করোনায় অধিকারবঞ্চিত শিশুরা লেখাপড়া ছেড়ে পথে

Share Now..

রাজধানীর বিজয় সরণি মোড়ে চোখে পড়ে ছোট ছোট শিশুদের। করোনা সংক্রমণের আগে এদের প্রায় সবাই স্কুলে যেত। কিন্তু এখন তাদের লেখাপড়া বন্ধ। সংসারে আয়ের জোগান দিতে ওরা নেমেছে রাজপথে।

এই শিশুদের একজন সামিনা, বয়স ১০ বছর। ফুল হাতে সিগন্যালে দাঁড়ানো। গাড়ির জানালায় খুব মিষ্টি করে বলতে থাকে, ফুল নেবেন? নেন না, কয়ডা টেকা দ্যান, ভাত খামু।

সামিনা চলে যেতেই ওর বয়সি আরেকটি মেয়ে আসে। এর নাম হাফসা। সে জানালো, আগে স্কুলে যেত। কিন্তু এখন ওর বাবার রোজগার কমেছে। তাই ঘরে কিছুটা সাহায্য করতে নেমে গেছে রাস্তায়। ১০ থেকে ১৫ মিনিট সিগন্যালে অপেক্ষা করার সময় সামিনা, হাফসার মতো এমন অনেক শিশুকে দেখা যায়, যাদের গল্প প্রায় অভিন্ন। করোনার অভিঘাতে ওরা স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়েছে, নেমে গেছে কাজে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনা পরিস্থিতিতে শিশুরা তাদের অধিকার হারিয়েছে। শ্রমিক হিসেবে শিশুর সংখ্যা বেড়েছে। মহামারির আগেও দেশে বিভিন্ন সেক্টরে উল্লেখ্যযোগ্য শিশুশ্রমিক থাকলেও তারা সরকারি বা এনজিও পরিচালিত স্কুলে যেত। কিন্তু মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় এবং পরিবারে আর্থিক অনটনের কারণে দরিদ্র এই শিশুরা পুরো সময় কাজে নিয়োজিত হয়েছে। এখন তাদের পক্ষে আর স্কুলে ফিরে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্টের উদ্যোগে ‘কোভিড-১৯-এর প্রভাবে ঢাকায় কর্মরত শ্রমজীবী শিশুদের অবস্থা যাচাই’ শীর্ষক জরিপ থেকে জানা যায়, করোনায় অনেক শিশুর পেশা পরিবর্তন হয়েছে। আগে কাজ করত এমন ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ শিশুর এখন কাজ নেই। আর এমন ৩১ শতাংশের ওপর তাদের পরিবার নির্ভরশীল। এদের মধ্যে ৩২ শতাংশ শিশু মহামারিতে কোনো সরকারি-বেসরকারি সাহায্যও পায়নি।

এমন পরিস্থিতিতে আজ অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ-২০২১’। বাংলাদেশেও দিবসটি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে ‘শিশুর জন্য বিনিয়োগ করি, সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ি’। কোভিড-১৯-এর প্রভাবে বাংলাদেশের দরিদ্র ও হতদরিদ্র পরিবারের শিশুরা স্কুল ছেড়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ফিরে যাচ্ছে। তবে সারা দেশে কত শিশু বর্তমানে স্কুল ছেড়ে কাজে নেমেছে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন নিয়মিত ৩১ হাজার শিশুকে মনিটরিং করে। এর মধ্যে প্রায় ৮ হাজার শিশুকে সংগঠনটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে সরিয়ে স্কুলে নিয়েছিল। কিন্তু প্রায় ৩ হাজার শিশু আবারও স্কুল ছেড়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ফিরে গেছে।

এ ছাড়া কিডসরাইটসের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধে গৃহীত নানা বিধিনিষেধের কারণে বিশ্বে কোটি কোটি শিশু শিক্ষা লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এতে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে। কিডসরাইটসের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মার্ক ডুলেয়ার্ট বলেন, করোনা মহামারি শিশুদের ওপর যে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে, তা আমাদের অনুমান ছাড়িয়ে গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *