কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গে তাপপ্রবাহের সতর্কতা

Share Now..


ভারতের আবহাওয়া বিজ্ঞান দপ্তর এক সতর্কতা জারি করে জানিয়েছে, কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ জেলাতেই আগামী পাঁচদিন তাপপ্রবাহ চলবে। এই সময়ে বৃষ্টি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।বছরের এইসময়ে একটানা ১৫-১৬ দিন বৃষ্টি না হওয়া বেশ বিরল। এর ফলে কৃষিতেও যেমন প্রভাব পড়বে, তেমনই মানুষকে স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হওয়ার সতর্কবার্তাও দিয়েছে আবহাওয়া বিজ্ঞান দপ্তর। কলকাতার হাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা দুটিতে তাপপ্রবাহ তারা রেকর্ড করেছেন। সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা অবশ্য ছিল পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা বাঁকুড়ায়। আবহাওয়া বিজ্ঞান দপ্তরের পূর্বাঞ্চলীয় উপ মহা নির্দেশক সঞ্জীব ব্যানার্জী জানান, কলকাতাসহ সব জেলার তাপমাত্রাই স্বাভাবিকের চাইতে তিন থেকে পাঁচ ডিগ্রি বেশি ছিল বৃহস্পতিবার। একই পরিস্থিতি চলবে এপ্রিল মাসের ১৭ তারিখ পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে বৃষ্টি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।ব্যানার্জী আরও বলেন, ‘৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা এই অঞ্চলে হয়েই থাকে, তবে সেটা দেখা যায় এপ্রিলের শেষ দিকে। কিন্তু এবারের সেটা এ মাসের শুরু থেকেই দেখা যাচ্ছে। আবার সাধারণত গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বছরের এই সময়ে তিন-চার দিন পরে একটা করে কালবৈশাখী ঝড়সহ বৃষ্টি হয়। এবারে আমরা দেখছি দক্ষিণের বাতাস একদমই নেই, আর উত্তর-পশ্চিমা উত্তপ্ত বাতাস বয়ে চলেছে এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে। এর ফলে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ একদম কম।’

কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গে গরমকালে মানুষের শরীরে ঘাম হয়, যেটা উত্তর বা পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে দেখা যায় না। কিন্তু এবারে কলকাতাতেও শরীর থেকে ঘাম বেরুচ্ছে না, উল্টে জ্বালা ভাব অনুভূত হচ্ছে। বেলা এগারোটা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত জরুরি কাজ ছাড়া রোদে না বের হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কলকাতার হাওয়া অফিস।

আর বাইরে বেরুতে হলে মাথায় হ্যাট জাতীয় টুপি পড়া এবং প্রচুর পরিমাণে পানি পান করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের উদ্দেশ্যে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ফসলের ক্ষেতে বেশি করে জল দিতে হবে আর যদি ফসল কাটার সময় হয়ে আসে, তাহলে একটু আগেই তা কেটে ফেলা যেতে পারে।

আবার গবাদি পশুদেরও বারবার স্নান করিয়ে দেওয়ার কথা বলেছে আবহাওয়া বিজ্ঞান দপ্তর। সকালে মানুষ স্বাভাবিক কাজকর্ম করলেও দুপুরের দিকে রাস্তায় মানুষজন খুব কমই দেখা যাচ্ছে কলকাতা আর জেলা শহরগুলোতে।

কলকাতার এক মিনিবাস অপারেটর সুশান্ত দেবনাথ বলছিলেন, ‘আমাদের তো বাইরেই থাকতে হয় কাজের জন্য। দুপুরে যাত্রী কমে যাচ্ছে, তাই দুটো বাস চলছে আমাদের রুটে। আমরা সবাই চেষ্টা করছি সুযোগ পেলেই একটু গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে জিরিয়ে নিতে। পানি পান করতে হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে।’

আবার পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা রোহিত রথ জানান, রাস্তায় মানুষ দেখা যাচ্ছে মোটামুটি সকাল ছয়টা থেকে বেলা এগারোটা পর্যন্ত। তারপর রাস্তা প্রায় ফাঁকা। ওই সময়ের মধ্যেই কাজকর্ম সেরে সবাই বাড়িতে ঢুকে পড়ছে। আর বাইরে বেরুলেই টুপি বা গামছা দিয়ে মাথা, কান, নাক ঢেকে বের হচ্ছে সবাই। ভিড় হচ্ছে ঠাণ্ডা পানীয়, ডাবের দোকান বা সরবতের দোকানগুলোতে।

প্রচণ্ড গরমে সুস্থ থাকতে চিকিৎসকরা বেশ কিছু পরামর্শ দিচ্ছেন। তারা বলছেন, গরমের জন্য শরীরে কোনো ধরনের অসুবিধা বুঝলেই ডাক্তারের কাছে যেতে। শিশু ও বয়স্কদের জন্য বাড়তি
সাবধানতা অবলম্বন করতে বলছেন তারা।

আমরি হাসপাতালে ইন্টারনাল মেডিসিন ও ক্রিটিকাল কেয়ারের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. শাশ্বতী সিনহা বলেন, ‘নিয়মিত আবহাওয়ার পূর্বাভাসের দিকে নজর রাখুন, সেই অনুযায়ী নিজের কাজ সাজিয়ে নিন। বাইরে বের হতে হলে হাল্কা রঙের ঢিলেঢালা পোশাক পরুন, টুপি অথবা গামছা দিয়ে মাথা ঢেকে রাখতে হবে, সঙ্গে নিতে হবে ছাতাও।’

তিনি আরও বলেন, ‘তৃষ্ণা না পেলও পানি পান করতে হবে, বাইরে বের হলে পানি সঙ্গে রাখুন। হাল্কা খাবার আর ফল, লেবুর সরবত, ফলের রস বা লাচ্ছি খেতে হবে এই সময়ে।’

শিশু আর বয়স্কদের বাড়ির বাইরে না বের হওয়াই ভাল, আর যারা কায়িক শ্রমের কাজ করেন, তাদেরও কিছুক্ষণ করে বিশ্রাম নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
শিশু আর বয়স্কদের বাড়ির বাইরে না বের হওয়াই ভাল, আর যারা কায়িক শ্রমের কাজ করেন, তাদেরও কিছুক্ষণ করে বিশ্রাম নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। খোলা জায়গায় কাজ করেন যারা, যেমন নির্মাণ শ্রমিক, তারাও বিশ্রাম নিয়ে যাতে কাজ করেন, সেই উপদেশ যেমন চিকিৎসকরা দিচ্ছেন, তেমনই দিয়েছে আবহাওয়া বিজ্ঞান দপ্তরও।

One thought on “কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গে তাপপ্রবাহের সতর্কতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *