এখনই চালু হচ্ছে না রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র

Share Now..

কথা ছিল, চলতি ডিসেম্বরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হচ্ছে। তবে গ্রিড (সঞ্চালন) লাইন প্রস্তুত না হওয়ায় উৎপাদনে যেতে পারছে না বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। সব প্রস্তুতি শেষ করে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যেতে আরও ছয় মাস সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

কথা ছিল, চলতি ডিসেম্বরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হচ্ছে। তবে গ্রিড (সঞ্চালন) লাইন প্রস্তুত না হওয়ায় উৎপাদনে যেতে পারছে না বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। সব প্রস্তুতি শেষ করে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যেতে আরও ছয় মাস সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

প্রকল্প সূত্র জানায়, বছরখানেক আগে চুল্লিসহ মূল অবকাঠামোর নির্মাণ শেষ হয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে পাঁচ দফায় রাশিয়া থেকে জ্বালানির (ইউরেনিয়াম) প্রথম চালান রূপপুরে পৌঁছায়। কিন্তু গ্রিড লাইন প্রস্তুত না হওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছরের মার্চে প্রথম ইউনিটের গ্রিড লাইনের নির্মাণ কাজ শেষ হবে। আর উৎপাদনে যেতে আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে। রূপপুর এনপিপি’র প্রকল্প পরিচালক ড. জাহেদুল হাছান জানান, গ্রিড লাইন রেডি হওয়ার পর উৎপাদনে যাওয়ার আগে প্রয়োজনীয় বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে হবে। সব ধরনের প্রস্তুতি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হলে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক বিভিন্ন পরীক্ষা শেষ করে জ্বালানি লোড করতে দুই মাসের মত সময় প্রয়োজন হবে। এরপর পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যেতে আরও এক মাস। আগামী বছরের মার্চের মধ্যে গ্রিড রেডি হলে থার্ড কোয়ার্টারে অর্থাৎ আগস্টে হয়তো টেস্ট ট্রায়ালে যাওয়া সম্ভব হবে। প্রথম ইউনিট চালুর এক বছর পর অর্থাৎ ২০২৬ সালের শেষ দিকে দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি চালু করা সম্ভব হবে। পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুর রশিদ খান জানান, প্রথম ছয় মাসে কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক ছিল। কিন্তু গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে আন্দোলনের কারণে সারা দেশে অস্থিরতা তৈরি হয়। সেজন্য সঞ্চালন লাইনের নির্মাণকাজে ধীরগতি দেখা দেয়। আর ৫ অগাস্টের পর কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

পাওয়ার গ্রিডের উপ-স্কিম পরিচালক দেলোয়ার হোসেন জানান, ভারত, সিঙ্গাপুর, তুরস্কসহ অন্য দেশের যেসব নাগরিকরা সঞ্চালন লাইন নির্মাণের মূল কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, নিরাপত্তা শঙ্কায় তারা সকলে নিজ নিজ দেশে ফিরে যান। এজন্য পরের তিন মাস গ্রিড লাইনের নির্মাণকাজ পুরোপুরি বন্ধ ছিল।

এমডি আবদুর রশিদ খান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে আসছিলাম। নিরাপত্তা ইস্যু নিশ্চিত হওয়ার পর অক্টোবরের শেষের দিকে তারা আবারও কাজে যোগ দিয়েছে। টানা তিন মাস কোনো কাজ না হওয়ায় আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি। যার ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গ্রিড লাইন পুরোপুরি রেডি করা সম্ভব হয়নি।
 
এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি বাজেটের রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে তৃতীয় প্রজন্মের ভিভিইআর ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম দু’টি ইউনিট রয়েছে। প্রথম ইউনিটটি চালুর লক্ষ্যে রূপপুর-গোপালগঞ্জ রুটে প্রায় দেড়শ’ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্রিড লাইন নির্মাণ করছে পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ। যার মধ্যে প্রায় দুই কিলো মিটার পড়েছে পদ্মা নদীতে। নদীর দু’পাশে স্থলভাগে লাইনের প্রায় ৯৬ শতাংশের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। বাকি অংশের কাজ আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যেই শেষ হবে বলে জানিয়েছেন এমডি আব্দুর রশিদ খান।

এদিকে নদী অংশের কাজ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন রিভার ক্রসিং সঞ্চালন লাইনের দায়িত্ব থাকা উপ-স্কিম পরিচালক দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, নদী অংশে এখনও প্রায় ৪৫ শতাংশ কাজ বাকি। তীব্র স্রোত ও পলিমাটির কারণে কাজ এগিয়ে নিতে বেগ পেতে হচ্ছে। পদ্মার ওপর দিয়ে গ্রিড লাইন নেওয়ার জন্য মূলত চারটি টাওয়ার নির্মাণ হচ্ছে। এরমধ্যে দু’টি নির্মাণ হচ্ছে দুই তীরে। বাকি দু’টো নদীর মাঝে। সার্বিকভাবে নদীর দু’পাশের তীরের টাওয়ারের পাইলিংয়ের কাজ ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। আর নদীর ভেতরে দুই টাওয়ারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৫০ শতাংশ। পুরো নির্মাণ কাজ শেষ করতে আরও অন্তত চার মাস সময় লাগতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *