কেএনএফকে দমনের সিদ্ধান্ত

Share Now..

কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর সঙ্গে সমঝোতার আলোচনা থেকে সরে এসেছে প্রশাসন। কেএনএফকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যায়িত করে তাদের কঠোর হস্তে দমন ঘোষণা দিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটিও একই মত দিয়েছে।

গতকালও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, কুকি চিনের জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও আস্তানা আমরা গুড়িয়ে দিয়েছিলাম। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকলে আজ তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারতো না। তাদের সঙ্গে আলোচনা ছিল সুদূরপ্রসারী একটি গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র। জেলা পরিষদের একজন কর্মকর্তার পিতা ছিল চিহ্নিত স্বীকৃত রাজাকার। বাংলাদেশ থেকে এই ভূখণ্ডকে আলাদা করতে আলোচনার আড়ালে কুকি চিনকে শক্তিশালী করা হয়েছে। জেলা পরিষদের ওই কর্মকর্তার ব্যাপারে আরো তদন্ত চলছে। 

‘ব্যাংক লুটের সাহস কোথায় পেল কেএনএফ’ শিরোনামে গতকাল ইত্তেফাকে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এটা দেখে গতকাল তড়িঘড়ি করে বৈঠক করেন শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা। বৈঠকে তিনি ঘোষণা করেন, বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলায় দুটি ব্যাংকের তিনটি শাখায় ডাকাতি, অস্ত্র লুট ও সোনালী ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণের ঘটনার মধ্য দিয়ে সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সঙ্গে সংলাপ করার সব ধরনের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে তাদের সঙ্গে আর সংলাপ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আলোচনা স্থগিত করা হলো। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, পার্বত্য অঞ্চলে অপরাধ করলে কেউই ছাড় পাবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, কেএনএফকে কঠোর হাতে দমন করা হবে।

এদিকে পার্বত্য এলাকায় গড়ে ওঠা কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টকে (কেএনএফ) সন্ত্রাসী ও জঙ্গি সংগঠন আখ্যা দিয়ে তাদের কঠোর হস্তে দমনের পরামর্শ দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটি। অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিতে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এ পরামর্শ দেয় কমিটি। রবিবার সংসদ ভবনে নিজ কার্যালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির বৈঠকে এসব আলোচনা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন কমিটির আহ্বায়ক (মন্ত্রী পদমর্যাদা) আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। কমিটির সদস্য জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) ও কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিশেষ আমন্ত্রণে বাসন্তী চাকমা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য গৌতম কুমার চাকমা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মশিউর রহমানও বৈঠকে অংশ নেন।

কুকি চিনের সাম্প্রতিক কর্মকান্ডে পুরো পার্বত্যাঞ্চলের চিত্র পরিবর্তন হয়ে গেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, আলোচনার নামে আসল কাজ তারা করে ফেলেছে। সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। ব্যাংক ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সহিংস ঘটনা ঘটাচ্ছে। এই ঘটনার পরে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ-সবাই সক্রিয়ভাবে পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যৌথ অভিযানে নামে। এক পর্যায়ে র্যাবের মধ্যস্থতায় তাদের ঘেরাও করে সোনালী ব্যাংকের বান্দরবানের রুমা শাখার ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনকে উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও জেলা পরিষদের একাধিক কর্মকর্তার সাথে কেএনএফ এর সখ্যতা রয়েছে। এখানে আরো বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারতো। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে আশার সঞ্চয় হয়েছে। এই ঘটনার নেপথ্যে বেরিয়ে এসেছে, জেলা পরিষদের কোন কোন কর্মকর্তা স্বীকৃত রাজাকারের সন্তান। তারাই আলোচনার নামে ভন্ডামি শুরু করেছিল। বাংলাদেশের ভূখণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে তারা। স্বাধীনতার বিরুদ্ধে তাদের পরিবারের যে চরিত্র ছিল, সেটা এখানে বেরিয়ে এসেছে। তবে এখনো অস্ত্র উদ্ধার বাকি আছে। ১০টা পুলিশের ও ৪টা আনছারের অস্ত্র কেএনএফ ছিনিয়ে নিয়েছিল। এগুলো উদ্ধার করা হবে।

পাহাড়ি-বাঙালি নেতারা বলেন, একাধিক দেশের সাথে কেএনএফ এর যোগসূত্র রয়েছে। কেএনএফ এর মাধ্যমে তারা এই অঞ্চলে শক্তিশালী ঘাটি গড়তে চায়। এ কারণে তারা কেএনএফকে অস্ত্রসহ সব কিছু দিয়ে সহযোগিতা করছে। এদিকে পাহাড়ে নিজেদের মধ্যে চাঁদাবাজি ও ভূমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। কিন্তু দেশের বিরুদ্ধে, ভূখণ্ড থেকে তাদের আলাদা করার বিরুদ্ধে পাহাড়ি-বাঙালি সবাই ঐক্যবদ্ধ।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, পার্বত্যাঞ্চল নিরাপদ রাখার জন্য যা যা করার প্রয়োজন তাই করবো। তাদের আর ছাড় দেওয়া হবে না। সীমান্ত সড়ক হয়ে গেলে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল সব জায়গায় থাকবে। তখন ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অপহরণসহ কোন ধরনের অপরাধ কেউ করতে পারবে না। দেশের অন্যান্য জেলার মতো নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে থাকবে পার্বত্য অঞ্চল।

পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নূরে-আলম মিনা বলেন, কেএনএফ যে অস্ত্র ছিনতাই করেছে, তা উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে। এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যৌথবাহিনীর সঙ্গে পুলিশও থাকছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *