিন আনি দিন খায়। আমার বাবা অভাবে পড়ে তার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়েছিল। এই টাকার সুদ দেওয়ার পরও একমাত্র সম্বল ভিটাবাড়ি সহ ১৬ শতক জমি লিখে নেয় শামছুর রহমান পরিবার।
এ ব্যাপারে জানতে শামছুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার ফোন পাওয়া না গেলেও তার ভাই মোস্তফা কামাল সুমন জানান, আমাদের গ্রামে অনেক জমি আছে কিন্তু গ্রামের মানুষ তা দখল করে রাখে। যে কারনে কিছু কিছু মানুষের নামে মামলা দিতে বাধ্য হয়েছি।
কালীগঞ্জ থানার ওসি মাহফুজুর রহমান জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।