কমলা হ্যারিসের ৮৫ মিনিট: নারী রাষ্ট্রপ্রধানের দিকে কতদূর এগোলো যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের নারীদের জন্য রাজনীতির মাইলফলক সৃষ্টি হয় দাসপ্রথাবিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই। ১৯১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান পেয়েছেন নারীরা। প্রথম নারী কংগ্রেস সদস্য জিনেট র্যাংকিন থেকে বর্তমান মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস পর্যন্ত সবাই নিজেদের যোগ্যতায় জায়গা করে নিয়েছেন মার্কিন রাজনীতিতে। এদিকে, গত শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) ৮৫ মিনিটের জন্য প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। দেশটির ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট পদে কোনো নারীর দায়িত্ব পালনের ঘটনা এটিই প্রথম। এরপরই আন্তর্জাতি রাজনীতি বিশ্লেষকদের মনে প্রশ্ন উঠেছে, নারী রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনের দিকে কতটুকু এগিয়ে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
১৮৬২ দাসপ্রথাবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের ভোটাধিকারের দাবি ওঠে। এতে নেতৃত্ব দেন এলিজাবেথ ক্যাডি স্ট্যান্টন ও সুজান বি অ্যান্টনি। এর পরপরই নারীরা ভোটাধিকার পান ১৯২০ সালে।
১৯১৬ সালে জিনেট র্যাংকিন প্রথম নারী হিসেবে কংগ্রেস সদস্য নির্বাচিত হন। একজন সমাজ সংস্কারক, নারীকর্মী ও শান্তিরক্ষী। মন্টানা অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধি এই নারী জয়ের পর বলেছিলেন, ‘আমি হয়তো কংগ্রেসের প্রথম নারী সদস্য। তবে আমিই শেষ হবো না।’ তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রবেশের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। পরে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশের বিরুদ্ধে ভোট দেন। তিনিই কংগ্রেসের একমাত্র ব্যক্তি, যিনি উভয় যুদ্ধের বিরুদ্ধে ভোট দেন।
১৯৩৩ সাল। ফ্রান্সিস পারকিন্স প্রেসিডেন্ট ফ্রাংকলিন ডিলানো রুজভেল্টের ক্যাবিনেটে শ্রম বিষয়ক মন্ত্রী হলেন। যুক্তরাষ্ট্রে তিনিই ক্যাবিনেটে অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রথম নারী। নিউ ডিল আইন প্রণয়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারিগর ছিলেন পারকিন্স। এর মধ্যে ছিল ন্যূনতম মজুরির আইনও।
১৯৪০-১৯৭৩ সালে কংগ্রেসের উভয় কক্ষে প্রতিনিধিত্ব করা প্রথম নারী রিপাবলিকান রাজনীতিক মার্গারেট চেজ স্মিথ। চরিত্র নিয়ে সিনেটর জো ম্যাকার্থির আক্রমণের বিরুদ্ধে ‘ডিক্লারেশন অব কনসায়েন্স’ (বিবেকের ঘোষণা) হিসেবে সুপিরিচিত ভাষণের জন্য বিখ্যাত তিনি।
আমেরিকান বিপ্লবের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিনগুলো যে খুব ভালো কেটেছিল, তা বলা যাবে না। অঞ্চলভেদে নানারকম সমস্যা লেগেই থাকতো নবগঠিত দেশটিতে। শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের মূল মাথাব্যথা ছিল কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানরা। ১৯৬৫ সালে ডায়ান ন্যাশ আরও কয়েকজনকে নিয়ে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের ছাত্র শাখার কার্যক্রম শুরু করেন। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে ভোটাধিকারের জন্য প্রচার চালাতে থাকেন তিনি। অহিংস কৌশল অবলম্বন করে ডায়ান ন্যাশ নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কৃষ্ণাঙ্গ নারী ও পুরুষদের ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করান। এভাবে ১৯৬৫ সালের ভোটাধিকার আইন পাসে অবদান রাখেন তিনি।