গাজায় ধ্বংসস্তূপের নিচে মিলল ৬০টিরও বেশি মরদেহ

Share Now..

ইসরাইলি অভিযানের পর ফিলিস্তিনের গাজা শহরের শেজাইয়া এলাকায় ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ৬০টিরও বেশি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া আশপাশের ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো অনেক লাশ আটকে আছে বলেও একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এদিকে গাজায় প্রবেশ করার অনুমতি চেয়ে ইসরাইলকে চিঠি দিয়েছে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। অন্যদিকে হামাসের ‘দুর্বল’ হয়ে পড়ার সুযোগ নিতে চাইছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এছাড়া লেবানন-ইসরাইল সীমান্তে এক ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানায়, শহরের এলাকাগুলো থেকে ইসরাইলি সৈন্যরা চলে যাওয়ার পর ফিলিস্তিনি চিকিত্সকরা গাজা শহরের শেজাইয়া পাড়ায় ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ৬০ জনেরও বেশি মানুষের লাশ উদ্ধার করেছেন। মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আশপাশের ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো কয়েক ডজন লাশ আটকে আছে। তিনি বলেন, ইসরাইলি বাহিনী আশপাশের ৮৫ শতাংশেরও বেশি আবাসিক ভবন ধ্বংস করেছে। শেজাইয়া বর্তমানে একটি দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে, যা বসবাসের জন্য অনুপযুক্ত। এর আগে গত বুধবার ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, দুই সপ্তাহ আগে অনুপ্রবেশের পর শেজাইয়া এলাকায় তাদের সামরিক অভিযান তারা শেষ করেছে। বাসাল বলেন, গাজা শহরের পশ্চিমে তেল আল-হাওয়াতে ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার ভাষায়, ইসরাইলের আক্রমণে অনেক পরিবার আটকা পড়েছে এবং উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরাইল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।

এদিকে সংবাদ সংগ্রহের জন্য ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করার অনুমতি চেয়ে ইসরাইল সরকারের উদ্দেশে দেওয়া এক খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছে ৬৪টি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। সিএনএন, বিবিসি, এজেন্সি ফ্রান্স-প্রেস (এএফপি), অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসসহ বিশ্বের প্রায় সব প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমের নির্বাহী প্রতিনিধিরা সেই চিঠিতে স্বাক্ষর করেন। গত বৃহস্পতিবার চিঠিটি প্রকাশ করে সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও অধিকার আদায়বিষয়ক বৈশ্বিক সংস্থা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস। সেখানে বলা হয়েছে, ‘আমরা, এই চিঠিতে স্বাক্ষরকারী বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা, ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ বরাবর এই আহ্বান জানাচ্ছি যে, গাজায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রবেশ রোধ করতে যেসব বিধিনিষেধ জারি রয়েছে, সেগুলো যত শিগিগরই সম্ভব তুলে নিন এবং সংবাদ সংগ্রহের জন্য আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর কর্মীদের প্রবেশ করতে দিন।’ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাস যোদ্ধাদের অভিযানের পর থেকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে ইসরাইলের সরকার।

খোলা চিঠিতে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘যুদ্ধের আজ ৯ মাস চলছে, কিন্তু এখনো গাজায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর সংবাদকর্মীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকায় যুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহে নিয়োজিত স্থানীয় সাংবাদিকদের ওপর অসম্ভব চাপ পড়ছে। এই চাপ পুরোপুরি অযৌক্তিক এবং অগ্রহণযোগ্য।

এদিকে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ইসরাইলি ও মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, গোয়েন্দা তথ্য অনুসারে জানা গেছে যে, হামাসের সামরিক অবস্থান দুর্বল হয়েছে। তাই তারা যুদ্ধবিরতি চাইছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে জিম্মি মুক্তি ও যুদ্ধবিরতির আলোচনায় ইসরাইলের অবস্থান কঠোর করেছেন নেতানিয়াহু। সমঝোতার আলোচনায় জড়িত এক ইসরাইলি কর্মকর্তা মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসকে বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আলোচনার শর্তে নেতানিয়াহু ইসরাইলের অবস্থান কঠোর করেছেন। তিনি চেষ্টা করছেন, আলোচনার মাধ্যমে যতটুকু সম্ভব আদায় করে নিতে। ঐ কর্মকর্তা আরো বলেন, কিন্তু এখানে একটি ঝুঁকি রয়েছে। তিনি হয়তো অনেক বেশি চেয়ে বসতে পারেন এবং আলোচনা ভেস্তে যেতে পারে। নেতানিয়াহু চুক্তি চান। কিন্তু শক্তিশালী অবস্থানে থাকতে চান।

এক সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তা ও বেশ কয়েক জন ইসরাইলি কর্মকর্তা অ্যাক্সিওসকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলি গোয়েন্দা পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, গাজায় সামরিক অভিযান নিয়ে ইসরাইলের ওপর চলমান চাপ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হামাসকে চুক্তি স্বাক্ষরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা গাজায় যুদ্ধবিরতির একটি চুক্তি সম্পাদনের জন্য কাজ করছেন। এর আওতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি ও ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তির প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

এদিকে লেবানন-ইসরাইল সীমান্তের কাছে যুদ্ধে এক ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার ইসরাইলি সেনাবাহিনী এই তথ্য জানিয়ে বলছে, বৃহস্পতিবার সীমান্তে  ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী ও ইসরাইলি সেনাদের মধ্যে যুদ্ধ হয়। এ সময় ঐ সেনার মৃত্যু হয়। নিহত ঐ সেনা ৩৩ বছর বয়সি একজন সার্জেন্ট ছিলেন। তিনি কীভাবে নিহত হয়েছেন, এ বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। তবে ইসরাইলের সংবাদমাধ্যম হারেৎজ বলেছে, ঐ সেনা ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *