কোটচাঁদপুরে তেল-সারের দাম বৃদ্ধিতে হাসি নেই কৃষকের মুখে

Share Now..

কোটচাঁদপুর সংবাদদাতা

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার বহরমপুর গ্রামের বড় চাষি লিটন বিশ্বাস আট বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করে এখন মুখে হাসি নেই হতাশ। রোপা আমন ছাড়াও তিন বিঘা জমিতে আউস ধান রয়েছে। ভরা আষাঢ় ও শ্রাবনে বৃষ্টি না হওয়ায় ক্ষেতে টানা সেচ দিতে হচ্ছে। তারপর বেড়েছে সারের দাম। ঘনঘন লোডশেডিংয়ে অচল হয়ে পড়েছে পানির মটর।

এতে তার লোকসানের পাল্লা ভারি হচ্ছে। একই এলাকার কৃষক শিপন বিশ্বাস বলেন তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে চাষাবাদ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তারা বলছেন তেলের দাম না কমালে চাষে লোকসান হবে। অর্জিত হবে না লক্ষ্যমাত্র। উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য হামিদ বলেন এবছর সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করেছেন।

প্রতিবছর তিনি ৫-৬ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করতেন। কিন্তু এবছর তেল ও সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আবাদ কমিয়ে দিয়েছেন। তার উপর নেই বৃষ্টি। খরায় পুড়ছে গোটা দক্ষিনাঞ্চল। ফলে কৃষকরা ডিজেল চালিত যন্ত্রের উপর নির্ভর হয়ে পড়েছে। আর এতে বাড়ছে খরচ। ফলে কোটচাঁদপুরে কৃষিতে বিপর্যয় ও উৎপাদন ঘাটতির আশংকা দেখা দিয়েছে।

কৃষক বাবলু মিয়া জানান, রোপা আমন বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল। কিন্তু এ বছর বৃষ্টি নেই। ফলে বিঘা প্রতি সেচ বাবদ অতিরিক্ত ১২’শ টাকা গুনতে হবে। সব মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।

গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, ধান নিড়ানো, ধান কাটা, ধান লাগানো ও ধান মাড়াই করা সব কাজেই জোন (কামলা) লাগছে। কিন্তু জোনের দামও বেড়ে গেছে। তারপরও রয়েছে ডিজেল চালিত পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ, ধান বাড়িতে আনা ও ধান মাড়াই।

মুরুটিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য ফারুক জানান, কৃষি নির্ভর এই দেশে সার, ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে এক সময় কৃষকরা চাষ ছেড়ে দিবে। তিনি জানান, কৃষকদের এখন বড় সমস্যা হচ্ছে সেচ ও সার। এই দুটোর দাম যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে মানুষ নিজে খাওয়ার জন্য ছাড়া বিক্রির জন্য ধান চাষ করতে আগ্রহ হারাবে।

পৌর শহরের কৃষক সাবেক কাউন্সিলর শারাফৎ হোসেন জানান, জ্বালানী তেলের মুল্য বৃদ্ধির কারনে আমার মতো উপজেলার কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। অনেক কৃষক ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারনে ঠিকমত সেচ দিতে পারছে না। যে কারনে পৌর এলাকায় রোপা আমন ও সবজি চাষে লোকসানের আশংকা করছেন তারা।

এলাঙ্গী গ্রামের কৃষক লিপলু গাজী জানান, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারনে সেচসহ অনান্য খরচ দ্বিগুন বৃদ্ধি পাওয়ায় ধান চাষে এবার লোকসান গুনতে হবে। অনেক কৃষক তেলের দাম কমানো বা যারা প্রকৃত কৃষক তাদের কৃষি কার্ডের মাধ্যমে কম মুল্যে ডিজেল সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে কোটচাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মহাসিন আলী জানান, উপজেলায় রোপা আমন ৬ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের অক্ষ্যমাত্রা। শুক্রবার (১২ আগষ্ট) পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ৪ হাজার হেক্টর।কিছু জমিতে বিভিন্ন প্রকারের সবজি আবাদ হচ্ছে। মাঠের পাট এখনো পুরোপুরি কাটা হয়নি। পাট কেটে সেই জমিতে ধান লাগাবে। সার ও তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে চাষে খরচ বেড়ে যাবে। গ্রামের কৃষকদের দাবী সার ও তেলের দাম বাড়ার কারনে তাদের এবছর উৎপাদন মুল্য বেড়ে যাবে, সেই সাথে ক্ষতির মধ্যে পড়বে কৃষকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *