চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাচন সম্পন্নঃ নঈম হাসান জোয়ার্দার ও কে এম মঞ্জিলুর জয়ী

Share Now..

\ হিজলগাড়ী প্রতিনিধি \
কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া অনেকটাই শান্তিপূর্ণ ও নিরুত্তাপ পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলে এ দুটি উপজেলার ভোট গ্রহন। ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন ভোটাররা। টানা ৮ ঘণ্টা ভোট গ্রহন কার্যক্রম চলার পর বিকেল ৪টার পর থেকে শুরু হয় ভোট গণনা। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার এবং আলমডাঙ্গা উপজেলায় মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী কে এম মঞ্জিলুর রহমান বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। মঙ্গলবার (২১ মে) রাতে এ ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার ও চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজমুল হামিদ রেজা। সদর উপজেলায় নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার ৫০ হাজার ৮১১ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আজিজুল হক মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে ৩৬ হাজার ১৭২ ভোট পেয়েছেন। আসাদুল হক বিশ্বাস আনারস প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন ১১ হাজার ৪১৯। ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান (গরীব রুহানী মাসুম) টিউবওয়েল প্রতীক নিয়ে ৫১ হাজার ৭৪০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হাফিজুর রহমান চশমা প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন ২৭ হাজার ৫৪৯। এছাড়াও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মামুন-অর-রশীদ তালা প্রতীক নিয়ে ২ হাজার ৭১৩ ভোট, মিরাজুল ইসলাম কাবা উড়োজাহাজ প্রতীক নিয়ে ৬ হাজার ২৮৫ ভোট ও শামীম হোসেন মাইক প্রতীক নিয়ে ৮ হাজার ২৯৫ ভোট পেয়েছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫৩ হাজার ৪৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী মাসুমা খাতুন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোছা. সাহাজাদী মিলি কলস প্রতীক নিয়ে ৩১ হাজার ৮৭ ভোট ভোট পেয়েছেন। এছাড়াও, নুরুন্নাহার কাকলী হাঁস প্রতীক নিয়ে ১২ হাজার ৩৩৮ ভোট পেয়েছেন। অপরদিকে, আলমডাঙ্গা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৪০ হাজার ২৮০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বচিত হয়েছেন মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী কে এম মঞ্জিলুর রহমান। নিকটতম প্রতিদ্ব›িদ্ব প্রার্থী জিল্লুর রহমান ঘোড়া প্রতীক নিয়ে ২৬ হাজার ২৮৭ ভোট পেয়েছেন। এছাড়াও, আইয়ুব হোসেন দোয়াত-কলম প্রতীক নিয়ে ৬ হাজার ৩০৬ ভোট, মোমিন চৌধুরী ডাবু আনারস প্রতীক নিয়ে ২ হাজার ১০৭ ভোট ও নুরুল ইসলাম কাপ-পিরিচ প্রতীক নিয়ে ৩ হাজার ১৪ ভোট পেয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৭ হাজার ৩৩৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মাইক প্রতীকের প্রার্থী মাসুম বিল্লাহ। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী আহমেদ হাবিব খান তালা প্রতীক নিয়ে ১৫ হাজার ৮৬০ ভোট পেয়েছেন। এছাড়াও, মামুনার রহমান বই প্রতীক নিয়ে ৮ হাজার ৭০৪ ভোট, আজিজুল হক উড়োজাহাজ প্রতীক নিয়ে ৬ হাজার ১০৯ ভোট, মকলেছুর রহমান টিউবওয়েল প্রতীক নিয়ে ১০ হাজার ৭৮৪ ভোট, সোহেল রানা শাহীন পালকি প্রতীক নিয়ে ২ হাজার ৭৭৩ ভোট, আজিজুল হক টিয়া পাখি প্রতীক নিয়ে ১ হাজার ৭৭৬ ভোট ও মিজানুর রহমান চশমা প্রতীক নিয়ে ১১ হাজার ৬৫৩ ভোট পেয়েছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৭ হাজার ৭৬৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন কলস প্রতীকের প্রার্থী মনিরা খাতুন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মারজাহান নিতু হাঁস প্রতীক নিয়ে ২৪ হাজার ৭৩০ ভোট পেয়েছেন। এছাড়াও, মোছা. কাজল রেখা ফুটবল প্রতীক নিয়ে ২১ হাজার ৯০৩ ভোট পেয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬৩ হাজার ৮৪৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩১ হাজার ৪৩৭ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৩২ হাজার ৪০৮ জন। উপজেলার মোট ৯৯টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হয়। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছেন ৩ জন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন। এখানে মোট ভোটারের মধ্যে মোট প্রদত্ত ভোটের শতকরা হার ৩৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অপরদিকে, আলমডাঙ্গা উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯৫ হাজার ২০২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪৮ হাজার ৬০৫ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৪৬ হাজার ৫৯৫ জন। উপজেলার মোট ১১৮টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হয়। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছেন ৫ জন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন। এ উপজেলায় মোট ভোট প্রদত্ত হয়েছে ২৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এদিকে, ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সকাল থেকেই বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা ও পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমানসহ (পিপিএম-সেবা) বিভিন্ন পর্যায়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সেইসাথে ভোটের মাঠে দায়িত্ব পালন করেন বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি এবং আনসার সদস্যরা। সেইসাথে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতে মাঠে ছিলেন ১৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান (পিপিএম-সেবা) বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। যেকোন মূল্যে আমরা সমন্বিতভাবে ভোটের পরিবেশ বজায় রাখতে চাই। এজন্য যেকোন অভিযোগ কিংবা তথ্য গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমরা কুইক রেসপন্স করছি। বেশ কয়েকজনকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।’ আর জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘আমরা বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখেছি। কোথাও তেমন বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অভিযোগ পাওয়া মাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের সহায়তায় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। তবে প্রথম ধাপের তুলনায় দ্বিতীয় ধাপে ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভোটকেন্দ্রে ছিল ভোটারের লাইন চোখে পড়ার মতো। এর মধ্যে নারী ভোটারের উপস্থিতিই বেশি ছিলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *