গাজায় যত ফিলিস্তিনির মুক্তি প্রায় ততজনই গ্রেপ্তার

Share Now..

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল, হামাসের হাতে আটক ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরাইলের কারাগার থেকে তিন গুণ ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দিতে হবে। সে শর্ত মেনে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দিলেও, যুদ্ধবিরতি চলাকালে অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম থেকে প্রায় একই সংখ্যক মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে ইসরাইলিবাহিনী। এদিকে জেরুজালেমে বাস স্টেশনে গোলাগুলিতে পাঁচজন নিহত হয়েছে।

প্যালেস্টেনিয়ান প্রিজনার্স সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি চলাকালে প্রথম চারদিনে হামাস ৬৯ জিম্মিকে মুক্তি দেয়। তাদের মধ্যে ইসরাইলি ৫১ জন ও অন্য দেশের নাগরিক ১৮ জন। অন্যদিকে, একই সময়ের মধ্যে ইসরাইল থেকে মুক্তি পেয়েছে ১৫০ জন ফিলিস্তিনি। তাদের মধ্যে ১১৭ শিশু ও ৩৩ নারী। কিন্তু একই সময়ের মধ্যে ১৩৩ জন ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে ইসরাইলি বাহিনী।

প্যালেস্টেনিয়ান প্রিজনার্স সোসাইটির মুখপাত্র আমানি সারাহনেহ বলেন, যতদিন পর্যন্ত ইসরাইলি দখলদারত্ব বহাল থাকবে, ততদিন ফিলিস্তিনি গ্রেপ্তার বন্ধ হবে না। এই গ্রেপ্তারের ঘটনা যে ৭ অক্টোবরের পর থেকেই শুরু হয়েছে এমন নয়, তারা প্রতিদিনই এমন অভিযান চালায়। এমনকি যুদ্ধবিরতির প্রথম চার দিনে কয়েদি মুক্তির চেয়ে বেশিসংখ্যক ফিলিস্তিনি গ্রেপ্তার হলেও আমি অবাক হতাম না।

গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এতে ১ হাজার ২০০ ইসরাইলি নিহত হয় ও জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয় ২৪০ জনকে। এরপর ঐ দিনই গাজায় হামলা শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে ইসরাইলি বাহিনী টানা ৫১ দিন ধরে ‘বর্বর’ হামলা চালানোর পর কাতারের মধ্যস্থতায় গত শুক্রবার থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এর আগে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় ১৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়, যাদের বেশির ভাগই শিশু ও নারী। ৭ অক্টোবরের আগে ইসরাইলি কারাগারে ছিল ৫ হাজার ২০০ ফিলিস্তিনি। হামলার পরবর্তী দুই সপ্তাহে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ধরপাকড় বাড়ায় ইসরাইলিবাহিনী। এতে মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ইসরাইলের কারাগারে ফিলিস্তিনি কয়েদি প্রায় দ্বিগুণ হয় ও সংখ্যায় তা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ফিলিস্তিনি কয়েদিদের আইনজীবী ও পর্যবেক্ষণকারী বিভিন্ন সংস্থা বলেছে, ৭ অক্টোবরের পর পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম থেকে ৩ হাজার ২৯০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিকে, ফিলিস্তিনিরা বলছেন, ইসরাইল আমাদের বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার পর আবার গ্রেপ্তার করে। এমনকি, মুক্তি দেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে আবার গ্রেপ্তার করার নজিরও রয়েছে। ২০১১ সালে ইসরাইল-হামাসের বন্দিবিনিময়ের ইতিহাস তা-ই বলে। তাই তারা এখনও শঙ্কা থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না।

এদিকে ইসরাইল ও হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতি সপ্তম দিন পর্যন্ত বাড়াতে সম্মত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এক হামলার ঘটনা ঘটেছে।

জেরুজালেমের এক প্রান্তে একটি বাস স্টেশনে দুই বন্দুকধারীর গুলিতে তিনজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয় বলে ইসরাইলের পুলিশ জানিয়েছে। ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী ও এক বেসামরিকের পাল্টা গুলিতে বন্দুকধারীরাও নিহত হয়।

পুলিশ বলেছে, বৃহস্পতিবার সকালের এই গোলাগুলির ঘটনায় ১৬ জন আহত হয়েছে। ইসরাইলের অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা জানিয়েছে, জরুরি পরিষেবার কর্মীরা আহতদের মধ্যে বেশি জখম হওয়া আটজনকে নিকটবর্তী হাসপাতালগুলোতে নিয়ে গেছে। পশ্চিম জেরুজালেমের পুলিশ বলেছে, বন্দুকধারীরা একটি গাড়িযোগে ঘটনাস্থলে আসে। তাদের কাছে এম১৬ রাইফেল ও পিস্তল ছিল। তারা বাস স্টেশনের এসেই বেসামরিকদের একটি জটলা লক্ষ্য করে গুলি করে। হামলাকারীরা পূর্ব জেরুজালেমের বাসিন্দা এবং গুলিবর্ষণের পর পরই নিরাপত্তাবাহিনী ও নিকটবর্তী এক বাসিন্দা তাদের প্রতিরোধ করে। নিহত বন্দুকধারীদের গাড়িতে অস্ত্র ও গুলি পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। ঘটনাস্থলে থাকা নিরাপত্তা ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ হামলার মুহূর্তগুলো ধরা পড়েছে। ইসরাইলের চ্যানেল টুয়েলভ ভিডিও ফুটেজগুলো দেখিয়েছে। তাতে একটি সাদা গাড়িকে জনাকীর্ণ বাস স্টেশনে এসে থামতে দেখা যায়। গাড়ি থেকে দুই ব্যক্তি বের হয়ে এসে ভিড়ের দিকে দৌঁড়ে গিয়ে গুলি চালানো শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই দুই বন্দুকধারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

ইসরাইলের মেগান ডেভিড অ্যাডোম জরুরি পরিষেবা জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে একজন ২৪ বছর বয়সি এক নারী। ৭৩ বছর বয়সি আরেক পুরুষকে সংকটজনক অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত তৃতীয় আরেকজনও হাসপাতালে মারা যান।

বুধবার মধ্যরাতে ইসরাইল ও হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতি সপ্তম দিন পর্যন্ত বাড়াতে সম্মত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জেরুজালেমে হামলার এ ঘটনা ঘটে।  ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন জিভির বলেন, ‌‘জেরুজালেমের দুই গুলিবর্ষণকারী পূর্ব জেরুজালেমের বাসিন্দা ও তারা হামাসের সদস্য।’

ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘এর স্পষ্টতই হামাসের কর্মী। যারা এখানে দুই সুরে কথা বলে, এক সুর তথাকথিত যুদ্ধবিরতির ও দ্বিতীয়টি সন্ত্রাসের সুর। এই হামলা ইসরাইলের বেসামরিকদের মধ্যে ‘অস্ত্র বিতরণের গুরুত্ব’ তুলে ধরেছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *