কোটচাঁদপুরে হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য তালের ডোঙ্গা বানাতে ব্যস্ত কারিগর

Share Now..

\ কোটচাঁদপুর সংবাদদাতা \
কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী তালের ডোঙ্গা। নতুন জন্মের কাছে অদ্ভুদ নাম। শুনতেই বোঝা যায় তাল গাছ তালের সাথে কোন না কোন সম্পর্ক রয়েছে। তালের ডোঙ্গা অর্থাৎ তাল গাছ থেকে তৈরী ছোট নৌকা নামে এক সময় পরিচিত ছিলো। ডোঙ্গা শব্দের মূল উৎপত্তি হয়েছে ডিঙ্গি থেকে। ডিঙ্গি অর্থ ছোট। তালের ডোঙ্গা মূলত নির্মাণ করা হয় তাল গাছ থেকে। এক সময় ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর অঞ্চলে অধিকাংশ বিল ও হাওর এলাকায় প্রচুর তালের ডোঙ্গা দেখা যেত, কিন্তু কালের স্রোতে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারনে তালের ডোঙ্গা আজ বিলুপ্তির পথে। এক সময় কোটচাঁদপুরের কপোতাক্ষ, চিত্রা, বলুহর, জয়দিয়া, কুশনা বাওড়সহ সবকটি খাল বিলে গ্রামের মানুষের মাছ ধরার প্রধান বাহন ছিল এই তালের ডোঙ্গা। মূলত তালের ডোঙ্গা ব্যবহার করা হতো মাছ ধরা, শাপলা তোলা, শামুক সংগ্রহ অথবা সাঁকোবিহীন কোন বিল পার হওয়ার জন্য। বিশেষ করে ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুরের বিভিন্ন নদী, বাওড়, খাল বিলে এখন আর তালের ডোঙ্গা দেখা যায় না। তবে কোটচাঁদপুর উপজেলার কুশনা ইউনিয়নের বহরমপুর গ্রামে তালের ডোঙ্গা তৈরি করছে মিস্ত্রী আতিয়ার রহমান, তার হাতে থাকা হাতুড়ি, বাটালি আর বাইশের সাহায্যে। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অনেক বছর ধরেই এই ডোঙ্গা তৈরির কাজ করে আসছি। এই গ্রামে শুধু আমিই তালের ডোঙ্গা তৈরী করতে পারি। তিনি আরো বলেন, বর্তমান যুগের সন্তানরা তো এখন তালের ডোঙ্গা কি সেটা চিনে না। তবে প্রবীণরা বলেন এখনো বর্ষা মৌসুমে আমরা তালের ডোঙ্গার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করি। আমি তালের ডোঙ্গা নির্মাতা হওয়ায় এলাকার মানুষ তার কাছে ডোঙ্গা তৈরীর জন্য আসতো। তার কাছ থেকে জানা যায়, তাল গাছের অধিক্যতার কারনে এই এলাকায় ডোঙ্গা নির্মাণ কাজ সহজ ছিলো, ডোঙ্গা তৈরীর কাজ করে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করতো। নানা প্রতিবন্ধকতার কারনে তালের ডোঙ্গা নির্মাতারা হারিয়ে গেছে, সেই সাথে হারিয়ে গেছে তালের ডোঙ্গাও। বর্তমানে দেশের তালের ডোঙ্গা নির্মাণ হয় না বললেই চলে । মিস্ত্রী আতিয়ার রহমান সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, ডোঙ্গা টিকিয়ে রাখতে নদী খনন করতে হবে। তালের ডোঙ্গা পরিবেশ বান্ধব ও সহজ নৌযান। এ ধরনের নৌযান টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারি উদ্যোগ খুবই প্রয়োজন। না হলে নতুন প্রজন্মের সন্তানরা তালের ডোঙ্গা আর চিনবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *