গড়াই নদীর ভাঙ্গন রোধে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণ করছে স্থানীয়রা

Share Now..


শাহীন আক্তার পলাশ:
এখানে মিলে গেছে কবি গুরুর সেই গানের পংক্তি, ‘‘যদি তোর ডাক
শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে’’। গড়াই নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে
বদলে যাচ্ছে ঝিনাইদহের শৈলকুপার গড়াই নদী পাড়ের দৃশ্যপট। গ্রামের পর
গ্রামের বেশীর ভাগ অংশ বিলীন হয়ে গেছে নদীতে । নদী পাড়ের
বাসিন্দারা বাঁধ নির্মাণে কোন জন প্রতিনিধি, মেম্বার,
চেয়ারম্যান, এমপি সহ দায়িত্বশীল ও স্থানীয় প্রশাসনের কাউকেই পাচ্ছে
না। এমন অবস্থায় ভাঙ্গনকবলিত অসহায় মানুষগুলো নিজেরাই মাটি
কেটে বস্তায় ভরে কোলে-পিঠে, ঘাড়ে বাঁধিয়ে ফেলছে ভাঙ্গনপাড়ে ।
এরই মাঝে ১হাজার বস্তা বালি-মাটি তারা ফেলেছে। ঘুম-খাওয়া-দাওয়া,
স্বজন-পরিজন, সাংসারিক কাজ ফেলে ভোর হলেই সবাই ঝুড়ি-কোদাল
আর বস্তা নিয়ে নেমে পড়ছে মাঠে। ভ’মিহীন, অসহায় আর সর্বস্ব
হারানো শ্রমজীবি মানুষগুলোর এমন উদ্যোগ এক অভাবনীয় মেলবন্ধনে
আবদ্ধ করেছে সবাই কে। কিন্তু তারা জানে না যেখানে কোটি কোটি
টাকার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ অত্যাবশ্যক সেখানে এমন বালি-মাটির
বস্তা ফেলে কতদিন ঠেকাতে পারবে তাদের বাড়িঘর ! বড়–রিয়া গ্রামের
আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, নিজেরা মাটি কেটে বস্তা ভরে ভাঙ্গনের মুখে
ফেলে বাড়ি-ঘর রক্ষার চেষ্টা করছি। কেউ তো আমাদের পাশে নেই !
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঝিনাইদহের শৈলকূপায় গড়াই নদীর
অবিরাম ভাঙ্গনে বদলে যাচ্ছে সারুটিয়া,হাকিমপুর ও ধলহরাচন্দ্র
ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম। গ্রামগুলির মসজিদ-মন্দির,
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ফসলীজমি, বাড়ি-ঘর কিছুই আর বাকী থাকছে না।
নদীগর্ভে সবকিছু হারিয়ে অনেকেই এখন নিঃস্ব। সেইসাথে হুমকির
মধ্যে পড়েছে প্রায় ২০ কিলোমিটারের মত বেঁড়িবাধ।

অব্যহত ভাঙ্গনে চরম ঝুঁকিতে আছে সারুটিয়া ইউনিয়নের বড়ুরিয়া
থেকে কৃষ্ণনগর, হাকিমপুর ইউনিয়নের মাদলা , খুলুমবাড়িয়া,
ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের কাশিনাথপুর, মাজদিয়া,উলুবাড়িয়া, নতুনভুক্ত
মালিথিয়া ও লাঙ্গলবাঁধ বাজার।
দীঘৃদিন যাবৎ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সংস্কার না হওয়ায় ফাটল ধরে তা
নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ২যুগ ধরে একে একে গড়াই নদী ভাঙ্গনের
কবলে পড়ে বদলে গেছে উপজেলার তিন ইউনিয়নের মানচিত্রের বড় একটি
অংশ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বড়ুরিয়া- কৃষ্ণনগর,
খুলুমবাড়ি,মাদলা, কাশিনাথপুর ও লাঙ্গলবাঁধ। ভিটেবাড়ি, জমিজমা
সহায়-সম্বল হারিয়ে কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন পাউবোর প্রধান
সেচ খালের ধারে আবার বড়ুরিয়া- কৃষ্ণনগর এলাকার নদীগর্ভে জমা-জমি
ও ঘরবাড়ি হারানো অনেক পরিবার নদীর ওপারে কুষ্টিয়া জেলায় জেগে ওঠা
চরে জীবনযাপনের জন্য ভূমিহীন হিসাবে আশ্রয় নিয়েছেন।
এ বছর বর্ষার পানি বাড়াতে আবার দেখা দিয়েছে গড়াই নদী ভাঙনের
ভয়াল রূপ। নদীগর্ভে ভিটে-মাটি চাষাবাদের জমি ও সহায়-সম্বল হারানো
গৃহহীনরা সত্বর বেড়িবাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে নদী ভাঙন রূখতে
সরকারের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন।
কৃষ্ণনগরের শামসুল আলম বলেন, গড়াই নদীর তীব্র ভাঙনে আমাদের বাড়ি
সহ অনেক বাড়ি ফসলি জমি যে কোন সময় নদীতে বিলিন হতে পারে।
খুবই আতংকের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। সহায় সম্বল হারানো বড়–লিয়া
গ্রামের আঃ করিম বলেন, নদীগর্ভে সবকিছু হারিয়ে পাউবোর একটি
মৃতপ্রায় খালের ধারে আশ্রয় নিয়েছি। তিনি জানান, অনেক পরিবারই
এভাবে খালের ধারে আশ্রয় নিয়েছে।
বড়ুরিয়া থেকে লাঙ্গলবাঁধ বাজার পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার
বেড়িবাধ দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় এর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে নদীতে
মিশে গেছে, যা অতি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন
ভূক্তভোগীরা ।

গড়াই নদীর ভাঙ্গন কবলিত সারুটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল
হাসান মামুন জানান, বড় ধরনের বরাদ্ধ হলে স্থায়ী বাঁধই একমাত্র
সমাধান। তাছাড়া নদীর ভাঙ্গন ঠেকানো যাবে না। প্রতিবছর অস্থায়ী
কিছু কার্যক্রম চললেও তা সমাধানের পথ না।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদাহ পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম
জানান,আমরা ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ইতিমধ্যে কিছু
কাজও শুরু করেছি পর্যায়ক্রমে যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
গ্রহন করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *