‘খেলোয়াড়রা চাপ একটু বেশি নিচ্ছে’

Share Now..

‘সিরিজের আগেই বলেছিলাম, বাংলাদেশ দলের জন্য সিরিজের প্রথম ম্যাচটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সবাই খুব উত্তেজিত ছিল। পারফরম্যান্স শুরুতে খারাপ হলে তখন সেটা নেতিবাচক দিকে যায়। আর শুরুতে ভালো হলে সব ইতিবাচক হয়। আমাদের ম্যাচ জেতার অভ্যাস আনতে হবে, নাহলে খেলোয়াড় অনুযায়ী পারফরম্যান্স করা যাবে না।’

জিম্বাবুয়ে বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো দল বাংলাদেশ থেকে র‍্যাংকিংয়ে পিছিয়ে। তবুও সেই দলগুলোর সঙ্গে খেলতে গিয়ে নাকানিচুবানি খাচ্ছেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ঘরের মাটিতে কৌশল খাটিয়ে সিরিজ জয় তুলে নিতে পারলেও যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে অন্তঃসারশূন্যতা বের হয়ে এসেছে। এমন বেহাল দশার কারণ জানেন না দলের খেলোয়াড়রা। বিষয়টি নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বিসিবি পরিচালক ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খানের কপালে। তার মতে, একটু বেশি চাপ নেওয়ার কারণে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। 

গতকাল গণমাধ্যমে আকরাম খান বলেন, ‘আমাদের সময়ে আমরা পরিবারের মতো থেকে কাজ করেছি। আমরা প্রত্যেকটা ব্যাপারে প্রাধান্য দিতাম এবং সবাই সহায়তা করত। কিন্তু এখন খারাপ সময় যাচ্ছে। খারাপ যখন খেলবে তখন অনেক নেতিবাচক বিষয় উঠে আসবে। ভালো খেলাটা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাটারদের জন্য সেটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সামনে বড় একটি টুর্নামেন্ট। তার আগে যদি এই ধরনের পারফরম্যান্স হয়, সেটি কোনো দিন দলের জন্য ভালো হবে না।’ 

যুক্তরাষ্ট্র সিরিজ নিয়ে আগেই সাবধান করেছিলেন বিসিবির এই পরিচালক। তিনি বলেন, ‘সিরিজের আগেই বলেছিলাম, বাংলাদেশ দলের জন্য সিরিজের প্রথম ম্যাচটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সবাই খুব উত্তেজিত ছিল। পারফরম্যান্স শুরুতে খারাপ হলে তখন সেটা নেতিবাচক দিকে যায়। আর শুরুতে ভালো হলে সব ইতিবাচক হয়। আমাদের ম্যাচ জেতার অভ্যাস আনতে হবে, নাহলে খেলোয়াড় অনুযায়ী পারফরম্যান্স করা যাবে না।’ 

খেলোয়াড়দের চাপের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটা খেলাতেই চাপ থাকে। সেটা হোক স্কুল পর্যায় কিংবা আন্তর্জাতিক পর্যায়। খেলোয়াড় তো তাকেই বলে, যে চাপে ভালো খেলে। আমরা চাপে ভালো খেলতে পারছি না। এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। আমাদের খেলোয়াড়দের যেই দক্ষতা, তার সঙ্গে পারফরম্যান্সে মিল হচ্ছে না। এখানে যারা যেই দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে। তাদের দায়িত্ব নিয়ে খেলোয়াড়দের থেকে ভালো পারফরম্যান্স বের করা উচিত।’ 

তার মতে, খেলোয়াড়রা নিজেরাই চাপ নিয়ে নিচ্ছে। ‘এটা শুরু থেকেই আছে। গত তিন-চার বছর ধরে না। আমরা যখন শুরু করেছি, তখন থেকেই চাপ ছিল। ১৯৯৪ সালে আমাদের চাপ ছিল, তিনটা দল কোয়ালিফাই করবে, পুরো জাতি তাকিয়ে ছিল। ১৯৯৭ সালে আমরা কোয়ালিফাই করলাম। চাপ থাকবেই। আর কেন জানি মনে হয়, খেলোয়াড়রা চাপ একটু বেশি নিচ্ছে। আর কেউ যখন চাপে পড়বে, সে তখন হতভম্ব হয়ে যাবে। কী করছে সে বুঝবে না, কী করতে হবে সেটাও বুঝতে পারবে না। আমার কাছে মনে হয়, চাপটা কাটিয়ে ওঠা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ভালো খেলোয়াড়রা চাপটাকে সমন্বয় করে ফেলে। যতই ঘরোয়া ক্রিকেটে রান হোক, পারফর্ম হোক চাপের বিপক্ষে ভালো করতে না পারলে দল কোনো দিন ভালো করবে না। সেটা শুধু খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে না, তাদের সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন, তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কোচিং স্টাফ ও দায়িত্বে যারা আছে, তাদের এই বিষয়ে গুরুতরভাবে চিন্তা করা উচিত।’ 

কথা প্রসঙ্গে জিম্বাবুয়ে সিরিজের বিষয়টিও উঠে আসে। পাঁচ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ৪-১ ব্যবধানে জয় পেলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট ছিল অনুপস্থিত। এই বিষয়ে আকরাম খান বলেন, ‘জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যেভাবে আমরা খেলেছি, ব্যাটিং করেছি—আমি বলব না আমাদের সক্ষমতা অনেক বেশি, কিন্তু যেই সক্ষমতা রয়েছে, সে অনুযায়ী আমরা ভালো পারফরম্যান্স করতে পারছি না। আর এটার কারণ একটাই, নিজেরাই চাপ বেশি নিয়ে নিচ্ছে। এখন যেহেতু খারাপ সময় যাচ্ছে, তাতে অনেক নেতিবাচক বিষয় আসবে। এই মুহূর্তে ইতিবাচক বিষয় বের করা উচিত। যারা খেলার বাইরে আছে, তারা নেতিবাচক বিষয় নিয়ে কথা বলবে, হচ্ছে, হবে। সুতরাং এখন ভালো উপায় হচ্ছে ভালো খেলা। আর সেটা দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে।’

টি-টোয়েন্টি কেন ভালো করতে পারছে না লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা, এই প্রশ্নের উত্তর কোনো খেলোয়াড় দিতে পারেননি। প্রতি হারের পরেই দলের পক্ষ থেকে একই কথা বলা হয়েছে, আর ২০-৩০টা রান বেশি হওয়া উচিত ছিল ইত্যাদি। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক বলেন, ‘টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটটা পুরোটাই আলাদা। প্রথম ৬ ওভার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আইপিএলে যেটা দেখছি ৩-৪টা উইকেট গেলেও ওরা ৬ ওভারে ৬০-৭০ রান করে ফেলছে। কিন্তু আমরা সেই ৬ ওভার ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারছি না।’  

দলকে নিয়ে আকরাম খান বলেন, ‘একমাত্র দেশ আমাদের, যারা খেলা ছাড়া খেলার বাইরের কথা বেশি বলি। আমরা যার বিপক্ষেই খেলি—জিম্বাবুয়ে, যুক্তরাষ্ট্র বা অস্ট্রেলিয়া—এখানে একটা ভালো সুযোগ থাকে শেখার এবং পারফর্ম করার। আমরা এটা না করে অন্য কথা বেশি বলি। প্রত্যেকটা বড় ইভেন্টে আমরা অনেক বড় বড় কথা বলি। গত বিশ্বকাপে, তার আগে ১৯ সালে দুবাইতেও। খেলোয়াড় ও অফিশিয়ালরা এত বেশি বাইরের কথার সঙ্গে জড়িত হয় যে, সেটার পুরো চাপটা খেলার পারফরম্যান্সে পড়ে। এগুলো যত দ্রুত সম্ভব বন্ধ করে খেলায় মনোযোগ দেওয়া উচিত।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *