করোনায় নিভে গেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ প্রাণ
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, ইবি-
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিভে গেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) পরিবারের ছয় তাজা প্রাণ। এরমধ্যে রয়েছেন বিশ^বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক, এক কর্মকর্তা, এক শিক্ষার্থী ও এক গাড়ি চালক। এছাড়া এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বিশ^বিদ্যালয়ের মোট ৪৫ শিক্ষক।
সর্বশেষ গত ২৬ জুলাই দিবাগত রাত ১ টার দিকে ঢাকার কল্যাণপুর ইবনে সিনা হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন অধ্যাপক আকরাম হোসেন মজুমদার। তিনি বিশ^বিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। গত ১৫ জুলাই সপরিবারে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সেখানে ভর্তি হন। এর মধ্যে তার স্ত্রী একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মাকসুদা আক্তার মুনিয়া ও তার দুই শিশু সন্তান ছিলেন। পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে গত ২৫ জুলাই সকালে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। তবে সকল চেষ্টাকে ব্যর্থ করে ওইদিন রাত ১ টার দিকে পরপারে পাড়ি জমান তিনি। বর্তমানে তার স্ত্রী ও সন্তানরা সুস্থ আছেন।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে সর্বপ্রথম মৃত্যুবরণ করেন বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ও বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাইদুর রহমান। চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর কল্যাণপুরে ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এছাড়া গত ৫ মে দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ আহসান উল্লাহও করোনার ভয়াল থাবায় প্রাণ হারান। ওইদিন রাত সাড়ে ১১ টার সময় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার পথে মারা যান তিনি। ড. আহসান উল্লাহ বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের কৃতি ছাত্র ছিলেন। এছাড়া তিনি মূল্যবান কয়েকটি বইয়ের লেখকসহ একজন ইসলামিক স্কলার ছিলেন।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী শিব্বির আহমেদ। তিনি বিভাগের মাস্টার্স ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। গত ৯ জুলাই ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
এদিকে কর্মকর্তাদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা জামিনুর রহমান দুদু। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদ্দাম হোসেন হলের সহকারী রেজিস্ট্রার ছিলেন। গত ২৯ জুন মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
এছাড়া এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৪ জুলাই (রবিবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন অফিসের চালক গোলাম সরওয়ারের মৃত্যু হয়। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্যমতে, করোনায় মৃতুবরণকারী তিন শিক্ষক ছাড়াও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক রাকিবা ইয়াসমিন, থিওলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মাদ সোলায়মান, অধ্যাপক নাসিম বানু, অধ্যাপক রেজওয়ানুল ইসলাম (সপরিবারে), অধ্যাপক মাহবুবর রহমান, অধ্যাপক তপন কুমার জোদ্দার (সস্ত্রীক), অধ্যাপক রুহুল কে এম সালেহ, অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক মিজানুর রহমান (সস্ত্রীক), অধ্যাপক রেবা মণ্ডল, অধ্যাপক নুরুন নাহার, অধ্যাপক নিলুফা আক্তার বানু (সপরিবারে) সহ মোট ৪৫ শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসাধীন রয়েছেন পাঁচ শিক্ষক। এছাড়া ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আইন বিভাগের অধ্যাপক শাহজাহান মণ্ডল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবী এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ও এর ব্যতিক্রম নয়। করোনাকচুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ছয়জনকে আমরা হারিয়েছি। যার ক্ষতি অপূরনীয়। তাদের চলে যাওয়াতে আমরা ব্যথিত।
তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকেই হাসপাতালের বেডে চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের জন্য প্রার্থনা থাকবে; যাতে করে তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে করোনামুক্ত এক সোনালী সূর্য উদিত হোক। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।