গরমে শিশুর বাড়তি যত্ন 

Share Now..

প্রচণ্ড শীত কিংবা তীব্র গরমে দুই ঋতুতেই শিশুরা থাকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। এই স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা বিবেচনায় রেখেই অনেক অভিভাবক থাকেন দুশ্চিন্তায়। প্রচন্ড গরমে শিশুদের ডায়রিয়া, অতিরিক্ত ঘাম থেকে সর্দি-কাশি এমনকি জ্বর ও খাবারে অরুচি দেখা দেয়। 

পপুলার মেডিক্যাল কলেজের শিশু রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারজানা রহমান চৌধুরী মনে করেন, ‘গরমে শিশুদের পানিশূণ্যতাই অভিভাবকদের বেশি ভোগায়। হাসপাতালে এ সময় শিশুদের ডায়রিয়া, পানিশূণ্যতাজনিত জ্বর, সর্দি-কাশি নিয়ে ভর্তি হতে দেখা যায়। প্রচণ্ড গরমে শিশুদের কিছু ঝুঁকি তৈরি হয়। এসব ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব যদি অভিভাবকরা একটু সচেতন হতে পারেন। মনে রাখতে হবে, প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের পানিশূণ্যতায় ভুগতে হয় বেশি। এর কিছু কারণ রয়েছে।’

শিশুদের দ্রুত পানিশূন্যতার প্রধান কারণ

  • শিশুদের ডায়রিয়া হলে মল ও বমির সঙ্গে ওজন সাপেক্ষে বেশি লবণ ও পানি বেরিয়ে যায়। ফলে তারা দূর্বল হয় দ্রুত। প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে শিশুদের এখানেই তফাত।
  • শিশুদের বিপাক প্রক্রিয়ার হার এমনিতেও প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় বেশি। আর বিপাকে অতিরিক্ত তাপ বের হয় বলে ত্বক থেকে বেশি পানি ঘাম হয়ে বেরোয়। এমনকি জলীয় বাষ্প আকারে বেরিয়ে যায়।
  • বাচ্চাদের পিপাসা পূরণ করার ক্ষেত্রে তারা নিজেরা যতটা নির্ভরশীল তারচেয়ে অভিভাবকের ওপর বেশি নির্ভরশীল। তারা এমনিতেও কোক, ফান্টা বা অন্য কোমল পানীয় বেশি পছন্দ করে। এজন্য জেদও ধরে অনেক। অনেক অভিভাবক না বুঝেই বেশি ঠান্ডা পানি, যেকোনো জ্যুস খাওয়ান। তাতে নানা সমস্যা হতে পারে।
  • আগে বুঝতে হবে বাচ্চাদের পানিশূণ্যতার সমস্যা
  • বাচ্চাদের পানিশূণ্যতা হলে তারা অস্থির হয়ে উঠবে। চঞ্চল হলেও তাদের মধ্যে কোনো কারণে অস্বস্তি বোঝা যাবে। এ সময় তাদের জিহ্বা দেখুন। শুকিয়ে গেলে পানি পান করান।
  • বাচ্চারা যদি কান্না করতে থাকে আর চোখ দিয়ে পানি বের না হয় তাহলে বুঝবেন আপনার শিশু পানিশূণ্যতায় ভুগছে।
  • প্রচন্ড গরমে বাচ্চারা অতিরিক্ত ঘামলে সেটা একটা বাজে লক্ষণ। ওদের আস্তে আস্তে পানি খাওয়ান। একবারে এক গ্লাস পানি খাওয়াবেন না। প্রয়োজনে সারাদিন পানি আছে এমন ফল খাওয়ান।
  • একেবারে না ঘামলেও বুঝতে হবে শিশুর শরীরে ঘাম উৎপাদনের পর্যাপ্ত পানি নেই। এ সময়ও তাদের পানি পান করান। সফট ড্রিংকস একেবারেই নয়।
  • শিশুর প্রস্রাব কমে গেলে সেটিও পানিশূণ্যতার লক্ষণ। এগুলো খেয়ালে রাখুন।
  • শ্বাসের গতি ও নাড়ির গতি বেড়ে যাওয়া, পেশির ব্যথা, খিঁচুনি হতে পারে।
  • অতিরিক্ত গরমে শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গিয়ে শিশু নিস্তেজ হয়ে পড়তে পারে। এ সময় হিট স্ট্রোকের ভয়ংকর ঝুঁকি থাকে।
  • অভিভাবকের সচেতনতা ও করণীয়
  • আপনার শিশু ৬ মাসের কম বয়সী হলে বুকের দুধ খাওয়ান।
  • শিশু ৬ মাসের কম বয়সী হলে বুকের  দুধের পাশাপাশি বাড়তি পানি ও তরল খাবার খাওয়াতে হবে।
  • শিশুর পাতলা পায়খানা হলে স্যালাইন খাওয়াবেন। টেস্টি স্যালাইন নয় বরং ওরস্যালাইন খাওয়ান।
  • শিশুদের গরমে ঢিলেঢালা ও সুতি কাপড়ের পোশাক পরান।
  • বাচ্চাদের গরমে বাইরে বেশিক্ষণ খেলতে দিবেন না। এমন একটি সময়ে তাদের বেরুতে দিন যখন রোদ খাড়াভাবে গায়ে ঝলক দিচ্ছে না।
  • আপনার শিশু যেন পরিমিত পানি পান করতে পারে। ওদের নাগালের কাছেই পানি রাখুন।
  • অনেক শিশু পানিশূণ্যতা বোঝে না। তবে অস্থির হয়। পানি খেতে চায় না। বরং জুস খেতে চায়। ওদের বাড়িতে সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর ফলের শরবত বানিয়ে দিন। তবে কৃত্রিম চিনি দেবেন না।
  • বাচ্চাদের শরীরে প্রচুর ঘাম দেখা দিলে দ্রুত অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে কাপড় ঢিলে করে দিন।
  • বাড়িতে এসি থাকলে কক্ষ তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রিতে রাখুন।
  • শিশু একেবারে না ঘামলে ভেজা টাওয়েল দিয়ে শরীর মুছে দিন। তারপর আবার শুকনো কাপড় গায়ে দিয়ে দিন।
  • দাবদাহজনিত খিঁচুনি, নিস্তেজ বা অচেতন অবস্থা (হিট স্ট্রোক) দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
  • শিশুর চুল গরমে ছোট রাখুন। এ সময় ঘাম হয় বেশি এবং বড় চুল হলে তা শুকাতে দেরি হয়। এসব কারণে সর্দিগম্যি হয় অনেক।
    গরমে যেন শিশুর পর্যাপ্ত ঘুম হয় সেদিকে নজর রাখা জরুরি।
  • নিয়মিত সাবান দিয়ে গোসল করাবেন।
  • গরমে অবশ্যই শিশুকে মাঝেমধ্যে ঘাম মুছে দেবেন। ওদের জামা দেব ভিজে না থাকে সেদিকেও চাই আলাদা নজর।
  • শিশুর খাবার নির্বাচনে বাড়তি মনোযোগ রাখতে হবে। সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর খাবার বাছাই করুন। গরমে এমনিতেও বাচ্চারা খেতে চায় না। তাই এমন খাবার রান্না করুন যা ওরা পছন্দ করে কিন্তু পুষ্টিকর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *