গায়ের রংই যাদের অহংকার
অলিম্পিক গেমসে নতুন বার্তা দিয়েছেন বিশ্ববিখ্যাত নারী জিমন্যাস্ট যুক্তরাষ্ট্রের সিমন বাইলস। এই জিমন্যাস্টের উচ্চতা ৪ ফুট ৯ ইঞ্চি। পাখির মতো শূন্যে ভাসতে পারেন। তার মতো করে ফ্লোর এক্সারসাইজ ইভেন্টে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স আর কেউ দেখাতে পারেন না। ২৭ বছর বয়সী এত কম উচ্চতার একটি মেয়ে জিমন্যাস্টিকসের দুনিয়া কাঁপিয়ে দিয়েছেন। তার গায়ের রং কালো। এবার প্যারিস অলিম্পিকে ফ্লোর এক্সারসাইজ ইভেন্টে স্বর্ণ জিততে পারেননি। অন্যান্য ইভেন্টে ৩টি স্বর্ণ জিতলেও তার প্রিয় ইভেন্টে স্বর্ণ না পেলেও সিমন বাইল একটা কথা বলেই আবার আলোচনায় এসেছেন।
গায়ের রং নিয়ে এবার পুরো দুনিয়াকে জানিয়েছেন কালো রং তাদের কাছে অহংকারের এবং গর্বের। ফ্লোর এক্সার সাইজ ইভেন্টে স্বর্ণ জিতেছেন ব্রাজিলের রেবেকা আন্দ্রাদে। রৌপ্য জয় করেছেন বাইলস এবং তারই স্বদেশী জর্ডান চাইলস ব্রোঞ্জ পেয়েছেন। এই তিন জিমন্যাস্ট যখন পোডিয়াম থেকে পদক গ্রহণের সেরিমোনিজ শেষ করেছেন তখন তাদের মধ্যে বাইলস এবং জর্ডান চাইলস দুজন মিলে রেবেকা আন্দ্রেদেকে মাথা নিচু করে সম্মান জানিয়েছেন। বাইলস-জর্ডান চাইলস-রেবেকা আন্দ্রাদে, অলিম্পিক গেমস ইতিহাসে এক সঙ্গে তিন জন কালো রঙের নারী পদকের জন্য পোডিয়ামে উঠেছে। অলিম্পিক গেমস বলছে, এটাই প্রথম কোনো ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্রের বাইলস এবং জর্ডান চাইলস আগেও পদক পেয়েছেন আর ব্রাজিলিয়ান তারকা রেবেকা আন্দ্রাদে প্রথম বার অলিম্পিক স্বর্ণ পদক পেলেন। তাকে যখন বাইলস এবং জর্ডান সম্মান দিল সেটা অলিম্পিকর গেমস সেটা প্রশংসা করেছে। এক সঙ্গে তিন জন কালো রঙের নারী ক্রীড়াবিদ পোডিয়ামে উঠে ইতিহাস করেছেন বলে অলিম্পিক গেমসও প্রশংসা করেছে। বাইলস-জর্ডান যেটা বলেছেন, ‘আমরা একটা বিষয়কে দেখালাম। এখন এটা ছোট ছেলেমেয়েদের মনে অঙ্কুরিত হবে। ওরাও চাইলে এটি করতে পারে। ছোট ছোট ছেলেমেদের মনে বিশ্বাস আনতে হবে। আমারও পারি। এ ধরনের মানসিকতা অনেকেই বুঝতে পারেন না।’
বাইলস এবং জর্ডান দুজনেই ব্রাজিলের রবেকা আন্দ্রাদের কাছে হেরেছেন। হেরে গিয়ে তাদের মন খারাপ হতে পারে। যার কাছে যুক্তরাষ্ট্রের দুই জিমন্যাস্ট হেরে স্বর্ণ পদক হারিয়েছেন তার কাছে মাথা নিচু করে সম্মান জানানোর মানসিকতা থাকা কঠিন। তা-ও আবার কি না গায়ের রং নিয়ে। পৃথিবীটা কালো রং উপেক্ষিত হয়। বর্ণবৈষম্য সারা দুনিয়ায় নীরবে শত্রুতা চলছে। আর অলিম্পিক গেমসে ৩ নারী ক্রীড়াবিদ কালো গায়ের রং নিয়ে গর্ব করলেন। অলিম্পিক গেমসে এটা চালু করলেন গায়ের রং কালো হলেও মর্যাদার। বাইলস পরিষ্কার করেই বলেছেন, ‘আমরা অলিম্পিক গেমসে যে মেসেজটা দিয়ে গেলাম তা শুধু দেখানোর জন্য নয়, অলিম্পিক গেমস থেকে এই বার্তাটা ছড়িয়ে পড়ুক সারা দুনিয়ায়। এতে সুস্থ মানসিকতা তৈরি হবে।’
অন্যদিকে বাইলস এবং জর্ডান চাইলসের এমন সম্মান প্রদর্শন দেখে ক্ষেপে গিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান ফুটবল খেলোয়াড় মারলন হামফ্রে ক্ষেপে আগুন হয়ে গেছেন। এই ক্রীড়াবিদ বাইলস-জর্ডান- রেকার সম্পর্কটাকে শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু তারা যেভাবে মাথা নিচু করে সম্মান দিয়েছে সেটাকে জঘন্য আখ্যা দিয়েছেন। এটা নাকি তাতে হাসির খোরাক জুগিয়েছে। মারলন কথা বলবেন বাইলসদের সঙ্গে। কেন তারা এটি করলেন সেটি নিয়ে কথা বলতে চান বের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন। গায়ের রং সাদা না হলে কত কিছু মেখে সাদা হওয়ার চেষ্টা করেন দুনিয়ার মানুষ।
কেউ আবার বিয়ের আগে রং ফর্সাকারি ক্রিম ব্যবহার করেন। কমবেশি প্রত্যেক দুনিয়ায় রং ফর্সাকারী ক্রিমের চাহিদা রয়েছে। তবে অলিম্পিক গেমসে তিন জিমন্যাস্ট বাইলস-জর্ডান চাইলস-রেবেকা আন্দ্রাদে যা করে দেখিয়েছে তা সত্যি সত্যি অনুরকণীয়। বর্ণবৈষম্য কমাতেই হয়ত তারা এমনটি করেছেন, যেন অলিম্পিক গেমসের মঞ্চ হতে পৃথিবী থেকেই বর্ণবৈষম্য দূর হতে শুরু করে।