ঘরে বসেই ঈদের অগ্রিম রেল টিকিট পেয়েছেন যাত্রীরা

Share Now..


ভোগান্তি দূর করতে প্রথমবারের মতো এবারের ঈদযাত্রায় রেলের শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি করা হচ্ছে। গত ৭ এপ্রিল থেকে গতকাল ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়েছে। এসময়ে যাত্রীরা ঘরে বসে স্বস্তিতে টিকিট কাটতে পেরেছেন। একইসঙ্গে টিকিট কালোবাজারিও নিয়ন্ত্রণে এসেছে। জীবনের প্রয়োজনে ঢাকায় বাস করা অনেক মানুষের ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরার ক্ষেত্রে ভরসা রেলপথ। প্রতিবছর তাই ঈদের অগ্রিম টিকিট কাটতে রেলস্টেশনে রাত থেকে শুরু করে দিনভর লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় থাকতে দেখা যেতো। কিন্তু এবার শতভাগ টিকিট অনলাইন ফ্ল্যাটফর্মে আসায় যাত্রীদের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার দীর্ঘ অপেক্ষার ভোগান্তি হয়নি। এবার ঈদের টিকিট বিক্রির শুরু থেকেই টিকিট কাটতে প্রতিদিন বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট ভিজিট করেছেন কয়েক লাখ মানুষ। টিকিট বিক্রির গত ৫ দিনে ঘণ্টায় সার্ভারে সর্বোচ্চ ৩ কোটি ৫৬ লাখ হিট এসেছে বলে জানা গেছে।রকি মোড়ল নামে একজন যাত্রী জানান, গত মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) সকালে অনলাইনে যশোরের তিনটি টিকিট কিনতে পেরেছেন তিনি। খুবই আনন্দ লাগছে। ঘরে বসে ভোগান্তি ছাড়া টিকিট কাটতে পেরেছি। তিনি বলেন, প্রতিবছর ঈদের অগ্রিম টিকিট কাটতে গিয়ে কমলাপুরে কয়েক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। অনেক সময় দীর্ঘ লাইনে থাকার পরও মিলতো না টিকিট। সেই ভোগান্তি এবার আর নেই। এভাবে টিকিট কেনার সুযোগ পাওয়ায় তিনি সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর জানান, এবারের ঈদের শতভাগ টিকিট অনলাইনে থাকায় যাত্রীরা স্বস্তিতে টিকিট কাটতে পেরেছেন। এবার টিকিট কাটতে ভোগান্তির তেমন কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। একইসঙ্গে টিকিট কালোবাজারিও বন্ধ করা গেছে। তিনি বলেন, ঈদযাত্রা সহজ করতে শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়। কমলাপুরে গিয়ে টিকিটের জন্য যাত্রীদের যেন ঘুরতে না হয়, বরং ঘরে বসেই তারা যেন টিকিট পান সেজন্য সরকারের এই সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়া। তিনি দাবি করেন, এবার যাত্রীরা ঈদের অগ্রিম টিকিট স্বাচ্ছন্দে ও নির্বিঘ্নে কাটতে পেরেছেন। সার্ভার কোন জটিলতা ছিল না। তিনি বলেন, সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করা। এর জন্য ট্রেন স্টেশনে নিরাপত্তা ও টিকিট চেকিং ব্যবস্থা জোরদার করা হবে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, কিছু টিকিট এখনও অবিক্রিত রয়ে গেছে। এর মূল কারণ এগুলো স্বল্প দূরত্বের টিকিট। সচিব বলেন, সাধারনত স্বল্প দূরত্বের যাত্রীরা অগ্রিম টিকিট কাটেন না। যেকারণে এই টিকিটগুলো আরও পরে বিক্রি হবে।

রেলের অনলাইন টিকিটিংয়ের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান ‘সহজ’ এর তথ্যমতে, টিকিট বিক্রির গত ৫দিনে সকাল ৮টা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের সাইটে টিকিট কাটতে প্রতি মিনিটে ভিজিট করেছেন প্রায় ৮ লাখ টিকিট প্রার্থী। ফলে সার্ভারে সারাদিনের সর্বোচ্চ হিট এসেছে এই সময়ে প্রায় ৩ কোটি ৫৬ লাখ। রেল সচিব হুমায়ুন কবীর বলেন, প্রথমবারের মতো অনলাইনে শতভাগ টিকিট পৌঁছে দিতে সফলভাবে কাজ করছে অনলাইন টিকিটিং প্রতিষ্ঠান ‘সহজ’। বিপুল চাহিদার বিপরীতে ২৭ হাজার টিকিট বিক্রি করা কঠিন কাজ-তবে আমরা সবাই মিলে সেটি ভালোভাবেই করতে পেরেছি। অনলাইন রেলসেবা সাধারণ মানুষ ভালোভাবে গ্রহণ করেছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, প্রথমবার চালু করা এই সেবায় যদি কোনো ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে তা পরবর্তী

ঈদের আগেই সংশোধন করা হবে।

সহজ লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট জুবায়ের হোসাইন জানান, গত কয়েকদিনে টিকিট কাটার সময়ে সার্ভারে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ হিট ছিল ৩ কোটি ৫৬ লাখ। এই সময়ে অতিরিক্ত চাপের কারণে সার্ভার কিছুটা ধীরগতি থাকলেও সার্ভার শতভাগ সচল ছিল এবং মানুষ নিরবিচ্ছন্নভাবে টিকিট কাটতে পেরেছেন। তিনি বলেন, রেলের ২০ লাখ নিবন্ধিত গ্রাহকের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রতিদিন ২৭ হাজার টিকিট বরাদ্দ ছিল। চাহিদার তুলনায় টিকিট কম। এই অবস্থায় যাত্রীদের হাতে সফলভাবে টিকিট পৌঁছে দিতে পেরে তারা আনন্দিত বলে তিনি জানান।

জুবায়ের হোসাইন আরও বলেন, ‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ এই পদ্ধতিতে জাতীয় পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে টিকিট বিক্রি করায় কালোবাজারি বন্ধ করা গেছে। যার সুফল এবারের ঈদে যাত্রীরা পেয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।

কমলাপুর রেলস্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার জানান, অ্যাপসে প্রতি মিনিটে কমপক্ষে ১০ লাখ ভিজিটর প্রবেশ করতে পারেন। এছাড়া প্রতি মিনিটে টিকিট বিক্রি করা যায় ৮ হাজার। কিন্তু কখনও কখনও টিকিট প্রত্যাশীদের চাপ অনেক বেশি ছিল। যেকারণে সার্ভারে কিছুটা ধীরগতি

তৈরি হয়, তবে যাত্রীরা নিরবিচ্ছন্নভাবে টিকিট কাটতে পেরেছেন।

গত ৭ এপ্রিল থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। ওইদিন ১৭ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি হয়, ৮ এপ্রিল ১৮ এপ্রিলের, ৯ এপ্রিল ১৯ এপ্রিলের, ১০ এপ্রিল ২০ এপ্রিলের এবং ১১ এপ্রিল বিক্রি হয় ২১ এপ্রিলের ঈদ যাত্রার টিকিট। ঈদের ফেরত যাত্রার টিকিট বিক্রি করা হবে ১৫ এপ্রিল থেকে। ১৫ এপ্রিল বিক্রি হবে ২৫ এপ্রিলের, ১৬ এপ্রিল ২৬ এপ্রিলের, ১৭ এপ্রিল ২৭ এপ্রিলের, ১৮ এপ্রিল ২৮ এপ্রিলের, ১৯ এপ্রিল ২৯ এপ্রিলের এবং ২০ এপ্রিলের বিক্রি হবে ৩০ এপ্রিলের ফেরত যাত্রার টিকিট। একটি এনআইডি নিবন্ধন দিয়ে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কেনা যাচ্ছে। সূত্র: বাসস

One thought on “ঘরে বসেই ঈদের অগ্রিম রেল টিকিট পেয়েছেন যাত্রীরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *