ঘোলা নদীতেই লাখো মানুষের ভিড় 

Share Now..

প্যারিস অলিম্পিক গেমস শেষ হওয়ার পরপরই ঐতিহাসিক রিভার সেইন নদীর বুকে লাখো মানুষের ভিড়। ৩৩তম অলিম্পিক গেমসের সমাপ্তি হয়েছে গত রোববার। যারা অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখতে সেইন নদীর কাছে যেতে পারেননি তারা অলিম্পিক গেমস শেষ হওয়ার পরই ছুটে গেছেন নদীর তীরে। ইতিহাসে প্রথম বার অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়েছে স্টেডিয়ামের বাইরে নদীর বুকে। ছয় কিলোমিটার নদীর বুকে তিন ঘণ্টার অনুষ্ঠান দেখেছেন প্রায় ৬ লাখ দর্শক। 

কিন্তু অনেকেই সেখানে ঢোকার অনুমতি সংগ্রহ করতে পারেনি। যারা পারেননি তারা গেমস শেষ হওয়ার পর জড়ো হয়েছেন নদীর কাছে। অলিম্পিক গেমসের সময় আইফেল টাওয়ারে যাওয়ার দিক-নির্দেশনা দেখানো ছোট ছোট বিলবোর্ডগুলো এখনো চকচক করছে। সেখানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়-বাস কিংবা মেট্রো থেকে মানুষের ঢল ছুটছে নদীর পাড়ে। জমজমাট এলাকা। একদিকে আইফেল টাওয়ার, অন্যদিকে গেমস শেষ হওয়ার পর নতুন করে নদী দেখার আনন্দ। যেখানেই চোখ, সেখানেই মানুষের ঢল।  ছোট-বড় কোলের শিশু, সবার উপস্থিতি ছিল, অলিম্পিক গেমসের কাউন্ট-ডাউন করা ঘড়িটি বন্ধ হয়েছে গেমস শুরু হওয়ার পরই। চালু রয়েছে এই শহরে ২৮ আগস্ট শুরু হতে যাওয়া প্যারা অলিম্পিক গেমসের কাউন্ট-ডাউন। সেইন নদী ঘিরে ছোট ছোট জাহাজগুলোর ব্যবসা আগের চেয়ে জমে উঠেছে। একটু পর পরই ঘাট। ঘাটে ভিড়ে নোঙর কর যাত্রী তোলার অপেক্ষায়। ৪০০ থেকে ৫০০ যাত্রী নিয়ে ঘুরতে পারে এমন জাহাজগুলো নদী ভ্রমণকারীদের নিয়ে ব্যবসা করছে। ছয় কিলোমিটার নদীর ভেতরেই এক ঘণ্টার রিভারক্রুজ, যাত্রী প্রতি বাংলাদেশের টাকায় বড়দের জন্য প্রায় আড়াই হাজার, চার বছরের বেশি হলে প্রায় ১ হাজার ২০০ টাকা ভাড়া। বিভিন্ন জাহাজে টিকিটের পৃথক। 

একাধিক জাহাজের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা যায় প্যারিস অলিম্পিক গেমসের জন্য সেইন নদীর সবগুলো ভ্রমণ জাহাজ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মহড়া দিয়েছে। অ্যাথলেটরা দেশের পতাকা হাতে জাহাজে ছিলেন। গেমস শেষে ব্যবসার ধুম পড়েছে। নদী ভ্রমণ করতে আসা যাত্রীরা তার পছন্দের জাহাজে উঠতে গিয়ে শিশু বাচ্চা কোলে নিয়ে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন। প্রত্যেক যাত্রীকে কঠোর নিরাপত্তা ধাপ পার হয়ে জাহাজে উঠতে হয়েছে। অনেকেই ঝামেলা এড়াতে অনলাইনে টিকিট নিশ্চিত করেছেন। জাহাজে উঠেই কেউ চেয়ারে-টেবিলে বসতে রাজি না। ছাদে দাঁড়িয়ে খোলা আকাশে ফুরফুরে বাতাসে সবকিছু চোখের নাগালে উপভোগ করা যায়। এসব জাহাজে খাবার বিক্রির ব্যবসাও ছিল লক্ষণীয়। জনপ্রতি ন্যূনতম ৯৫ ইউরো খরচা করতে হয়েছে। একটি সিটও খালি ছিল না। ফুল হাউজ বলছিলেন তারা। চাইলেই টিকিট পাওয়া যাচ্ছিল না। যাত্রী তার সেলফোন খুলে দেখাচ্ছেন রাতের ডিনারের জন্য টেবিল বুকিং দিয়ে এসেছেন। যারা নদী ভ্রমণে যাবেন না, তারা নদীর পাড়ে বসেছিলেন। পরিবার নিয়ে জলখাবার নিয়ে এসে চাদর বিছিয়ে নদীর বুক দিয়ে বয়ে চলা ভ্রমণকারীদের দেখেছেন। নিজেরা ছবি তুলেছেন। খাবার দোকানগুলোতে ভিড়। ছোট একটা কোনো আইসক্রিম ৩ ইউরো ৫০ সেন্ট, ৪০০ টাকার ওপরে। 

বিখ্যাত আইফেল টাওয়ার এবং টাওয়ারের অলিম্পিক রিং ঘিরে দর্শনার্থীরা ছবি তুলেছেন। বিভিন্ন দেশের ট্যুরিস্ট এসেছেন, এত লোকের সমাগমে ফরাসি পুলিশকে বেশ তৎপর দেখা যায়। টহলরত ফরাসি পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে গেলে পুলিশ জানায় তারা অলিম্পিক গেমসের ডিউটি করছেন না। এখানে যারা নদীর পাশে রয়েছেন তাদের নিরাপত্তার জন্যই পুলিশ। অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই। কার কী হারিয়ে গেল, সেটি দেখার বিষয় আমাদের না। অলিম্পিক গেমস ঘিরে সেইন নদীতে ১০০ বছর পর সাঁতার কাটলেন সাঁতারুরা। কয়েক বছর লাগিয়ে নদী পরিষ্কার করা হয়েছিল। সেই নদীতে গিয়ে দেখা যায় ময়লা ভাসছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *