চলনবিল সিটি সেন্টারে কর্মসংস্থান হবে ২০ হাজার মানুষের

Share Now..

একটা সময় বছরজুড়ে আয়ের মাধ্যম ছিল ধান চাষ। তারও আগে এখানে মাছ শিকার ছিলো আয়ের প্রধান উৎস্য। তবে এক দশকে এই জনপদের চিত্র বদলেছে উল্লেখযোগ্য হারে। আধুনিক সভ্যতায় স্মার্ট বাংলাদেশের উৎকর্ষ হয়ে উঠা জনপদটির নাম চলনবিল।

মূল্যহীন সেই চলনবিল এখন স্বপ্ন দেখাচ্ছে। এই জনপদে নির্মাণ হচ্ছে ‘চলনবিল ডিজিটাল সিটি সেন্টার’। ডিজিটাল সিটি সেন্টারটি বহুমাত্রিক কর্মের দ্বার খুলেছে। কারিগরিভিত্তিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার সুযোগসহ আত্ম-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার মতো আধুনিক সব সুবিধা রয়েছে এখানে। 

নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের কোলঘেঁষে সিংড়ার শেরকোল এলাকায় ১৫ একর ভূমির ওপর বহুমাত্রিক আধুনিক সুবিধা সম্বলিত এই সিটি সেন্টারটি নির্মীত হচ্ছে। ইতিমধ্যে সিটি সেন্টারের তিনটি প্রতিষ্ঠান উন্মুক্ত করা হয়েছে।

চলনবিল ডিজিটাল সিটি সেন্টারে যেসব সুবিধা থাকছে

‘চলনবিল ডিজিটাল সিটি সেন্টার’ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই সিটি সেন্টারে হাইটেক পার্ক, ইনকিউবিশন সেন্টার, টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের মতো ডিজিটাল প্রতিষ্ঠান থাকছে। থাকছে কত শত স্মার্ট সুবিধা। এসব সুবিধার আবর্তে চলনবিলের নিভৃত জনপদের পিছিয়ে পড়া অন্তত বিশ হাজার মানুষ এখানে আত্মনিয়োগ করতে পারবেন। 

জানা গেছে, ‘চলনবিল ডিজিটাল সিটি সেন্টারের আওতাধীন চারটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইতিমধ্যে শেখ কামাল ইনকিবিউশন সেন্টার, প্রবাসীদের টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ উদ্বোধন করেছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহম্মেদ পলক। এ ছাড়া হাইটেক পার্কের কাজ আগামী বছর নাগাদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এই ডিজিটাল সিটিতে যেসব আধুনিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয়েছে, তার সবই ব্যবহার হবে কর্মমুখী প্রশিক্ষণের জন্য। মূলত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ফিল্যান্সারদের জন্য আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবিশন সেন্টার রয়েছে। চলনবিলাঞ্চলে মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরির পাশাপাশি উন্নত প্রশিক্ষণ নেওয়া ফিল্যান্সারদের জন্য কর্মসংস্থান হবে। ফিল্যান্সার তৈরির সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে বৈদেশিক মুদ্রার আয়। 

চলনবিল ডিজিটাল সিটি সেন্টারের সুবিধা পাবেন যারা

ভৌগলিক বিবেচনায় চলনবিলের সিংড়া, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, তাড়াশ, নন্দীগ্রামের মানুষ সরাসরি এই ডিজিটাল সিটি সেন্টারের বহুমাত্রিক সুবিধার আওতায় আসবেন। আর্থ-সমাজিক উন্নয়নের সঙ্গে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখতে চলনবিলাঞ্চলের মানুষদের আধুনিক যুগোপযোগী কর্মমুখী করে গড়ে তোলাই হবে এটির মূল কাজ। আগামী বছর থেকে এখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে প্রতি বছর ৫ হাজার করে ফিল্যান্সারের কর্মসংস্থান হবে। এভাবে ২০৩০ সালের মধ্যে এই সিটি সেন্টারে ২০ হাজার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে শুধু ফিল্যান্সিংয়েই।

সিংড়ার ফিল্যান্সার মুস্তাকিম জনি ইত্তেফাককে জানালেন, যুব সমাজ এখন অনলাইন ভিত্তিক আয়ের দিকে ঝুঁকছে। তিনি নিজেও বছর পাঁচেক ধরে ফিল্যান্সিং করছেন। এই খাতে উন্নয়নের জন্য এর আগে দেশের আইটি বিভাগ থেকে তেমন কোনো সুবিধা পাননি তারা। কিন্তু এখন স্বপ্ন দেখছেন তার মতো ফিল্যান্সাররা। তিনি বলেন, ডিজিটাল সিটি সেন্টারে ফিল্যান্সারদের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকায় আগামী কয়েক বছরেই এই খাতে অভিতপূর্ব উন্নয়ন হবে। বৈদেশিক মুদ্রায় সমৃদ্ধ হবে অবহেলিত চলনবিল।

চলনবিলে ডিজিটাল সিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠায় প্রতিমন্ত্রী পলক

শষ্য ও মৎস্য ভাণ্ডার স্বীকৃত ছিল চলনবিল। সে সব পেছনের কথা। এখন বিলের থৈ থৈ পানির উত্তাল তরঙ্গ ছুঁয়েছে স্মার্ট প্রযুক্তি। পাঁচ বছর আগের চলনবিল এখন স্মার্ট বাংলাদেশের উৎকর্ষ। কীভাবে সম্ভব হলো চলনবিলকে আধুনিক করে গড়ে তোলার। 

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ইত্তেফাককে জানালেন, বিল বেষ্টিত এই জনপদের মানবশক্তিকে কাজে লাগানোর প্রয়াস থেকেই চলনবিলের প্রাণকেন্দ্রে ডিজিটাল সিটি সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনা করেন তিনি। সিটি সেন্টারের কাজ শেষ হলে চলনবিল হবে একখণ্ড সিঙ্গাপুর। বেকারদের কর্মসংস্থানের পাশাপশি এই সিটি সেন্টার ভূমিকা রাখবে গবেষণামূলক বহুমাত্রিক কাজে।

চলনবিল ডিজিটাল সিটি সেন্টার নির্মাণে ব্যয়

১৫ একর জমিতে চলনবিল ডিজিটাল সিটি সেন্টার নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। এর আওতায় একটি হাইটেক পার্ক নির্মাণ করছে আইসিটি মন্ত্রণালয়। ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৩ কোটি টাকা। এটির কাজ শেষ হবে আগামী বছর। একইসঙ্গে ১৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবিশন সেন্টার, ৩৪ কোটি টাকায় সিংড়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মাণ শেষ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ সাইদুল ইসলাম সাঈদ ইত্তেফাককে বলেন, টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে চলনবিলের পিছিয়ে পড়া কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ পাবেন। এতে করে এখানকার কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা হবে সময়োপযোগী।

হাইটেক পার্কের প্রকৌশলী বাসেদ রহমান ইত্তেফাককে বলেন, চলনবিল ডিজিটাল সিটি সেন্টারের চারটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এখন শুধু হাইটেক পার্কের কাজ সম্পন্ন হতে বাকি। খুব শিগগিরই এটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে।

সিংড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুন ইত্তেফাককে বলেন, চলনবিল ডিজিটাল সিটি সেন্টারের কাজ শেষ হলে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনেক দূর এগিয়ে যাবে চলনবিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *