চুয়াডাঙ্গায় শীত ও কুয়াশায় ধানের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত; বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কায় চাষীরা

Share Now..

\ চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি \
চুয়াডাঙ্গার তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় বোরো ধানের বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এতে বোরো ধানের আবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা। বোরো বীজতলা বিবর্ণ রূপ নিয়েছে। শীত ও কুয়াশা থেকে বীজতলা রক্ষা করতে চাষিদের নানা পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। ঘন কুয়াশা ও শীতের তীব্রতায় এসব বীজতলার অধিকাংশই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সবুজ বীজতলা এখন ফ্যাকাশে, হলদেটে, লালচে ও পচে নষ্ট হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন চাষীরা।
চুয়াডাঙ্গার ৪ টি উপজেলায় বোরো আবাদ করতে মোট ১৮ হাজার ২৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের বীজতলা (চারা রোপন) করা হয়েছে। উপজেলা ওয়ারী সদর উপজেলায় ৩৫০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৬৭৬ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৪৭৭ হেক্টর, জীবননগর উপজেলায় ৩২৪ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের বীজতলা (চারা রোপন) করা হয়েছে।
এই বীজতলা থেকে ৩৪ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে চুয়াডাঙ্গা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর। কিন্তু বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষি অফিসের এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জেলার কোথাও কোথাও ধানের বীজ অঙ্কুরিত হওয়ার আগেই কুয়াশা ও শীতে পচে গেছে। অতিরিক্ত কুয়াশার কারণে পলিথিনের ব্যবহার ও সেচ দিয়েও রক্ষা করা যাচ্ছে না বীজতলা। এখন বেশি দামে অন্য এলাকা থেকে ধানের চারা কিনে ধান রোপণ করা ছাড়া কোনো উপায় দেখছেন না চাষিরা। এ কারণে বোরো আবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন প্রান্তিক কৃষকেরা। হাঁড় কাপানো ঠান্ডা বিরাজ করছে চুয়াডাঙ্গার প্রকৃতিতে। কনকনে ঠান্ডায় কাঁদা-পানির ক্ষেতে নেমে সকালে বোরো ধান রোপন করছে চাষীরা। চাষীরা বলছেন, বোরো ধান রোপনের সময় চলে গেলে মুশকিল হয়ে যাবে। ধানের পাতু (চারা) বয়স হয়ে যাচ্ছে। সুতারাং ঠান্ডা শীত উপেক্ষা করে ধান লাগাতে হচ্ছে। জেলার দামুড়হুদা উপজেলা সদরের দশমী গ্রামের বোরো চাষী নুর আলম বলেন, অতিরিক্ত কুয়াশা ও শীতের কারণে তাদের বেশির ভাগ বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আর সময় নেই পুনরায় বীজতলা করে আবাদ করা। তাই অন্য এলাকা থেকে বেশি দামে ধানের চারা কিনে আবাদ করা ছাড়া কোনো পথ দেখছেন না তিনি। তিনি আরো বলেন, তীব্র শীত ও কুয়াশায় শুধু আমারই নয় এ এলাকাই বীজতলা ক্ষতির মুখে পড়েছে। চুয়াডাঙ্গা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুভাস চন্দ্র সাহা জানান, ঘন কুয়াশার কারণে কৃষকদের বোরো ধানের বীজতলা ও আলুখেত রক্ষায় বিশেষভাবে সতর্ক করেছে জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর। ধানের বীজতলা রক্ষায় সকালে চারার ওপর থেকে শিশির সরিয়ে দেওয়া, সম্ভব হলে বীজতলা পলেথিন দিয়ে দিনে ও রাতে ঢেকে দেওয়া, বীজতলায় সেচ দিয়ে পরদিন সকালে পানি বের করে দেওয়া, ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা এবং বীজতলা লাল হলে জিপসাম ও ইউরিয়া সার দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান, এখেনো পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা বীজতলার তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। তবে এই আবহাওয়া আরো কয়েকদিন অতিবাহিত হলে বীজতলার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে, বীজতলা বাঁচাতে অনেকে পলিথিন ও খড় দিয়ে ঢেকে রাখছেন। কেউ কেউ ব্যবহার করছেন ছত্রাকনাশক। তবুও প্রতিকার হচ্ছে না বলে জানান কৃষকরা। চুয়াডাঙ্গা সর্বনি¤œ তাপমাত্রার সাথে চলতে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। উত্তরাঞ্চলের হিমেল বাতাসে হাড়কাঁপানো শীতে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসছে।
কুয়াশার কারণে ৫০০ থেকে ৬শ মিটার দৃষ্টিসিমা বলে জানিয়েছে চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান। তিনি আরো জানান, চুয়াডাঙ্গায় গত মঙ্গলবার (০৯ জানুয়ারী) তাপমাত্রা ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বুধবার (১০ জানুয়ারী) ছিল ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারী) ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলাসয়াস, শুক্রবার (১২ জানুয়ারী) ছিল ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, শনিবার (১৩ জানুয়ারী) ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস, রবিবার (১৪ জানুয়ারী) ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বইছে মৃদু শৈত্য প্রবাহ। যা কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *